এ কয়দিন যেখানে যেখানে ছিলেন শাহেদ

নভেল করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) পরীক্ষার নামে রোগীদের সঙ্গে প্রতারণা, অর্থ আত্মসাৎ ও অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগে অবশেষে গ্রেপ্তার করা হয়েছে রিজেন্ট গ্রুপ ও রিজেন্ট হাসপাতাল লিমিটেডের চেয়ারম্যান মো. শাহেদকে। আজ বুধবার ভোরে সাতক্ষীরার দেবহাটা সীমান্ত থেকে তাকে অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার করে র‌্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) একটি দল। তিনি দেশের বিভিন্ন জায়গায় পালিয়ে ছিলেন। এমনকি সীমান্ত দিয়ে ভারতও পালিয়ে যেতে চেয়েছিলেন।

র‌্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হওয়ার পর শাহেদ

ভোরে গ্রেপ্তারের পর শাহেদকে সাতক্ষীরা থেকে হেলিকপ্টারযোগে রাজধানীর র‌্যাব সদর দপ্তরে নিয়ে আসা হয়। সেখানে তাকে প্রাথমিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। গত ৯দিন কোথায় পালিয়ে ছিলেন জিজ্ঞাসাবাদে শাহেদ তা জানান।

শাহেদ জানান, গত ৬ জুলাই বিকেলে র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত যখন উত্তরার ১১ নম্বর সেক্টরের ১৭ নম্বর রোডে অবস্থিত রিজেন্ট হাসপাতালে অভিযান চালায় তখন তিনি কক্সবাজারের মহেশখালীতে অবস্থান করছিলেন। সেখানের একটি সাইক্লোন সেন্টারে ছিলেন। এতে তাকে সহযোগিতা করেছে সেখানকার স্থানীয় দালালরা।

তিনি আরো জানান, মহেশখালী কয়দিন থাকার পর তিনি সেখান থেকে চলে যান কুমিল্লা জেলার মীরা বাজার এলাকায়। এ সময় তাকে ধরতে র‌্যাব অভিযান চালালে তিনি তাদের খুব কাছাকাছি চলে আসেন। কিন্তু সে যাত্রায় বেঁচে যান তিনি। কোনোভাবে র‌্যাবের চোখে ধুলো দিয়ে তিনি সেখান থেকে পালিয়ে যান। গত রোববার তিনি রাজধানীর গুলশানে আসেন। কিন্তু এখানেও নিরাপদ মনে না করায় চলে যান সাতক্ষীরা জেলায়।

র‌্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হওয়ার পর শাহেদ

তার পরিকল্পনা ছিলো সাতক্ষীরার সীমান্ত এলাকা দিয়ে অবৈধভাবে ভারতে পালিয়ে যাওয়া। এ জন্য তিনি দালালদের সঙ্গে কথা বার্তাও বলতে থাকেন। কিন্তু সফল হওয়ার আগেই আজ বুধবার ভোরে র‍্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হন শাহেদ।

র‌্যাব জানায়, শাহেদকে যখন জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছিল তিনি তখন খুবই নির্ভার ছিলেন। বেশ কয়েকবার নিজের দাম্ভিকতাও প্রকাশ করেন তিনি। এমনকি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে র‍্যাব কর্মকর্তাদের বলেন, তাকে এখানে ছয় মাসের বেশি আটকে রাখা যাবে না।

এ বিষয়ে র‍্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিক বিল্লাহ গণমাধ্যমকে বলেন, শাহেদ একজন খুবই ঠান্ডা মাথার মানুষ। তিনি এতদিন ধরে মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছেন। এর আগে কারাগারেও গেছেন। তাই আইনি বিষয়গুলো তার খুব ভালো করে জানা আছে। তিনি একেকবার একেকরকম তথ্য দিচ্ছেন এবং বিভ্রান্ত করছেন।

জানা যায়, গ্রেপ্তারের আগে দেবহাটা উপজেলার শাখরা কোমরপুর বেইলি ব্রিজের নিচে নর্দমার মধ্যে শুয়েছিলেন শাহেদ। স্থানীয়দের অনেকে ফজরের নামাজের ওজু করার সময় তাকে দেখেছেন, কিন্তু পাগল ভেবে কিছু বলেননি। নামাজ শেষ করতেই মুসল্লিরা র‌্যাবের গাড়ির সাইরেন শুনতে পান। র‌্যাব সদস্যদের দেখে দৌঁড়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন শাহেদ, কিন্তু ধরা পড়ে যান।

স্থানীয় মাঝিরা জানিয়েছেন, কাল রাতেই শাহেদ এই এলাকায় আসেন। ভারতে পৌঁছে দিতে একজন মাঝিকে অনুরোধ করেছিলেন, কিন্তু সেই মাঝি রাজি হয়নি। মাঝিকে টাকার লোভও দেখানো হয়েছিল। এক পর্যায়ে পাশের ব্রিজের নিচে গিয়ে শুয়ে পড়েন শাহেদ। সেখান থেকেই ভোরে তাকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব সদস্যরা।

গত ৬ জুলাই বিকেলে উত্তরার ১১ নম্বর সেক্টরের ১৭ নম্বর রোডে অবস্থিত রিজেন্ট হাসপাতালে অভিযান চালায় ভ্রাম্যমাণ আদালত। এতে নেতৃত্ব দেন র‌্যাব সদর দপ্তরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম। অভিযানে প্রমাণ মেলে, ৩৫০০ থেকে ৪০০০ টাকা করে নিলেও হাজার হাজার মানুষকে ভুয়া করোনার সার্টিফিকেট ধরিয়ে দিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এছাড়া চিকিৎসার অস্বাভাবিক ফি দেখিয়ে হাতিয়ে নিয়েছে কোটি কোটি টাকা।