অবশেষে নিজস্ব অর্থায়নে তরুণরাই ‘পাকা’ করবেন সড়ক

গ্রামের ওপর দিয়ে চলে গেছে দেড় কিলোমিটার দীর্ঘ একটি কাঁচা সড়ক। এটিই গ্রামটির বাসিন্দাদের চলাচলের একমাত্র রাস্তা। বছরের অন্যান্য সময় সড়কটি দিয়ে কোনোভাবে যাতায়াত করা গেলেও বর্ষাকালে তা একেবারেই চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। বৃষ্টির পানিতে রাস্তাটি কাঁদায় একাকার হয়ে যায়। বিকল্প কোনো রাস্তা না থাকায় বাধ্য হয়ে কর্দমাক্ত পথ হেঁটেই চলাচল করতে হয় পটুয়াখালী জেলার মির্জাগঞ্জ উপজেলার মির্জাগঞ্জ ইউনিয়নের পিঁপড়াখালী গ্রামের বাসিন্দাদের।

নিজেদের উদ্যোগে সড়ক মেরামত করছেন তরুণরা

পিঁপড়াখালী গ্রামের বাসিন্দাসহ আশপাশের গ্রামের বাসিন্দাদের চলাচলের এ গুরুত্বপূর্ণ সড়কটির এমন বেহাল দশা দীর্ঘদিন ধরেই। সড়কটি পাকা বা মেরামত করার জন্য বার বার জনপ্রতিনিধিদের কাছে ছুটে গেছেন গ্রামের বাসিন্দারা। কিন্তু বছরের পর বছর ধরনা দিয়ে কোনো লাভ হয়নি। তাই নিজেদের অর্থায়নেই সড়কটি মেরামতের উদ্যোগ নিয়েছেন গ্রামের তরুণ ও যুবকরা।

আজ শুক্রবার উপজেলার চিংগড়িয়া বাজার থেকে আবদুর রহিম হাওলাদারের বাড়ি পর্যন্ত প্রায় দেড় কিলোমিটার কাঁচা সড়ক মেরামতের কাজ শুরু করা হয়। সড়কটি মেরামতে অর্থ দিচ্ছেন গ্রামের বাসিন্দারাই। আর কয়েকজন পেশাদার শ্রমিকের সাহায্যে এই মেরামতের কাজ করবেন এলাকার তরুণ ও যুবকরা। কিন্তু দেড় কিলোমিটার দীর্ঘ রাস্তাটি স্থানীয় লোকজনের অর্থে পাকা করা সম্ভব নয়। তাই আপাতত বালু ও মাটি ফেলে সড়কটি চলাচলের উপযোগী করা হচ্ছে।

নিজেদের উদ্যোগে সড়ক মেরামত করছেন তরুণরা

স্থানীয় কয়েকজন তরুণ জানান, সড়কটির দুরবস্থা ও গ্রামবাসীদের দুর্ভোগ লাঘবের উপায় খুঁজতে প্রথমে ‘পিপড়াখালী পরিবার’ নামে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি ম্যাসেঞ্জার গ্রুপ খোলেন তারা। সেখানে এই দুর্ভোগ পরিত্রাণের বিষয়ে আলোচনা করা হয় এবং সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় তারা নিজেরাই স্বেচ্ছাশ্রমে সড়কটি মেরামত করবেন। এরপর ‘পিপড়াখালী পরিবার’ নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন গঠন করা হয়। সেই সংগঠনের সদস্যরাই আজ নিজেদের অর্থায়নে সড়কটি মেরামতের কাজ শুরু করেছেন।

স্থানীয়রা জানান, এই সড়কটি দিয়ে আন্দুয়া পিঁপড়াখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও মানসুরাবাদ ইসলামিয়া সিনিয়র মাদ্রাসায় পড়তে যায় গ্রামের শিক্ষার্থীরা। এছাড়া আশপাশের গ্রামের কয়েক শ মানুষ প্রতিদিন সড়কটি দিয়ে চলাচল করে। কিন্তু সড়কটি পাকা না হওয়ায় বর্ষাকালে কাদা পানি মাড়িয়েই চলাচল করতে হয় প্রত্যেককে।

নিজেদের উদ্যোগে সড়ক মেরামত করছেন তরুণরা

‘পিঁপড়াখালী পরিবার’ স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্য মো. তারেক হোসেন জানান, বর্ষাকাল আসলে যানবাহন তো দূরের কথা হেঁটেই চলাচল করা যায় না সড়কটি দিয়ে। তাই গ্রামবাসীদের দুর্ভোগ লাঘবে স্থানীয় তরুণরা নিজ উদ্যোগেই সড়কটি মেরামতের কাজ শুরু করেছেন। এতে অর্থ দিয়েছেন এই এলাকারই কয়েকজন প্রবাসী। এগিয়ে এসেছেন গ্রামবাসীরাও। এর আগে চলমান করোনাভাইরাস মাহামারি প্রাদুর্ভাব দেখা দিলে সংগঠনের পক্ষ থেকে গ্রামের কর্মহীন মানুষদের বিনামূল্যে খাদ্য ও সুরক্ষাসামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে।

এ বিষয়ে মির্জাগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. মনিরুল ইসলাম সিকদার বলেন, সড়কটি পাকা করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে কাছে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।

উপজেলা প্রকৌশলী আজিম-উর-রশিদ বলেন, তরুণদের এই উদ্যোগ সত্যিই প্রশংসনীয়। খুব শিগগিরই সড়কটি প্রকল্পের আওতায় এনে পাকা করার উদ্যোগ নেওয়া হবে।