আকাশপথের দুর্ধর্ষ এক যোদ্ধার নাম সাইফুল আজম সুজা। তিনিই পৃথিবীর ইতিহাসে একমাত্র যোদ্ধা, যিনি ৩টি দেশের বিমানবাহিনীর হয়ে যুদ্ধ করেছেন। এছাড়া তিনিই একমাত্র ব্যক্তি, একক প্রচেষ্টায় সর্বোচ্চ সংখ্যক ইসরায়েলি বিমান ধ্বংস করার রেকর্ড যার দখলে। তবে নিজের ব্যাপারে কোনো প্রচরণা পছন্দ করতেন না। পাবনা-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা নিভৃতচারী এই মানুষটি গতকাল রোববার ৮০ বছর বয়সে না ফেরার দেশে চলে গেছেন।

suja one

১৯৬৭ সালে যখন তৃতীয় আরব-ইসরায়েল যুদ্ধ হয়, সাইফুল আজম তখন পাকিস্তান বিমান বাহিনীতে কর্মরত। পাকিস্তান থেকে তাকে ইরাকের বিমানবাহিনীতে যুক্ত করা হয় ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য। ইসরায়েলের মুহুর্মূহু আক্রমণে ওই যুদ্ধে আরবরা কয়েকদিনের মাথায় মুখ থুবড়ে পড়ে। কিন্তু সাইফুল আজম ছিলেন অসীম সাহসী, পশ্চিম ইরাকে অবস্থান নিয়ে তখনও যুদ্ধ করে যাচ্ছেন।

ইরাক থেকে এক পর্যায়ে জর্ডানে যান সাইফুল আজম, উদ্দেশ্য দেশটির বিমানবাহিনীকে সাহায্য করা। কারণ মিশরের অনেকগুলো যুদ্ধবিমান ধ্বংস করে দিয়ে ইসরায়েল তখন জর্ডানের বিমানবন্দর গুড়িয়ে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিল। দিনটি ১৯৬৭ সালের ৬ জুন। ইসরায়েলি চারটি সুপারসনিক ‘ডাসল্ট সুপার মিস্টেরে’ জঙ্গি বিমান ধেয়ে আসে জর্ডানের মাফরাক বিমান ঘাঁটির দিকে। এসব বিমান ঠেকানোর সাধ্য আরবদের ছিল না।

suja two

অসীম সাহসিকতায় একটি ‘হকার হান্টার’ জঙ্গি বিমান নিয়ে আকাশে উড়াল দিলেন সাইফুল আজম। ক্ষিপ্রগতিতে আঘাত হানলেন ইসরায়েলের দুটি সুপারসনিক বিমানে। সঙ্গে সঙ্গে একটি ভূপাতিত হল, অন্যটি প্রায় অকেজো হয়ে কোনোরকমে গিয়ে আছড়ে পড়ল ইসরায়েলের সীমানায়। সাইফুল এবার লাগলেন অন্য দুটির পেছনে, সেগুলো ইসরায়েলের আকাশ সীমানায় ঢুকে পড়লে তিনি ফেরত আসেন।

আবার চলে আসেন ইরাকে। কারণ দেশটির এইচ-থ্রি ও আল ওয়ালিদ ঘাঁটি রক্ষার করার দায়িত্বভার পড়ে তার ওপর। ইরাকে এসে ইসরায়েলের আরেকটি যুদ্ধ বিমান ধ্বংস করেন তিনি। আহত অবস্থায় গ্রেপ্তার করা হয় বিমানের পাইলটকে। পরবর্তীতে ওই পাইলটের বিনিময়ে জর্ডান এবং ইরাকের হাজারেরও বেশি সৈন্যকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয় ইসরায়েল। মোদ্দাকথা, ইসরায়েলের যমদূত হিসেবে চিহ্নিত হন তিনি।

পাক-ভারত যুদ্ধ হয় ১৯৬৫ সালে। সেখানেও তিনি বীরত্বের সঙ্গে অংশ নেন। ধ্বংস করেন ভারতীয় ‘ফোল্যান্ড নেট’ জঙ্গি বিমান। ১৯৭১ সালের বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধেও অংশ নেন তিনি। পৃথিবীর ইতিহাসে তিনিই একমাত্র বৈমানিক যিনি চারটি দেশের বিমানবাহিনীর হয়ে যুদ্ধে অংশ নিয়েছেন- পাকিস্তান, জর্ডান, ইরাক ও মাতৃভূমি বাংলাদেশ।

তার বীরত্বে মুগ্ধ হয়ে জর্ডান সরকার তাকে ‘হুসাম-ই-ইস্তিকলাল’ সম্মাননায় ভূষিত করে। ইরাক সরকার ভূষিত করে ‘নাত আল-সুজাহ’ সামরিক সম্মাননায়। পাকিস্তান সরকার থেকে পান দেশটির তৃতীয় সর্বোচ্চ সামরিক সম্মাননা ‘সিতারা-ই-জুরাত’। ২০০১ সালে সাইফুল আজমকে বিশ্বের ২২ জন ‘লিভিং ইগলস’-এর একজন হিসেবে স্বীকৃতি দেয় ইউনাইটেড স্টেটস এয়ার ফোর্স।

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর

Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.

Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.