নতুন ফ্ল্যাট পেল ৬০০ জলবায়ু উদ্বাস্তু পরিবার

শেখ হাসিনা আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় জলবায়ু উদ্বাস্তুদের জন্য কক্সবাজারে নির্মাণ করা হচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় জলবায়ু পুনর্বাসন আশ্রয়কেন্দ্র। সেখানে আজ বৃহস্পতিবার প্রথম ধাপে ৬০০ জলবায়ু উদ্বাস্তু পরিবারের কাছে ফ্ল্যাটের চাবি হস্তান্তর করা হয়েছে। গণভবন থেকে অনলাইনে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এ চাবি হস্তান্তর অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরে উপকারভোগীদের কাছে ফ্ল্যাটের চাবি হস্তান্তর করা হয়।

জানা যায়, শেখ হাসিনা আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় জলবায়ু উদ্বাস্তুদের জন্য কক্সবাজার সদরের খুরুশকুল ইউনিয়নের বাঁকখালী নদীর তীরে নির্মাণ করা হচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় জলবায়ু পুনর্বাসন আশ্রয়কেন্দ্র। ইতোমধ্যে সেখানে ৫তলা বিশিষ্ট ২০টি ভবন নির্মাণের কাজ শেষ হয়েছে। তাই প্রথম ধাপে ৬০০ জলবায়ু উদ্বাস্তু পরিবারকে ফ্ল্যাটের চাবি হস্তান্তর করা হয়।

পর্যায়ক্রমে এই আশ্রয়কেন্দ্রে মোট ১৩৯টি ভবন নির্মাণ করা হবে। যেখানে ফ্ল্যাট পাবেন কক্সবাজার বিমানবন্দর সম্প্রসারণের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত মোট ৪ হাজার ৪৪৮টি জলবায়ু উদ্বাস্তু পরিবার। ১ হাজার ১ টাকার নামমাত্র মূল্যে তাদের এসব ফ্ল্যাট দেওয়া হচ্ছে।

১৯৯১ সালে প্রলয়ংকারী ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয় কক্সবাজারের উপকূলীয় এলাকা। সমুদ্রে বিলীন হয়ে যায় মহেশখালী-কুতুবদিয়াসহ উপকূলীয় বিশাল এলাকা। এর ফলে ওইসব এলাকায় বসবাসকারী হাজার হাজার মানুষ তখন গৃহহারা হয়ে কক্সবাজার শহরের বিমানবন্দরের পশ্চিমে বালিয়াড়ী ও ঝাউবাগান এলাকায় আশ্রয় নেয়। যা পরে কক্সবাজার পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডে রূপান্তরিত হয়।

এদিকে পর্যটন শিল্পের বিকাশ ও ভৌগোলিক গুরুত্ব বিবেচনায় কক্সবাজার বিমানবন্দরকে সম্প্রসারিত করে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করার কাজ চলছে। তাই পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের কুতুবদিয়া পাড়া, সমিতি পাড়া ও নাজিরাটেক এলাকার বিপুল পরিমাণ জমি অধিগ্রহণ করে সরকার। ফলে ওইসব জমিতে বসবাসকারী প্রায় সাড়ে ৪ হাজার জলবায়ু উদ্বাস্তু পরিবার ফের গৃহহীন হওয়ার ঝুঁকিতে পড়ে। পরে ২০১১ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কক্সবাজারের এক জনসভায় জলবায়ু উদ্বাস্তুদের পুনর্বাসনের নির্দেশনা দেন। যার প্রেক্ষিতে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ‘শেখ হাসিনা আশ্রয়ণ প্রকল্প’ গ্রহণ করা হয়।

সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে এবং সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে ১৮০০ কোটি টাকা ব্যয়ে বাঁকখালী নদীর তীরে ২৫৩ একর জমির ওপর গড়ে তোলা হচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় জলবায়ু পুনর্বাসন আশ্রয়কেন্দ্রটি। যাতে থাকবে ১৩৯টি ভবন, ১৪টি খেলার মাঠ, সবুজ জায়গা, মসজিদ, মন্দির, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়, পুলিশ ও ফায়ার স্টেশন, তিনটি পুকুর, নদীতে দুটি জেটি, দুটি বিদ্যুতের সাবস্টেশন। জলবায়ু উদ্বাস্তুদের জন প্রতিটি ভবনে থাকবে ৪৫৬ বর্গফুট আয়তনের ৩২টি করে ফ্ল্যাট। প্রতিটি ফ্ল্যাটে পানি, বিদ্যুৎ ও গ্যাস সিলিন্ডারের সুবিধা থাকবে। থাকবে সৌর বিদ্যুতের প্যানেলও।

এছাড়া ২০ কিলোমিটার অভ্যন্তরীণ রাস্তা, ৩৬ কিলোমিটার ড্রেনেজ ব্যবস্থা, বর্জ্য পরিশোধন ও নিষ্কাশন ব্যবস্থাপনা, তীর রক্ষা বাঁধ, ছোট সেতু এবং পুকুর-খালও থাকবে।

ইতোমধ্যে ২০টি ভবন নির্মাণের কাজ শেষ হয়েছে। যার প্রত্যেকটি ভবনের নাম রেখেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই। নামগুলো হলো- দোঁলনচাপা, কেওড়া, রজনীগন্ধা, গন্ধরাজ, হাসনাহেনা, প্রবাল, সোপান, মনখালী, শনখালী, বাঁকখালী, কামিনী, গুলমোহর, গোলাপ, সোনালী, নীলাম্বরী, ঝিনুক, কোরাল, মুক্তা, ইনানী ও সাম্পান।