আপনি পড়ছেন

দীর্ঘ ২৮ বছর পর গত বছর অনুষ্ঠিত হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন। কিন্তু নির্বাচনের দিনই অনিয়মের অভিযোগ ওঠে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলাদেশ-কুয়েত মৈত্রী হলের তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত প্রাধ্যক্ষ শবনম জাহানের বিরুদ্ধে। এ ঘটনার তদন্তে একাধিক কমিটিও গঠন করা হয়। একটি তদন্ত কমিটির সুপারিশের প্রেক্ষিতে তাকে সাময়িকভাবে বরখাস্তও করা হয়। তবে এক বছরেরও বেশি সময় পর আরেকটি তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে তাকে চাকরিচ্যুত না করে শাস্তিস্বরূপ পদাবনতি দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

sabnam jahanপদাবনতি পাওয়া শিক্ষিকা শবনম জাহান- ফাইল ছবি

গতকাল সোমবার ঢাবির সিন্ডিকেট সভায় সামায়িক বরখাস্ত শবনম জাহানকে শাস্তিস্বরূপ পদাবনতি দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক থেকে সহকারী অধ্যাপক করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পাশাপাশি ওই নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকা আবাসিক হলের আরো দুই শিক্ষককে অনিয়মে সংশ্লিষ্ট থাকায় সতর্ক করেছে সিন্ডিকেট।

আজ মঙ্গলবার গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান।

তিনি বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনিয়ম করে কেউ ছাড় পায় না- সেটাই আরেকবার প্রমাণ করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট। নির্বাচনে অনিয়মে সংশ্লিষ্ট থাকায় শবনম জাহানকে শাস্তিস্বরূপ পদাবনতি দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি আরো দুই কর্মকর্তাকে সতর্ক করা হয়েছে।

daksu imageঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু)- ফাইল ছবি

গত বছর ১১ মার্চ ডাকসু ও হল সংসদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এতে সহ-সভাপতি (ভিপি) পদে জয় লাভ করেন নুরুল হক নুর। কিন্তু নির্বাচনের দিন সকালে ভোট গ্রহণ শুরু হওয়ার আগে কুয়েত-মৈত্রী হলের একটি কক্ষ থেকে ছাত্রলীগ মনোনীত প্রার্থীদের পক্ষে সিল মারা বস্তাভর্তি ব্যালট পেপার উদ্ধার করেন শিক্ষার্থীরা। পরে শিক্ষার্থী ও নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী প্রার্থীদের বিক্ষোভের মুখে শবনম জাহানকে তাৎক্ষণিকভাবে হলের ভারপ্রাপ্ত প্রাধ্যক্ষের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। তার পরিবর্তে দায়িত্ব দেওয়া হয় অধ্যাপক মাহবুবা নাসরিনকে। এরপর ওই হলে ভোট গ্রহণ শুরু হয়।

এ ঘটনার তদন্তে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। যার প্রধান করা হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মুহাম্মদ সামাদকে। পরে ওই কমিটির সুপারিশের প্রেক্ষিতে গত বছর ২৮ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট সভায় শবনম জাহানকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়। পাশাপাশি ঘটনার অধিকতর তদন্তের জন্য পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট আরেকটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। যার প্রধান করা হয় ঢাবির আন্তর্জাতিক ব্যবসা বিভাগের সংখ্যাতিরিক্ত অধ্যাপক খন্দকার বজলুল হককে।

এক বছরেরও বেশি সময় পর গতকাল সোমবার ওই কমিটির প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে শবনম জাহানকে চাকরিচ্যুত না করে শান্তিস্বরূপ পদাবনতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট।

এ বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামন বলেন, প্রথম কমিটিটি ছিলো ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটি। ওই কমিটির প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে শবনম জাহানকে সামায়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছিল। এখন তদন্ত কমিটির পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। এতে তদন্ত কমিটি শুধু বাংলাদেশ-কুয়েত মৈত্রী হল সংসদ নির্বাচনে ভোট জালিয়াতির প্রমাণ পেয়েছে। ডাকসু নির্বাচনে কোনো জালিয়াতি হয়নি। তাই তদন্ত কমিটির সুপারিশের প্রেক্ষিতে সিন্ডিকেট শবনম জাহানকে পদাবনতির শাস্তি দিয়েছে।