জন্মদাতাকেও পিটিয়েছেন শাহেদ!

রিজেন্ট গ্রুপ ও রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান মো. শাহেদের প্রতারণা ও নির্যাতনের শিকার হয়েও এতদিন ভয়ে মুখ খুলতে পারছিলেন না ভুক্তভোগীরা। তবে সম্প্রতি করোনাভাইরাস পরীক্ষার নামে জালিয়াতি, অর্থ আত্মসাৎ ও অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগে দায়ের হওয়া মামলায় র‌্যাবের হাতে গ্রেপ্তারের পর তার বিরুদ্ধে উঠে আসতে থাকে নানা অভিযোগ। এমনকি নিজের বাবাকেও প্রকাশ্যে বেল্ট দিয়ে পেটানোর অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে।

র‌্যাবের হাতে গ্রেপ্তার মো. শাহেদ

সম্প্রতি শাহেদের একজন সাবেক দেহরক্ষী গণমাধ্যমকে জানান, শাহেদ বহু মানুষের সাথে প্রতারণা করেছে। তার নির্যাতনের শিকার হয়েছেন অনেকে। কিন্তু কেউই ভয়ে তার বিরুদ্ধে মুখ খুলতে সাহস পায়নি। এমনকি তার নির্যাতনের হাত থেকে বাদ যাননি নিজের জন্মদাতা পিতাও।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, বহু বছর আগে মারা যান শাহেদের মা সাফিয়া করিম। স্ত্রী মৃত্যুর পর একা হয়ে পড়েন তার বাবা। তাকে দেখভাল করার মতোও কেউ ছিলো না। বৃদ্ধ বয়সে একটু যত্ন পাওয়া জন্য আশ্রয় খুঁজছিলেন তিনি। তাই ২০১১ সালে তিনি ছেলের (শাহেদ) একান্ত সহকারীকে (পিএস) বিয়ে করেন।

তবে শাহেদ এ ঘটনা মেনে নিতে পারেননি। এ জন্য তিনি নিজের বাবাকে রাজধানীর উত্তরায় অবস্থিত রিজেন্টের কার্যালয়ে প্রকাশ্যে সবার সামনে বেল্ট দিয়ে পেটান। নিজের জন্মদাতাকে নির্যাতনের এ ঘটনা দেখে তখন বিস্মিত হয়েছিলেন ওই কার্যালয়ে থাকা রিজেন্টের কর্মীরাও।

র‌্যাবের হাতে গ্রেপ্তার মো. শাহেদ

ওই দেহরক্ষী আরো জানান, ওই ঘটনার পর শাহেদের বাবা বাসা থেকে বের হয়ে যান এবং রাজধানীর মোহাম্মদপুরের একটি বাসায় দ্বিতীয় স্ত্রীকে নিয়ে বসবাস শুরু করেন। তাদের ওই সংসারে একটি সন্তানও রয়েছে।

এদিকে শাহেদের ভয়ে এতদিন যারা তার প্রতারণা ও নির্যাতনের শিকার হয়েও মুখ খোলার সাহস পাননি, তাদের আইন সহায়তা একটি হটলাইন নম্বর ও ই-মেইল চালু করছে র‌্যাব। গত শুক্রবার এ সেবা চালু করা হয়। এরপর থেকে সেখানে একের পর এক অভিযোগ আসতে থাকে। গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত র‌্যাবের চালু করা ওই বিশেষ হটলাইনে অভিযোগ এসেছে ১৩০টি এবং ই-মেইলে অভিযোগ জমা পড়েছে ২০টি।

গত ৬ ও ৭ জুলাই নানা অনিয়মের অভিযোগে রিজেন্ট হাসপাতালের উত্তরা ও মিরপুর শাখায় এবং রিজেন্ট গ্রুপের অফিসে অভিযান চালায় র‌্যাব। এ সময় করোনার নমুনা পরীক্ষার ভুয়া রিপোর্ট, রোগীদের হয়রানি, অতিরিক্ত অর্থ আদায়, দুর্নীতি, হাসপাতালের লাইসেন্স নবায়ন না করাসহ অনেক অনিয়মের প্রমাণ পাওয়া যায়। এর পর রিজেন্ট হাসপাতালের উত্তরা ও মিরপুর শাখা সিলগালা করে দেওয়া হয়। পাশাপাশি রিজেন্ট হাসপাতাল ও রিজেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান মো. শাহেদকে প্রধান আসামি করে অন্তত ১৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা করে র‌্যাব।

এ ঘটনার পর থেকে প্রতিষ্ঠানটির জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত অনেককে গ্রেপ্তার করা হলেও পালিয়ে যান মো. শাহেদ। পরে ঘটনার প্রায় ৯ দিন পর গত ১৫ জুলাই সাতক্ষীরার দেবহাটা সীমান্ত থেকে তাকে অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। পরে ১৬ জুলাই তাকে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ জসিমের আদালতে তোলা হলে বিচারক অধিকতর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তার ১০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

এদিকে শাহেদের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া প্রতারণা মামলাটির তদন্তভার র‌্যাবের হাতে দেওয়া হয়েছে। এর আগে এ মামলার তদন্ত করছিলো ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।