বিদেশি গণমাধ্যমে বাংলাদেশের পোশাক শ্রমিকদের করুণ চিত্র

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে সৃষ্ট সংকটে কাজ হারিয়ে বেকার হয়ে পড়েছেন অসংখ্য মানুষ। বিশেষ করে দেশের তৈরি পোশাক শিল্প খাতে শুধু মে মাসেই চাকরি হারিয়েছেন ২৫ হাজারের বেশি শ্রমিক। এভাবে চলতে থাকলে আগামী ছয় মাসে সংখ্যাটা লাখে গিয়ে ঠেকতে পারে বলে জানিয়েছেন পোশাক কারখানা মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ সভাপতি রুবানা হক।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্যা গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বাংলাদেশের পোশাক খাতের এমন করুণ চিত্র ফুঁটে উঠেছে। চাকরি হারানো কয়েকজন শ্রমিকের উদ্ধৃতি দিয়ে সেখানে বলা হয়, বর্তমানে এসব শ্রমিকরা খুবই মানবেতর জীবনযাপন করছেন। অনেককে দুই-তিন মাসের বকেয়া বেতন পরিশোধ না করেই ছাঁটাই করে দেয়া হয়েছে। করোনার কারণে তারা প্রতিবাদও করতে পারছেন না।

নিজের কষ্টের কথা উল্লেখ করে রাজধানী ঢাকার পোশাক শ্রমিক নাজমিন নাহার জানান, চাকরি হারানোর পর থেকে গত দুই মাসের বেশি সময় ধরে দুই সন্তান নিয়ে বহু কষ্টে জীবন অতিবাহিত করছেন। খাবার কেনা কিংবা বাসা ভাড়া দেয়ার মতো কোনো টাকা নেই। অন্যের কাছ থেকে চাল ধার করে দুই সন্তানকে কোনোমতে খাওয়াচ্ছেন। কিন্তু এভাবে আর কতদিন?

২৬ বছর বয়সী ওই পোশাক শ্রমিক ম্যাগপাই নিটওয়্যার কারখানায় কাজ করতেন। ওই কারখানাটি বার্টন এবং এইচএন্ডএমের মতো ব্রিটিশ ব্র্যান্ডগুলোর জন্য পোশাক তৈরি করে থাকে। কিন্তু লকডাউনের কারণে মার্চের শেষদিকে এটি বন্ধ হয়ে। পরে ৪ এপ্রিল প্রতিষ্ঠানটি ফের চালু হলেও তাকে না করে দেয়া হয়। প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে বলা হয়, বিদেশি ক্রেতারা সব অর্ডার বাতিল করে দেয়াতে নতুন কোনো কাজ নেই। তাই এক রকম বাধ্য হয়েই শ্রমিক ছাঁটাই করতে হচ্ছে।

একই কথা জানান আল্টিমেট ফ্যাশন লিমিটেডে কাজ করা রোজিনা বেগম এবং স্টার্লিং স্টাইলসে কাজ করা আঁখি আক্তার। তারা বলেন, পূর্ব নোটিশ ছাড়াই তাদের ছাঁটাই করে দেয়া হয়েছে। ফলে এখন গ্রামেও ফিরে যাওয়া যাচ্ছে না। কারণ সেখানে তাদের কিছুই নেই। একমাত্র আয়ের উৎস বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তারা মানসিকভাবে বিধ্বস্ত হয়ে পড়েছেন।

এ বিষয়ে ম্যাগপাই নিটওয়্যারের অর্ডারকারী এইচঅ্যান্ডএম দাবি করছে, তারা ওই গার্মেন্টস প্রতিষ্ঠানের কোনো অর্ডার বাতিল করেনি। উল্টো ওই প্রতিষ্ঠানটির এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘আমাদের কাছে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ক্ষতিগ্রস্ত সব শ্রমিককে আইন অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ দেয়া হয়েছে।’

শ্রমিক ছাঁটাইয়ের ব্যাপারে আল্টিমেট ফ্যাশনের একজন মুখপাত্র বলেন, করোনার কারণে আমাদের ৭০ ভাগ শ্রমিক ও সক্ষমতা নিয়ে উৎপাদন পরিকল্পনা করতে হয়েছিল। বাকি ৩০ ভাগ শ্রমিককে সরকারি নিয়ম মেনে ছাঁটাই করতে হয়েছে। তবে আর্কাডিয়া, ম্যাগপাই নিটওয়্যার এবং স্টার্লিং স্টাইলসের মতো প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে এ ব্যাপারে কোনো বিবৃতি পাওয়া যায়নি।

বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স এক্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশন (বিজিএমইএ) বলছে, লকডাউনের কারণে কয়েক বিলিয়ন ডলারের অর্ডার বাতিল হয়ে গেছে। তাই শ্রমিক ছাঁটাই করতে বাধ্য হচ্ছেন গার্মেন্টস মালিকরা। এমনকি প্যাকেটজাত হয়ে শিপিংয়ের জন্য অপেক্ষমাণ পোশাকও বাতিল করা হয়েছে। এ ছাড়া ফ্যাশন ব্র্যান্ডগুলো সরবরাহকারীদের কাছে তাদের দেয়া প্রায় তিন বিলিয়ন ডলারের অর্ডার প্রত্যাহার করেছে।