লিবিয়ার পর কি ইয়েমেনে প্রভাব জানান দেবে তুরস্ক
- Details
- by আন্তর্জাতিক ডেস্ক
লিবিয়ায় ক্ষমতা দখল নিয়ে খলিফা হাফতার ও আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত গভার্নমেন্ট ন্যাশনাল অ্যাকোর্ডের (জিএনএ) বিরোধিতা চলছে কয়েক বছর ধরে। হাফতারকে সমর্থন দিয়ে আসছে সংযুক্ত আরব আমিরাত, মিশর, ফ্রান্স ও রাশিয়া। আর জিএনএ-কে সমর্থন দিচ্ছে তুরস্ক। সম্প্রতি হাফতারের দখলে থাকা গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল ও শহর নিজেদের আয়ত্তে নিয়ে এসেছে জিএনএ। এতে অনেকটা কোণঠাসা হয়ে পড়েছে হাফতার বাহিনী। সম্প্রতি সেখানে সরকারি বাহিনী আমিরাতের বেশ কয়েকটি ড্রোন ভূপাতিত করেছে। বিশ্লেষক মনে করছেন, লিবিয়া স্টাইলে ইয়েমেনেও নিজেদের প্রভাব বিস্তারে মনোনিবেশ করতে যাচ্ছে আঙ্কারা। সেখানেও আমিরাত একটি পক্ষকে সমর্থন দিচ্ছে।
তুর্কি সেনা
তুর্কি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, ইয়েমেনের সঙ্গে তাদের সম্পর্কের ভিত্তি অনেক গভীর। তাদের সঙ্গে দেশটির ঐতিহাসিক এবং দৃঢ় সাংস্কৃতিক সম্পর্ক রয়েছে। এক সময় ইয়েমেন অটোম্যান সম্রাজ্যেরই অংশ ছিল।
মিডল ইস্ট মনিটরের বরাতে জানা যায়, তুরস্ক গত ৫ বছর ধরে ইয়ামেনে জাতিসংঘ ও সৌদি আরব সমর্থিত মানসুর হাদির সরকারকে সমর্থন দিয়ে আসছে। এই সরকারের বিরোধিতা করা ইরান সমর্থিত হুথি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে ইয়েমেনে যুদ্ধ ঘোষণার পর সৌদি আরবকে সমর্থন দেয় তুরস্ক। কিন্তু সৌদি নেতৃত্বাধীন জোট তেমন কোনো কার্যকারিতা সেখানে প্রমাণ করতে পারেনি।
সৌদি আরবের মতো তুর্কি প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানও হুথি বিদ্রোহীদের মদদ দেয়ার জন্য ইরানকে দোষারোপ করেছেন। কিন্তু ২০১৮ সালে সৌদি সাংবাদিক জামাল খাশোগি হত্যার পর সিদ্ধান্ত পাল্টান এরদোয়ান। তিনি ইয়েমেনে শান্তি ফিরিয়ে আনতে নতুন এক পরিকল্পনা হাতে নেন।
যুদ্ধবিধ্বস্ত ইয়েমেন
জানা যায়, সেই পরিকল্পনার পর থেকেই ইয়েমেনে কার্যক্রম বাড়িয়ে দিয়েছে তুরস্ক। তাছাড়া ওই অঞ্চলে বাব আল মান্দেব ও লোহিত সাগরে নিজেদের অবস্থান পোক্ত করার দীর্ঘদিনের ইচ্ছা তুর্কিদের।
ইয়েমেনে তুরস্ক সামরিক উপস্থিতি বাড়াচ্ছে এমন অভিযোগ এনেছে সংযুক্ত আরব আমিরাতের অর্থায়নে চলা পত্রিকা আরব উইকলি। সেখানে এক প্রতিবেদনে বলা হয়, গত তিন মাসে ইয়েমেনে তুর্কি সেনাদের উপস্থিতি বেড়ে গেছে। ত্রাণ সরবরাহের আড়ালে তারা মূলত সামরিক উপস্থিতি বাড়িয়ে তুলছে। সম্পতি তুরস্কের নিজস্ব প্রযুক্তিতে তৈরি একটি ড্রোনও ভূপাতিত করেছে হুথি বিদ্রোহী।
