আবার কি ভিক্ষাবৃত্তিতে নামতে হবে তাকে!

এক সময় ভিক্ষাবৃত্তির মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করতেন রোগাক্রান্ত বৃদ্ধ আলী হোসেন (৮০)। সহায়-সম্বল বলতে নেই কিছুই। ভিক্ষাবৃত্তির মাধ্যমে যা আয় হতো তা দিয়েই চলতো পাঁচ সদস্যের সংসার। গত দুই বছর আগে সঞ্চয়ের কিছু অর্থ দিয়ে ভাড়া নিয়েছিলেন একটি টং দোকান। কিন্তু নভেল করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে দোকান বন্ধ থাকায় এক মাস এর ভাড়া দিতে পারেননি। এতেই ক্ষিপ্ত হয়ে তার তিল তিল করে গড়ে তোলা দোকানটি মালামালসহ বিক্রি করে দিয়েছেন এর মালিক এক স্কুল শিক্ষক।

বৃদ্ধ আলী হোসেন

সম্প্রতি এ ঘটনাটি ঘটেছে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার তেলিহাটি ইউনিয়নের মুলাইদ গ্রামের আমতলী এলাকায়। এ ঘটনায় ওই স্কুল শিক্ষক ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে বাদী হয়ে শ্রীপুর মডেল থানায় একটি অভিযোগও দায়ের করেছেন বৃদ্ধ আলী হোসেন।

জানা যায়, অভিযুক্ত স্কুল শিক্ষক মুজাহিদুল ইসলাম মল্লিকের বাড়ি ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার বিরুনিয়া গ্রামে। তিনি বর্তমানে স্থানীয় সোনারবাংলা উচ্চ বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক হিসেবে কর্মরত আছেন। তার স্ত্রী হেলেনা মল্লিকের বাড়ি গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার মুলাইদ গ্রামে। মুজাহিদুল তার পরিবার নিয়ে শ্বশুরবাড়িতেই থাকেন। এখানে তিনি একটি বাড়ি গড়ে তুলেছেন। পাশাপাশি ওই গ্রামের আমতলী এলাকায় একটি শিল্প কারখানার সামনে তার কিছু জায়গা রয়েছে।

বৃদ্ধ আলী হোসেনের অভিযোগ, গত দুই বছর আগে তিনি ১ হাজার ৫০০ টাকা মাসিক ভাড়ায় মুজাহিদুলে কাছ থেকে আমতলী মোড়ের শিল্প কারখানার সামনের কয়েক ফুট জায়গা ভাড়া নেন। এরপর সেখানে নিজের সঞ্চয়ের অর্থ দিয়ে গড়ে তোলেন একটি টং দোকান। ভিক্ষাবৃত্তি ছাড়ার পর এই ক্ষুদ্র দোকানটিই ছিলো তার পরিবারের একমাত্র আয়ের উৎস।

শ্রীপুর মডেল থানা- ফাইল ছবি

কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে লকডাউনে কয়েক মাস তিনি দোকান পরিচালনা করতে পারেননি। এতে তিন মাসে ৪ হাজার ৫০০ টাকা ভাড়া বাকি পড়ে। এদিকে দোকানের মালিক মুজাহিদুল ও তার স্ত্রী হেলেনা ভাড়ার জন্য বার বার চাপ দিতে থাকে। হুমকি দিতে থাকে দোকান ছেড়ে দেওয়ার। এমতাবস্থায় কয়েকদিন আগে তিনি দুই মাসের ৩ হাজার টাকা দোকান ভাড়া পরিশোধও করেন। বাকি দেড় হাজার টাকা পরিশোধের জন্য তাদের কাছে কিছুদিন সময় চান। কিন্তু তারা তাকে সময় না দিয়ে সম্প্রতি মালামালসহই দোকানটি বিক্রি করে দেন স্থানীয় শহীদ মিয়া নামের এক ব্যক্তির কাছে।

দোকানটি তিল তিল করে গড়ে তুলতে ৭০ হাজার টাকা খরচ হয়েছিল জানিয়ে ওই বৃদ্ধ আরো বলেন, মাত্র দেড় হাজার টাকার জন্য তার সর্বস্ব কেড়ে নিয়েছেন স্কুল শিক্ষক মুজাহিদুল ও তার স্ত্রী হেলেনা। এখন তার আর কিছুই নেই। বেঁচে থাকতে তাকে হয়তো ফের ভিক্ষাবৃত্তির কাজে নামতে হতে পারে।

এ বিষয়ে তেলহাটি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য মোবারক হোসেন বলেন, করোনাভাইরাসের এ সংকটকালে মাত্র দেড় হাজার টাকার জন্য এক অসহায় বৃদ্ধের দোকান বিক্রি করে দেওয়া সত্যিই অমানবিক কাজ। তিনি ওই স্কুল শিক্ষককে টাকা পরিশোধের সাপেক্ষে দোকানের তালা খুলে দিতেও অনুরোধ করেছিলেন। কিন্তু স্কুল শিক্ষক মুজাহিদুল এতটাই অমানবিক যে, তিনি তা শোনেননি। বৃদ্ধের দোকানটি মালামালসহই বিক্রি করে দিয়েছেন।

অভিযুক্ত স্কুল শিক্ষক মুজাহিদুলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, তার জমি নিয়ে সমস্যা ছিলো। তাই তিনি ওই বৃদ্ধকে উচ্ছেদ করেছেন। এখন কিছু স্থানীয় ব্যক্তির ইন্ধনে হয়তো তিনি ঘটনা ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করছেন।

ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে শ্রীপুর মডেল থানার সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) মাঈনউদ্দিন বলেন, বৃদ্ধের অভিযোগের প্রেক্ষিতে তিনি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। দোকান বিক্রি করে দেওয়ার সত্যতাও পেয়েছেন। যা এই করোনাকালে খুবই অমানবিক দৃষ্টান্ত। তাই ওই স্কুল শিক্ষককে বুঝিয়ে বলা হয়েছে, তিনি যাতে বৃদ্ধের সবকিছু বুঝিয়ে দেন। তা না হলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।