টিকটক-উইচ্যাট বন্ধে ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশ

চীনের মাইক্রো ভিডিও শেয়ারিং অ্যাপ টিকটক এবং ম্যাসেজিং অ্যাপ উইচ্যাট বন্ধে এবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বড় ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছেন। টিকটক বন্ধে একটি নির্বাহী আদেশে সই করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। পাশাপাশি উইচ্যাট বন্ধেও একটি নির্বাহী আদেশ দিয়েছেন তিনি। জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থেই এ ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানানো হয়।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প

ট্রাম্প প্রশাসনের অভিযোগ, এসব অ্যাপ চীন সরকারের সঙ্গে তথ্য শেয়ার করে। এগুলোর মাধ্যমে মার্কিন জনগণের ওপর ‘গোয়েন্দাগিরি’ করা হচ্ছে। তবে সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলোর পক্ষ থেকে এ ধরনের অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। চীনা এই দুটি অ্যাপকে ‘আমেরিকার জন্য হুমকি, হিসেবেও মন্তব্য করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।

বিবিসি বলছে, টিকটকের স্বত্বাধিকারী বাইটড্যান্সের সঙ্গে লেনদেন নিষিদ্ধ সংক্রান্ত একটি নির্বাহী আদেশে বৃহস্পতিবার রাতে সই করেছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। সেইসঙ্গে উইচ্যাটের স্বত্বাধিকারী ট্যানসেন্টের সঙ্গে লেনদেন বন্ধেও একটি আদেশ দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।

টিকটক অ্যাপ

ডোনাল্ড ট্রাম্পের দেওয়া নির্বাহী আদেশে বলা হয়, টিকটক ব্যবহারকারীদের ব্যাপারে যেসব তথ্য সংগ্রহ করা হয় তা, আমেরিকার সরকারি কর্মকর্তাদের ওপর চীনকে নজরদারি করতে সুযোগ করে দেবে। তাছাড়া এর মাধ্যমে মানুষের সঙ্গে প্রতারণা এবং কর্পোরেট কেলেংকারির জন্য তথ্য হাতিয়ে নেওয়ার সুযোগ তৈরি হবে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট এমন ইঙ্গিতও দেন যে, হংকংয়ে চীনের ‘কালো আইনের’ বিরুদ্ধে যে বিক্ষোভ হয় এবং দেশটির সংখ্যালঘু মুসলিম সম্প্রদায় উইঘুরদের ওপর দমন-পীড়নের ঘটনা প্রকাশে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করে টিকটক।

প্রসঙ্গত, একদিন আগেই মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও বলেন, চীনা প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ও অ্যাপের বিরুদ্ধে আরো ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। তার এ ঘোষণার পরদিনই নির্বাহী আদেশে সই করলেন ট্রাম্প।

উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্র এর আগেও দুটি চীনা টেক জায়ান্টের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়। গত বছর হুয়াওয়ে ও জেটিই’র সঙ্গে চুক্তি বাতিল করে ট্রাম্প প্রশাসন।

প্রসঙ্গত, ডোনাল্ড ট্রাম্প ২০১৭ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই ওয়াশিংটন-বেইজিং সম্পর্কে উত্তেজনা বিরাজ করছে। দিন যত অতিবাহিত হয়েছে, সেই টানাপোড়েন আরো বেড়েছে। বাণিজ্যযুদ্ধের মাধ্যমে প্রকাশ্যে আসা কূটনৈতিক টানাপোড়েন সর্বশেষ কনস্যুলেট অফিস বন্ধ ঘোষণা পর্যন্ত এসে ঠেকেছে।

এ ছাড়া দক্ষিণ চীন সাগর নিয়ে দুই দেশের মধ্যকার পুরনো উত্তেজনা তো আছেই। সেইসঙ্গে তাইওয়ান ও হংকং ইস্যুতেও সাম্প্রতিক সময়ে উত্তেজনা বেড়েছে চীন-মার্কিন সম্পর্কে। আর সর্বশেষ বর্তমান বিশ্ব মহামারি করোনাভাইরাস নিয়েও মার্কিন প্রেসিডেন্ট বার বার চীনকে অভিযুক্ত করেছেন। যদিও চীন সে অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, আসছে নভেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। আর এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ডোনাল্ড ট্রাম্প চীন বিরোধিতা বাড়িয়ে দিয়েছেন, যাতে মার্কিনিদের মন জয় করতে পারেন। তারা বলছেন, নির্বাচনের সময় যতই ঘনিয়ে আসবে, ট্রাম্প প্রশাসনের এই চীনবিরোধী প্রচেষ্টা আরো বাড়তে পারে।