এ প্রসঙ্গে কিংস কলেজ লন্ডনের সহকারী অধ্যাপক ডক্টর এনড্রেস ক্রিগ বলেন, আমিরাতি পত্রিকার এমন অভিযোগ সত্য হতেও পারে আবার নাও হতে পারে। এমনও হতে পারে অভিযোগগুলো আধা সত্য। এসব উত্তেজনার উদ্ভব হয়েছে আমিরাত কর্তৃক ইয়েমেনে বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন সাউদার্ন ট্রানজিশনাল কাউন্সিলকে (এসটিসি) সমর্থন দেয়ার কারণে। সেইসঙ্গে ইয়েমেনের জাতিসংঘ স্বীকৃত সরকারের সাংগঠনিক অদক্ষতার কারণেও পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে আছে।
মিডল ইস্ট মনিটর বলছে, ইয়েমেনে তুরস্কের অবস্থান সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ সৌদি সমর্থিত সরকার ইয়েমেনে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারছে না। হুথি বিদ্রোহীরা রাজধানী সানা ও উত্তরাঞ্চলে নিজেদের কর্তৃত্ব বিস্তার করতে সক্ষম হয়েছে। এর মধ্যেই সৌদি সমর্থিত সরকার ও আমিরাত সমর্থিত এসটিসির বিরোধিতা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। এখন সৌদি আরবও চাইছে তুরস্কের সমর্থন।
যদি তুরস্ক সৌদি আরবের সঙ্গে যোগ দিয়ে হুথি বিদ্রোহী ও এসটিসির বিরুদ্ধে নেমে পড়ে তাহলে লিবিয়ার মতো এখানেও ব্যর্থ হবে আমিরাতি সমর্থন।
বিশ্লেষকদের মতে, ইরান সমর্থিত হুথিদের বিরোধিতা সেইভাবে করবে না তুরস্ক। কারণ সম্প্রতি ইরান-তুরস্ক উষ্ণ সম্পর্ক দেখিয়েছে। যা খুব বিরল। দুই দেশ একত্র হয়ে ইরাকের কুর্দি এলাকায় হামলা করেছে। তাই ইয়েমেনে হুথিদের ওপর তুর্কি হামলার সম্ভাবনা কম। তুরস্ক ইয়েমেনে যেটা করতে পারে তা হচ্ছে- এসটিসির বিরুদ্ধে লড়াই করা। হয়তো সংযুক্ত আরব আমিরাতকে আবারো পরাজয়ের মুখ দেখতে হতে পারে।
উল্লেখ করা প্রয়োজন, ইয়েমেনের আল-ইসলাহ পার্টিকে আগে থেকেই সমর্থন দিয়ে আসছে তুরস্ক। দলটির সঙ্গে মিশর কেন্দ্রীক মুসলিম ব্রাদারহুডের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। আর মুসলিম ব্রাদারহুডের প্রতি তুরস্কের যে সমর্থন রয়েছে সে অভিযোগ বরাবরই করা হয়।
ইয়েমেনে সৌদি নেতৃত্বাধীন জোটের অভিযানের শুরু থেকেই একত্রে ছিল সৌদি আরব ও সংযুক্ত আমিরাত। কিন্তু জোটের বাইরে এসটিসিকে আলাদাভাবে শক্তিশালী করার চেষ্টা করে আমিরাত। অন্যদিকে, তুরস্কে অবস্থিত সৌদি কনস্যুলেটে জামাল খাশোগিকে হত্যার পর চাপে পড়ে যায় রিয়াদ। এর পরই ইয়েমেন ইস্যুতে তুর্কি পলিসিকে সমর্থন দিতে বাধ্য হয় সৌদি আরব। আর তার পরই সৌদি জোটে ভাঙন ধরে এবং সৌদি আমিরাতের ‘অভ্যন্তরীণ’ বিরোধিতা সম্মুখে আসে।
এখন ঘনিষ্ঠ মিত্র সৌদি ও আমিরাতের এই দ্বন্দ্বকে কাজে লাগিয়ে এবং ইরানকে না ক্ষেপিয়ে নিজেদের মূল শক্তি আল-ইসলাহ পার্টিকে প্রভাবশালী করতে চায় আঙ্কারা। আর তা যদি করতে পারে, তাহলে ওই অঞ্চলে তুর্কি প্রভাব হয় তো অদূর ভবিষ্যতেই চোখে পড়বে।
গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...
খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর
Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.
Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.