আমূল বদলে যাচ্ছে ঢাকার যে অংশ

এক সময় সেখানে ছিল বস্তি, সরু রাস্তা, ঘিঞ্জি বসতি। ছিল নানা অপরাধের রাজ্য। চার পাশে ছিল ব্যাপক দুর্গন্ধময় পরিবেশ। মানুষ চেষ্টা করতো ওই এলাকা এড়িয়ে চলার। কিন্তু সময়ের ব্যবধানে পাল্টে গেছে সেই সব দৃশ্য। সেই সরু রাস্তা এখন অনেক প্রশস্ত হয়েছে। রাস্তার দুই ধারে শোভা পাচ্ছে বিভিন্ন ফুল-ফল ও বাহারি গাছ। আছে রোড সাইড পার্কিংয়ের ব্যবস্থাও। মিডিয়ান দিয়ে প্রশস্ত এই রাস্তাকে বিভাজন করা হয়েছে। দেখলেই মনে হবে, উন্নত বিশ্বের কোনো আধুনিক নগরী এটি। এড়িয়ে চলা সেই এলাকাই এখন মানুষের আকর্ষণের জায়গায় পরিণত হতে পারে। সব কাজ শেষের পথে, এখন শুধু দেওয়া হবে তুলি আঁচড় (শেষ পর্যায়ের কাজ)।

রাস্তাগুলোর কাজ শেষ হলে আমূল বদলে যাবে ঢাকার আগারগাঁওয়ের চিত্র

চলতি জুন মাসেই যাবতীয় কর্মকাণ্ড শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু মহামারি করোনা এসে সেই যাত্রাকে কিছুটা স্থিমিত করে দিয়েছে। তবে আশা করা হচ্ছে, আসছে সেপ্টেম্বরের মধ্যে এই কর্মযজ্ঞ শেষ হতে পারে। তার পরই নগরবাসী চাইলে সেখানে গিয়ে প্রশস্ত ফুটপাতে একটু গা-ছেড়ে হাঁটতে কিংবা সময় কাটাতে পারবেন।

বলছি রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের আগারগাঁও এলাকার কথা। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) উদ্যোগে নির্মিত কয়েকটি অত্যাধুনিক রাস্তা ওই এলাকার চেহারা পুরো বদলে ফেলেছে। সেখানে ২৫ ফুটের রাস্তা এখন করা হয়েছে ৬০ ফুট। আর ৫০ ফুটের রাস্তা করা হয়েছে ১০০ ফুট। আবার বিশ্বের আধুনিক নগরীর মতো ১৫০ ফুটের রাস্তাও নির্মিত হচ্ছে এই এলাকাতেই। যা ঢাকা মহানগরীতে প্রথম।

রাস্তাগুলোর কাজ শেষ হলে আমূল বদলে যাবে ঢাকার আগারগাঁওয়ের চিত্র

সরেজমিন দেখা যায়, প্রশস্ত এসব রাস্তায় রয়েছে প্রশস্ত ফুটপাত, রোডসাইড গাড়ি পার্কিংয়ের পাশাপাশি রয়েছে সাইকেল লেনের ব্যবস্থাও। ফুটপাতে আছে দেশি-বিদেশি নানা বাহারি জাতের গাছ। এ ছাড়া সুদৃশ্য মিডিয়ান- সবমিলিয়ে এক দৃষ্টিনন্দন ও আধুনিক নগরীর চিত্র।

ডিএনসিসির অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী ও এই প্রকল্পের পরিচালক এ কে এম শরীফ উদ্দিন বলেন, চলতি মাসেই পুরো কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু করোনা মহামারির কারণে শেষ দিকে কাজের গতি কিছুটা কমে গেছে। তবে আসছে সেপ্টেম্বরের মধ্যেই পুরো কাজ শেষ হবে বলে আশা করছি।

প্রকল্পের কাজ শেষ হলে আগারগাঁও এলাকাকে উন্নত বিশ্বের আধুনিক নগরীর সঙ্গে তুলনা করা যাবে উল্লেখ করে এই প্রকৌশলী বলেন, এখানকার মতো এত প্রশস্ত রাস্তা ঢাকা মহানগরীর অন্য কোথাও নেই। ডিএনসিসি আগারগাঁও ক্রসিং থেকে শ্যামলীর শিশুমেলা পর্যন্ত মাহবুব মোর্শেদ সরণিকেও ১৫০ ফুট প্রশস্ত করার পরিকল্পনা নিয়েছে। চলমান কাজ শেষ হলে ওই রাস্তার আধুনিকায়নের কাজ শুরু হবে। আর ওই কাজ শেষ হলে এই এলাকার চেহারা আমূল পাল্টে যাবে।

দেখা যায়, আগারগাঁও ক্রসিং থেকে শ্যামলীর দিকে কিছুটা অগ্রসর হলেই হাতের ডান দিকে একটি বিশাল প্রশস্ত রাস্তা উত্তরে চলে গেছে। শেরেবাংলা নগর কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জামাল উদ্দিনের নির্দেশনায় মিডিয়ানে রয়েছে কৃষ্ণচূড়া, বকুল, চীনা টগরসহ নানা দৃষ্টিনন্দন গাছ। প্রশস্ত ফুটপাতে রোপণ করা হয়েছে কাঠবাদাম, বোতল পামসহ বিভিন্ন বাহারি গাছ। মিডিয়ানের দুই পাশে সড়ক এবং রয়েছে দৃষ্টিনন্দন রোডসাইড পার্কিংয়ের ব্যবস্থাও।

জানা গেছে, এভাবে উল্লিখিত এলাকার ১৩ কিলোমিটার রাস্তা আধুনিকায়ন করা হচ্ছে। একটি রাস্তা মাহবুব মোর্শেদ সরণি থেকে উত্তরে নির্বাচন কমিশন অফিসের সামনে দিয়ে চলে গেছে তালতলা পর্যন্ত। আরেকটি রাস্তা আইডিবি ভবন থেকে চলে গেছে নির্বাচন কমিশন অফিস পর্যন্ত। এ ছাড়া মাহবুব মোর্শেদ সরণি-তালতলা রোডের মধ্যবর্তী স্থান ইসলামিক ফাউন্ডেশনের পাশ দিয়ে কামাল সরণিতে (যা ৬০ ফুট হিসেবে পরিচিত) মিশেছে আরেকটি রাস্তা।

এ ছাড়া ৬০ ফুট থেকে আরেকটি রাস্তা নিউরো সায়েন্স হাসপাতালের সামনে দিয়ে যুক্ত হয়েছে মাহবুব মোর্শেদ সরণিতে এবং কামাল সরণি থেকে অন্য একটি রাস্তা মহিলা পলিটেকনিকের সামনে দিয়ে রোকেয়া সরণিতে গিয়ে ঠেকেছে। বর্তমানে চলছে শেষ মুহূর্তের উন্নয়ন কাজ। প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন হলে ওই এলাকার পুরো চিত্রই পাল্টে যাবে বলে মনে করা হচ্ছে।

ডিএনসিসি সূত্রে জানা গেছে, দুটি উন্নয়ন প্রকল্পের অধীনে ৬৯৪ কোটি টাকা ব্যয়ে এসব উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। সংসদ ভবনের সামনের রাস্তার উন্নয়ন কাজও এই প্রকল্পের আওতায় রয়েছে।