ভ্যাকসিনের আগেই আসছে এন্টিবডি চিকিৎসা

মরণঘাতী করোনাভাইরাসের কোনো ভ্যাকসিন এখনো আবিষ্কার হয়নি। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের গবেষকরা রাতদিন পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। কবে নাগাদ একটি কার্যকর ভ্যাকসিন পাওয়া যাবে তা নিশ্চিত কেউ বলতে পারছে না। তবে মার্কিন বিশেষজ্ঞদের বিশ্বাস, করোনাভারাসের একটি ভ্যাকসিন আবিষ্কারের আগেই যথাযথ এন্টিবডি চিকিৎসা পেয়ে যাবে বিশ্ববাসী।

প্রতীকী ছবি

এন্টিবডি হলো এমন এক ধরনের প্রোটিন বা আমিষ যা মানদেহে সংক্রামক রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করে। কয়েক শতাব্দী ধরে চিকিৎসকরা ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগ থেকে মানুষকে সারিয়ে তুলতে এর ব্যবহার করে চলেছেন। এক শতাব্দী আগের স্প্যানিশ ফ্লুতেও এন্টিবডি চিকিৎসা ভালো ফলাফল দেখিয়েছে।

সে সময় চিকিৎসকরা রক্তের প্লাজমার (রক্তরস) মাধ্যমে রোগীদের এন্টিবডি চিকিৎসা দিয়েছিলেন। এই প্লাজমা চিকিৎসা করোনাভাইরাসের সমগোত্রীয় মার্স ও সার্স ভাইরাসের ওপরও কার্যকারিতা দেখিয়েছে। গবেষকদের ধারণা, করোনাভাইরাসের ক্ষেত্রেও এটি কার্যকর ভূমিকা রাখবে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ইতোমধ্যে এর প্রয়োগও শুরু হয়ে গেছে।

সংগ্রহকৃত রক্তের প্লাজমা

সিএনএনের বরাতে জানা যায়, একটি ভ্যাকসিন তৈরি করতে যে পরিমাণ গবেষণার প্রয়োজন তার চেয়ে এন্টিবডি চিকিৎসার জন্য অনেক কম গবেষণার দরকার হয়। তাছাড়া কয়েক মাসের মধ্যেই এন্টিবডির গবেষণা শেষ হয়ে যায়। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ কমাতে তাই প্লাজমা থেরাপি খুব কাজে দিবে বলে বিশ্বাস করেন মার্কিন বিশেষজ্ঞরা। সে মোতাবেক চলছে গবেষণা। মার্কিন বিশেষজ্ঞদের বিশ্বাস, ভ্যাকসিনের আগেই সবার হাতে এন্টিবডি চিকিৎসা পৌঁছে যাবে।

যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় সংক্রামক রোগ অধিদপ্তরের পরিচালক ও হোয়াইট হাউস করোনা টাস্ক ফোর্সের সদস্য অ্যান্থনি ফুসি বলেন, এই প্লাজমা থেরাপি বর্তমানে করোনাভাইরাসে সংক্রমিত রোগীদের সারিয়ে তুলতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে পারে।

তিনি বলেন, বর্তমানে আমরা ল্যাবে মনোলজিক্যাল এন্টিবডি প্রস্তুতির দিকে এগোচ্ছি। এতে রক্তের প্লাজমা ও হাইপার ইমিউন গ্লোবুলিনের সংমিশ্রণ থাকবে।

মার্কিন গবেষক ডেভিড থমাস বলেন, বর্তমানে বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসের এন্টিবডি খুঁজে বের করার জন্য ১০২টি গবেষণা চলছে। আমার কখনো ধারণা হয়নি যে, একটি মহামারি গবেষণা খাতকে এতো ত্বরান্বিত করে দিবে। এর আগে বিশ্বজুড়ে গবেষকরা একই উদ্দেশ্যে কাজ করার অভিজ্ঞতা পায়নি। ইতিহাসে এই প্রথম সবাই একটি ভাইরাসের বিরুদ্ধে কার্যকর একটি উপায় খুঁজে পেতে উঠে পড়ে লেগেছে।

সিএনএন বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন ওষুধ প্রস্তুতকারী ও ল্যাবগুলো করোনাভাইরাসের একটি কার্যকর এন্টিবডির অনুসন্ধানে কাজ করে যাচ্ছে। গবেষকরা আলোর গতিতে কাজ করে যাচ্ছেন।

ডেভিড থমাস বলেন, জুনেই চার ধরনের এন্টিবডি মানবদেহে পরীক্ষামূলক প্রয়োগ করা শুরু হবে। এর মধ্যে সবকটিই মোনোলজিক্যাল এন্টিবডি, যা ল্যাবে প্রস্তুত করা হয়েছে। সেখানে বিভিন্ন পরীক্ষায় এগুলো করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে।