আপনি পড়ছেন

ইসলামী শরিয়তের দৃষ্টিতে অপবিত্রতা দুই প্রকার। মানসিক এবং শারীরিক। কুফর থেকে ইসলামে প্রবেশের মাধ্যমে মানসিক অপবিত্রতা দূর হয়। একইভাবে শারীরিক অপবিত্রতা থেকে পবিত্র হওয়ারও নির্ধারিত পদ্ধতি ইসলাম সুস্পষ্ট করে দিয়েছে। তবে ইসলাম শারীরিক অপবিত্রতাকে দুটি শ্রেণিতে ভাগ করেছে।

bath

যে ধরনের অপবিত্রতা থেকে অজু করেই পবিত্র হওয়া যায়, গোসল আবশ্যক নয় এ ধরনের অপবিত্রতাকে নাজাসাতে খফিফাহ বলা হয়। আর যে ধরনের অপবিত্রতা থেকে গোসল ছাড়া পবিত্র হওয়ার উপায় নেই, ফকিহদের পরিভাষায় তাকে নাজাসাতে গালিজাহ বলে।

পেশাব-পায়খানা ইত্যাদি জাতীয় অপবিত্রতা থেকে পবিত্র হওয়ার জন্য অজু করে নেওয়াই যথেষ্ট। কিন্তু পুরুষ-নারীর এমন কিছু গোপন বিষয় আছে, যেসব কারণে অপবিত্র হলে গোসল না করা পর্যন্ত শরীর পবিত্র হয় না। এ ধরনের অপবিত্রতা থেকে পবিত্র হওয়ার জন্য গোসল করা ফরজ।

প্রশ্ন হলো, ফরজ গোসল কি দেরি করা করা যায় নাকি সঙ্গে সঙ্গেই করে নিতে হয়? গোসল ফরজ অবস্থায় অনেকের মনেই এক ধরনের পাপবোধ কাজ করতে থাকে। এমন কথাও শোনা যায়, যতক্ষণ ফরজ গোসল করা না হয়, ততক্ষণ পর্যন্ত আমলনামায় ফেরেশতারা গোনাহ লিখতে থাকে। কোনো কোনো সুফি এ কথাও বলেছেন, ফরজ গোসল অবস্থায় মাটিতে পা রাখলে মাটি অভিশাপ দিতে থাকে। আসুন জেনে নিই, এ বিষলে শয়িরত কী বলে?

১. ফরজ গোসল যথাসম্ভব দ্রুত করে নেওয়া মুসতাহাব বা ভালো, ওয়াজিব বা আবশ্যক নয়।

২. ফরজ গোসল এত দেরি করে করা উচিত নয় যে, পরবর্তী ওয়াক্তের নামাজ কাজা হয়ে যায়। নামাজ কাজা করা নিঃসন্দেহে কবিরা গোনাহ। ফরজ গোসল করতে না পারার জন্য নামাজ কাজা করার অজুহাত শরিয়তে গ্রহণযোগ্য নয়।

৩. ফরজ গোসল দেরি করেও করা যায়। তবে এক্ষেত্রে সুন্নাত হলো, ভালো করে অজু করে নেওয়া। হজরত আয়শা (রা.) বলেন, ‘রাসুল (সা.) এর গোসল ফরজ হলে তিনি যদি পরে গোসল করতে চাইতেন, কিংবা কিছু খেতে অথবা ঘুমাতে চাইতেন, তাহলে নামাজের অজুর মত অজু করে নিতেন। মুসলিম শরিফ, হাদিস নম্বর ৩০৫।

al quran

৪. গোসল ফরজ অবস্থায় মনে মনে যে পাপবোধ আসে তা ঠিক নয়। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, ‘একবার আমার গোসল ফরজ হলে রাসুল (সা.) আমাকে ডেকে তার সঙ্গে খেতে বললেন। তিনি আমার হাঁত ধরতে চাইলেন। আমি হাত গুঁটিয়ে নিয়ে বললাম, হে আল্লাহর রাসুল (সা.)! আমি তো অপবিত্র। রাসুল (সা.) বললেন, মুমিন কখনো অপবিত্র হয় না।’ তিরমিজি শরিফ, হাদিস নম্বর ১২১। হাদিসটি বুখারি ও মুসলিম শরিফেও বর্ণিত হয়েছে।

৫. অপবিত্র অবস্থায় থাকার সময়টুকু গোনাহ লেখা হয়, ওই সময় মাটিতে পা রাখলে মাটি অভিশাপ দেয় এ ধরনের কথা প্রসিদ্ধ হাদিসের কিতাবগুলোতে পাওয়া যায় না।

৬. অধিকাংশ ফকিহ মনে করেন, বেশিক্ষণ অপবিত্র অবস্থায় থাকা ঠিক নয়। কেননা যেকোনো অবস্থাতেই মানুষের মৃত্যু হতে পারে। কিন্তু গোসল ফরজ অবস্থায় মৃত্যু হলে ভয়ংকর আজাব বা কঠিন শাস্তি হবে এমন কোনো সুস্পষ্ট কথা কোরআন-সুন্নাহয় পাওয়া যায় না।

৭. তাৎক্ষনিক গোসল কিংবা অজু করতে না পারলে তায়াম্মুম করে পবিত্রতা অর্জনের পরামর্শ দিয়েছেন কোনো কোনো ফকিহ।

৮. পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেছেন, ‘ইন্নাল্লাহা ইউহিব্বুত তাওয়াবিনা ওয়াইউহিববুল মুতাতাহরিন। নিশ্চয় আল্লাহ তওবাকারী এবং পবিত্র বান্দাদের ভালোবাসেন। যত দ্রুত পবিত্র হওয়া যাবে, তত দ্রুত আল্লাহর ভালোবাসা পাওয়া যাবে।

বিস্তারিত জানার জন্য দেখুন- পাকিস্তানের প্রখ্যাত ইসলামী গবেষক মাওলানা ইউসুফ লুধিয়ানাভীর আপকে সাওয়ালকা জওয়াব গ্রন্থের ১ম খন্ডের গোসলের আলোচনা এবং সুনানে তিরমিজির কিতাবুত তাহারাতের নাপাকির গোসল অধ্যায়।

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর