মাঝে মাঝেই বনাঞ্চল ছেড়ে লোকালয়ে চলে আসে হাতি। এরপর কখনো মানুষের আক্রমণের শিকার হয় প্রাণিটি, কখনো বা নিজেই আক্রমণ করে বসে মানুষকে। হাতির আক্রমণে যেমন ফসলের ক্ষতি, ঘর-বাড়ি ধ্বংস, এমনকি মানুষের মৃত্যুর খবরও পাওয়া যায়, তেমনি মানুষের নিষ্ঠুরতা ও অসচেতনতার বলি হয়ে এই স্তন্যপায়ী প্রাণিটিরও প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু হাতি ও মানুষের মধ্যে কেন এই দ্বন্দ্ব?

wild elephant 2বন্যহাতি- ফাইল ছবি

চট্টগ্রাম অঞ্চলের বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আবু নাছের মোহাম্মদ ইয়াছিন নেওয়াজ জানান, পৃথিবীর বৃহত্তম স্থলচর এই প্রাণিটি দৈনিক ১৫০ থেকে ২০০ কেজি খাবার খায়। তাদের খাবারের মধ্যে রয়েছে- কলাগাছ, বাঁশ, তৃণলতা ও ফলদ উদ্ভিদ। কিন্তু পাহাড়ে জুম চাষ ও বন উজার করে ফেলায় খাদ্য সংকটে পড়েছে প্রাণিটি।

এছাড়া হাতি কখনো এক জায়গায় স্থায়ী থাকে না। প্রায় ৭০ থেকে ৮০ কিলোমিটার পথ ঘুরে ঘুরে এরা খাবার খায়। এটিই তাদের স্বাভাবিক জীবনযাপন। কিন্তু বন উজার ও প্রাকৃতিক পরিবেশ বদলে যাওয়ায় সেটি এখন ব্যাহত হচ্ছে। তাই মাঝে মাঝেই লোকলয়ে চলে আসছে প্রাণিটি। আর এর ফলে প্রতিনিয়তই বাড়ছে মানুষ ও হাতির দ্বন্দ্ব।

wild elephant 3বন্যহাতি- ফাইল ছবি

এই দ্বন্দ্ব বাড়ার পেছনে ৯টি কারণ রয়েছে বলে জানিয়েছে বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ। কারণগুলো হলো- ১) পাহাড়ে বনাঞ্চল উজার, ২) প্রতিনিয়ত হাতির বসতি ধ্বংস, ৩) পাহাড়ে হাতির পছন্দমতো খাবারের অভাব, ৪) মানুষের বিভিন্ন কার্যক্রমের ফলে হাতিদের চলাচলের পথ বাধাপ্রাপ্ত হওয়া, ৫) চোরা শিকারিদের নিষ্ঠুরতা, ৬) বনাঞ্চলের মধ্যে যেখানে সেখানে মানব বসতি গড়ে উঠা, ৭) পাহাড়ি বনের মধ্যে বিভিন্ন বাহিনীর ক্যাম্প স্থাপন করা, ৮) বনাঞ্চলের মধ্য দিয়ে রেললাইন স্থাপন, ৯) পাহাড় ও বনাঞ্চলের মধ্যে দিয়ে সড়ক তৈরি। তবে এর মধ্যে সবচেয়ে বড় কারণটি হলো হাতিদের পছন্দমতো খাদ্য সংকট।

বন বিভাগ সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রাম, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি ও কক্সবাজারের পার্বত্যাঞ্চল দেশের বন্যহাতিদের আবাসস্থল। চট্টগ্রাম জেলার বাঁশখালী, চন্দনাইশ, বোয়ালখালী, রাঙ্গুনিয়া ও পটিয়া; বান্দরবান জেলার আলিকদম ও লামা; খাগড়াছড়ি জেলার পাহাড়ি অঞ্চল; রাঙামাটি জেলার কাপ্তাই, কাউখালী ও লংগদু এবং কক্সবাজার জেলার টেকনাফ, উখিয়া, রামু ও কাসিয়াখালিসহ ১১টি বন বিভাগে হাতিদের স্বাভাবিকভাবে বিচরণ করতে দেখা যায়।

elephant passed away in teknafসম্প্রতি কক্সবাজারের টেকনাফে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা যায় একটি বন্যহাতি

১৯৮০ সালে বন বিভাগের জরিপ অনুযায়ী, দেশের বনাঞ্চলগুলোতে ৩৮০টি বন্যহাতি ছিল। ২০০০ সালে ওয়ার্ল্ড ওয়াইল্ড লাইফ ফান্ডের এক গবেষণায় অনুযায়ী, দেশে বন্যহাতির সংখ্যা ছিল ২৩৯টি। আর ২০০৪ সালে ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচারের (আইইউসিএন) এক জরিপে দেখা যায়, দেশে বন্যহাতি রয়েছে ২২৭টি।

তবে বর্তমানে দেশে ২৭০ থেকে ৩২০টি হাতি আছে বলে দাবি বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের। যার মধ্যে পার্বত্য চট্টগ্রামের বনাঞ্চলে বসাবাস করছে ৮০ থেকে ৯০ ভাগ হাতি। বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের জরিপ অনুযায়ী, চট্টগ্রাম দক্ষিণ বনাঞ্চলে আছে ৩০ থেকে ৩৫টি হাতি, বান্দরবানের আছে ১২ থেকে ১৫টি, লামা বিভাগে আছে ৩৫ থেকে ৪০টি, কক্সবাজারের উত্তর ও দক্ষিণ বিভাগে আছে ৮২ থেকে ৯৩টি, রাঙ্গামাটি উত্তর বিভাগে আছে ৭ থেকে ৯টি এবং দক্ষিণ বিভাগে আছে ৩০ থেকে ৩৫টি হাতি। এছাড়া নেত্রকোনা, ময়মনসিংহ ও শেরপুর এলাকায় ১০ থেকে ২০ শতাংশ হাতি রয়েছে। তবে সেগুলো কিছুদিন বাংলাদেশে ও কিছুদিন ভারতের বনাঞ্চলে বসবাস করে।

চট্টগ্রামের পাহাড়ী বনাঞ্চল প্রতিনিয়ত উজার হতে থাকায় হাতিদের জীবনযাপন দিন দিন হুমকির মুখে পড়ছে। এমতাবস্থায় বন্যহাতি সংরক্ষণে সকলকে সমন্বিতভাবে কাজ করার অনুরোধ জানিয়েছেন চট্টগ্রাম অঞ্চলের বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আবু নাছের মোহাম্মদ ইয়াছিন নেওয়াজ।

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর

Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.

Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.