হটস্পট চিহ্নিত করে আসছে এলাকাভিত্তিক লকডাউন

মরণঘাতী করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে দীর্ঘ দুই মাসের বেশি সময় ধরে চলেছে সাধারণ ছুটি। কিন্তু গত ৩০ মার্চের পর আর সাধারণ ছুটি বাড়ানো হয়নি। সেইসঙ্গে অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে একমাত্র শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছাড়া সব প্রতিষ্ঠান সীমিত পরিসরে খুলে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তারপরও প্রতিদিনই বাড়ছে সংক্রমণ। এ অবস্থায় করোনার হটস্পট চিহ্নিত করে এলাকা বা ক্লাস্টারভিত্তিক লকডাউনের কথা ভাবা হচ্ছে। এ বিষয়ে ইতোমধ্যে যাবতীয় পরিকল্পনা করা হয়েছে। আগামীকাল রোববার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুমোদনের জন্য তা উপস্থাপন করা হবে। তিনি অনুমোদন দিলেই তা কার্যকর করা হবে।

আসছে এলাকা বা ক্লাস্টারভিত্তিক লকডাউন, পুরনো ছবি

এ প্রসঙ্গে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে বিষয়টি নিয়ে বেশ কিছু দিন ধরা কাজ করা হয়েছে। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের পরামর্শ নিয়ে এ সংক্রান্ত একটি পরিকল্পনাও তৈরি করা হয়েছে। পরিকল্পনাটি আগামীকাল রোববার প্রধানমন্ত্রীর কাছে উপস্থাপন করা হবে। তিনিই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবেন। পরবর্তীতে তার নির্দেশনা মোতাবেক আমরা কাজ করবো।

প্রতিমন্ত্রী জানান, কীভাবে কোন এলাকা লকডাউন করা হবে, তার প্রক্রিয়াই বা কী হবে- তা নিয়ে বেশ কিছু সুপারিশ তৈরি করা হয়েছে। পাশাপাশি চলছে ম্যাপিং। প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন ও নির্দেশনা পাওয়া গেলেই সেগুলো বাস্তবায়ন করা হবে।

বাংলাদেশে করোনার নমুনা সংগ্রহ

তিনি বলেন, এলাকাভিত্তিক চলাচলের ব্যাপারে যদি আমরা কৌশল নিতে পারি, তাহলে সেই এলাকায় চলাচল কম হবে এবং সংক্রমণও কমে যাবে।

উদাহরণ দিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ঢাকার কথাই যদি ধরি- সব এলাকায় তো এক রকম সংক্রমণ নেই। তাই সব এলাকায় তো একই ব্যবস্থা নেওয়া যাবে না। কারণ কোথাও সংক্রমণ কম, কোথাও বেশি। সুতরাং সংক্রমণ অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে।

এ বিষয়ে জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা ও জনস্বাস্থ্যবিদ মুশতাক হোসেন বলছেন, আইইডিসিআরের কাছে সারাদেশের পজিটিভ রোগীর সংখ্যা ও তথ্য আছে। সেই তথ্য থেকে সংক্রমণের হার বিবেচনায় বিভিন্ন এলাকা চিহ্নিত করে ম্যাপিং করা হচ্ছে।

তিনি বলছেন, এভাবে বিভিন্ন এলাকাকে লাল, হলুদ ও সবুজ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে। আর এভাবে রোগীদের যদি এলাকাভিত্তিক চিহ্নিত করে পৃথক করা যায়, তাহলে সংক্রমণ ছড়ানো যেমন বন্ধ হবে, তেমনি রোগীর সংখ্যাও নিয়ন্ত্রণ করা যাবে।

উদাহরণ দিয়ে এ গবেষক বলেন, যখন ঢাকার টোলারবাগ ও বাসাবোয় সংক্রমণ পাওয়া গেল, তখন কিন্তু এলাকাভিত্তিক লকডাউন ঘোষণা করা হয়। মাদারীপুরের শিবচরেও কয়েকটি বাড়ি বা মহল্লাভিত্তিক লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছিল। সেভাবেই এখন ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

প্রসঙ্গত, সরকার এমন সময় এ ধরনের পরিকল্পনার কথা জানালো যখন গত কয়েক দিন যাবত প্রতিদিন দুই হাজারের বেশি করোনা রোগী শনাক্ত হচ্ছে এবং জন্স হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাব অনুযায়ী বাংলাদেশ সংক্রমিত দেশের তালিকায় ২০ নম্বরে চলে এসেছে।

মুশতাক হোসেন বলছেন, লকডাউনের এই পরিকল্পনার বাস্তবায়ন নিশ্চিত করবে সরকার, স্থানীয় কর্তৃপক্ষ এবং স্বেচ্ছাসেবকরা। প্রথম পর্যায়ে অল্প কিছু এলাকায় এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হবে। সেখানে সফলতা বা সুবিধা-অসুবিধা দেখে পর্যায়ক্রমে দেশের অন্যান্য স্থানেও তা কার্যকরের পরিকল্পনা রয়েছে।