করোনাকালে দরিদ্র হয়েছে দেড় কোটির বেশি মানুষ

নভেল করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) সংক্রমণে স্থবির হয়ে পড়েছে বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশের অর্থনীতি। এর ব্যতিক্রম নয় বাংলাদেশও। আর এর প্রভাবে দেশের দরিদ্রের কাতারে নতুন করে যুক্ত হয়েছে দেড় কোটির বেশি মানুষ। গতকাল বুধবার এক ডিজিটাল সেমিনারে এ সংক্রান্ত একটি গবেষণা প্রকাশ করে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস)।

করোনায় বেড়েছে দরিদ্রতার হার- ফাইল ছবি

‘বিআইডিএস ক্রিটিক্যাল কনভারসেশন-২০২০: ইন দ্য শ্যাডো অব কোভিড-কোপিং, অ্যাডজাস্টমেন্টস অ্যান্ড রেসপনসেস’ শীর্ষক ডিজিটাল সেমিনারটি আয়োজন করে বিআইডিএস। আর এতে ‘পভার্টি ইন দ্য টাইম অব করোনা: শর্ট টার্ম ইফেকটস অব ইকোনমিক স্লোডাউন অ্যান্ড পলিসি রেসপন্স থ্রু সোস্যাল প্রটেকশন’ শীর্ষক গবেষণাটি প্রকাশ করা হয়। গবেষণাটি করেছেন বিআইডিএসের গবেষণা পরিচালক ড. বিনায়ক সেন।

গবেষণায় বলা হয়, চলতি বছরের শুরুতে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হওয়ার অগে দেশে দারিদ্র্যের হার ছিল ২০ দশমিক ৩ শতাংশ। এর মধ্যে গ্রামে ২২ শতাংশ এবং শহরে ১৫ দশমিক ২২ শতাংশ। গত ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। এরপর ধীরে ধীরে সংক্রমণের বিস্তার বাড়তে থাকে। পাশাপাশি ভাইরাসের কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে কাজ হারাতে থাকেন আনেক মানুষ। এর ফলে একদিকে যেমন মানুষে আয় রোজগার বন্ধ হয়ে যায়, তেমনি অন্যদিকে বাড়তে থাকে দারিদ্র্যের হার। ইতোমধ্যে দরিদ্রের কাতারে নতুন করে যুক্ত হয়েছে ১ কোটি ৬৪ লাখ মানুষ।

বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস)

এতে আরো বলা হয়, বছরের শেষ দিকে মানুেষের আয়-রোজগার পুনরায় শুরু হলে এই পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হতে পারে। তারপরও বছরের শেষে দারিদ্র্যের হার ২৫ শতাংশ ছাড়াতে পারে। এ ক্ষেত্রে গ্রামের চেয়ে শহরের দরিদ্রের সংখ্যা বাড়তে পারে। গ্রামে ২৪ দশমিক ২৩ এবং শহরে ২৭ দশমিক ৫২ শতাংশ দারিদ্র্যের হার হতে পারে। এছাড়া বছরের শেষে চরম দারিদ্র্যের হার থাকবে ১৪ দশমিক ৯ শতাংশ। যা চলতি বছরে শুরুতে ছিলে ১০ দশমিক ১ শতাংশ।

শ্রমিকের আয়ের ওপর ভিত্তি করে দরিদ্রের এ হার হিসাব করা হয়েছে। পাশাপাশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে বর্তমান প্রেক্ষাপটকেও। করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে গ্রামে কাজ করা শ্রমিকের আয় কমেছে ১০ শতাংশ এবং শহরে কাজ করা শ্রমিকের আয় কমেছে ৮০ শতাংশ।

এ বিষয়ে ড. বিনায়ক সেন বলেন, প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের সংক্রমণ মোকাবেলায় আংশিক বা সম্পূর্ণ, স্বল্প সময় বা দীর্ঘ সময়ের লকডাউন, কোনোটিই অর্থনৈতিকভাবে খুব একটা কার্যকর নয়। কারণ লকডাউনে একদিকে যেমন দেশে দরিদ্রের হার বৃদ্ধি পেয়েছে, তেমনি অন্যদিকে আগে থেকেই দরিদ্রের কাতারে থাকা মানুষের জীবনযাপন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে।

করোনায় বেড়েছে দরিদ্রতার হার- ফাইল ছবি

তিনি আরো বলেন, করোনার কারণে দেশের মানুষ অর্থনৈতিভাবে যতটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তা সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ বাড়িয়ে পূরণ কা যাবে না। এমনকি অসহায়দের সহায়তায় বরাদ্দ বাড়িয়ে খুব একটা লাভ হচ্ছেও না। কারণ এ সহায়তা সত্যিই যাদের দরকার, তারা অনেকেই সহায়তা প্রদানের তালিকায় ঢুকতে পারছেন না।

ড. বিনায়ক সেন আরো বলেন, গবেষণায় দেখা যায়, সামাজিক নিরাপত্তা খাতের বিভিন্ন পর্যায়ে ৩০ শতাংশ এমন মানুষ সরকারের ভাতা নিচ্ছেন যারা আর্থিকভাবে সচ্ছল এবং দরিদ্র নন। খাদ্য সহায়তার ক্ষেত্রে এই হারটা ৩২ শতাংশ, বৃত্তির ক্ষেত্রে ৩৩ শতাংশ এবং মাতৃত্বকালীন ভাতার ক্ষেত্রে তা ৪৪ শতাংশ।

এ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিআইডিএস'র মহাপরিচালক ড. কেএএস মুরশিদ। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান এবং বিশেষ অতিথি ছিলেন পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. আসাদুল ইসলাম। এতে আলোচক হিসেবে আরো উপস্থিত ছিলেন সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ মুশতাক হোসেন, যুক্তরাজ্যের উলস্টার ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ড. এসআর ওসমানী।