এবার ‘টার্গেট’ সেই ফাওজিয়া!

সেই ২০০১ সালে শুরু। কত মায়ের কোল যে খালি হয়েছে, কিংবা কত সন্তান যে তার মা অথবা বাবাকে হারিয়েছে এবং কত মানুষ আহত হয়েছে- তার ইয়ত্তা নেই। অসংখ্য মানুষ উদ্বাস্তু হয়েছে। কিন্তু আর কত! তাই সাম্প্রতিক সময়ে প্রায় দুই দশকের আফগান ‘গৃহযুদ্ধে’র অবসান ঘটানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়। ইতোমধ্যে চুক্তি সই হয়েছে এবং আস্তে আস্তে চলছে তার বাস্তবায়ন।

ফাওজিয়া কুফি

এই শান্তি প্রক্রিয়ায় অন্যদের পাশে আছেন একমাত্র নারী ফাওজিয়া কুফি। কিন্তু তাকেই এবার টার্গেট করা হয়েছে। তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে গুলি চালিয়েছে অজ্ঞাত সন্ত্রাসীরা। যদিও তিনি এ যাত্রায় বেঁচে গেছেন, তবে তার ডান হাতে গুলি লেগেছে। বর্তমানে তিনি শঙ্কামুক্ত বলে জানিয়েছে ব্রিটিশ গণমাধ্যম গার্ডিয়ান।

আফগান প্রশাসনের সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, শান্তি প্রক্রিয়ায় কুফির যে ভূমিকা, সে কারণেই তার ওপর হামলা চালানো হয়েছে। তবে এই হামলার জন্য যাদের দিকে প্রথম আঙুল তোলার কথা- সেই তালেবান হামলার দায় নেয়নি।

তালেবান প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনায় ফাওজিয়া কুফি (পেছনে ওড়না পরিহিত)

জানা গেছে, আফগানিস্তানের উত্তরে পরওয়ান প্রদেশ থেকে এক বৈঠক সেরে শুক্রবার বোনের সঙ্গে গাড়িতে করে ফিরছিলেন ফাওজিয়া কুফি। আফগান রাজধানী কাবুলের কাছাকাছি পৌঁছলে তাকে লক্ষ্য করে গুলি চালায় আততায়ীরা। এ সময় তার ডান হাতে গুলি লাগলেও প্রাণে বেঁচে যান তিনি।

সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, চলমান শান্তি প্রক্রিয়াকে নস্যাৎ করতেই এ ধরনের হামলা চালানো হয়েছে। দেশটিতে নিযুক্ত আন্তর্জাতিক মানবাধিকার কমিশনের প্রতিনিধি এবং শান্তি প্রক্রিয়ায় সমর্থনকারী সকল পক্ষ এই হামলার সমালোচনা করেছে। তবে এ ধরনের কাপুরুষোচিত হামলার পরও শান্তি স্থাপনের প্রক্রিয়া থেকে সরে আসবেন না বলে জানিয়েছেন ফাওজিয়া।

প্রসঙ্গত, প্রায় দুই দশকের আফগান সংঘাত থামাতে ফাওজিয়া কুফি ও অন্যরা তালেবান ও দেশটির সরকারের মধ্যে মধ্যস্থতা করছিলেন। তাদের উদ্দেশ্য ছিল, উভয় পক্ষকে আলোচনার টেবিলে বসিয়ে স্থায়ী শান্তি স্থাপন করা। তাদের প্রচেষ্টায় গেল ফেব্রুয়ারিতে এ নিয়ে উভয়পক্ষের মধ্যে একটি ঐতিহাসিক শান্তি চুক্তিও সই হয়েছে। শান্তি প্রক্রিয়ার এই দলের একমাত্র নারী সদস্য হলেন কুফি।

ওই চুক্তির প্রাথমিক শর্তে বলা হয়েছে, আফগান সরকার পাঁচ হাজার তালেবান যোদ্ধাকে মুক্তি দেবে। ইতোমধ্যে সেই প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এমনকি গত বৃহস্পতিবারও ৪০০ তালেবান যোদ্ধাকে মুক্তি দিয়েছে দেশটির সরকার। এর পরদিনই কুফির ওপর হামলার ঘটনা ঘটলো।

তবে তালেবানের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এই হামলার সঙ্গে তাদের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। এ ছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে আফগানিস্তানে নিজেদের শক্তির জানান দেওয়া আইএস সন্ত্রাসী গোষ্ঠী কিংবা অন্য কোনো গ্রুপ এখনও এর দায় স্বীকার করেনি।