ভারতকে চাপে রাখার ‘কৌশলে’ চীন-পাকিস্তান

সীমান্ত নিয়ে চীন ও পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের দ্বন্দ্ব দীর্ঘদিনের। সাম্প্রতিক সময়ে কাশ্মির ইস্যুতে পাকিস্তান এবং লাদাখ সীমান্তে চীনের সঙ্গে দেশটির উত্তেজনা বেড়েছে। গেল জুন মাসের মাঝামাঝি পূর্ব লাদাখ সীমান্তে চীনা সেনাদের হামলায় অন্তত ২০ ভারতীয় সেনা নিহত হয়। তার পর দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধাবস্থা তৈরি হয়। সেই উত্তেজনা খানিকটা প্রশমিত হলেও রেশ পুরোপুরি কাটেনি।

শাহ মেহমুদ কোরেশি এবং ওয়াং ই (ডানে)

অন্যদিকে, কাশ্মির সীমান্তে পাক-ভারত উত্তেজনা দীর্ঘদিনের পুরনো। তবে গত বছরের ৫ আগস্ট কাশ্মিরের বিশেষ মর্যাদা কেড়ে নেয় ভারত। তখন থেকেই দুই দেশের মধ্যকার উত্তেজনায় নতুন মাত্রা যুক্ত হয়েছে। উভয় দেশ সীমান্তে অতিরিক্ত সেনা মোতায়েন করে রেখেছে।

এই অবস্থার মধ্যেই গতকাল শুক্রবার চীন ও পাকিস্তানের মধ্যে শুরু হয় দ্বিতীয় বার্ষিক কৌশলগত আলোচনা। চীনের হেনান দ্বীপের রিসোর্টে আয়োজিত বৈঠকে অংশ নেন পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মেহমুদ কোরেশি এবং চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই। বৈঠকে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার পাশাপাশি কাশ্মিরসহ নানা আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক প্রসঙ্গ নিয়ে আলোচনা হয়।

কাশ্মির সীমান্ত

তবে ভারতীয় গণমাধ্যম বলছে, দেশটিকে কোণঠাসা করার পরিকল্পনার অংশ হিসেবেই ওই বৈঠকে কাশ্মির ইস্যুও উত্থাপন করা হয়েছে। কারণ ভারতের দাবি, কাশ্মির ইস্যু তাদের অভ্যন্তরীণ।

চীনের সরকারি সংবাদ সংস্থার বরাত দিয়ে আনন্দবাজারের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বৈঠকের বড় অংশ জুড়ে ছিল চীন ও পাকিস্তানের মধ্যকার অর্থনৈতিক করিডর (সিপিইসি) প্রসঙ্গ। দুই দিনের বৈঠক শেষে আজ শনিবার একটি যৌথ বিবৃতি দিয়েছেন কোরেশি ও ওয়াং ই।

এতে বলা হয়েছে, দুই পক্ষ শান্তিপূর্ণ, স্থিতিশীল, সহযোগিতাপূর্ণ এবং সমৃদ্ধশালী দক্ষিণ এশিয়া গড়ার বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছেছে। এ ছাড়া আলোচনার মাধ্যমে পারস্পরিক সম্মান ও সমতার ভিত্তিতে আঞ্চলিক বিরোধ নিষ্পত্তির বিষয়েও একমত পোষণ করেছে দুই দেশ।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তিব্বত ও জিনজিয়াংয়ের পাশাপাশি হংকং ও তাইওয়ান নিয়ে চীনের সাম্প্রতিক কঠোর অবস্থানকেও যৌথ বিবৃতিতে সমর্থন জানিয়েছেন পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

অন্যদিকে, যৌথ বিবৃতিতে স্থান পেয়েছে কাশ্মির ইস্যু। এই ইস্যুতে চীনের অবস্থান ব্যাখ্যা করতে গিয়ে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই জাতিসংঘ সনদ এবং নিরাপত্তা পরিষদে গৃহীত প্রস্তাবের কথা উল্লেখ করেছেন। তিনি জানান, জম্মু ও কাশ্মিরের পরিস্থিতি এবং তা নিয়ে পাকিস্তানের অবস্থান, উদ্বেগ ও সাম্প্রতিক জরুরি বিষয়াদি সম্পর্কে বেইজিংকে অবহিত করেছে ইসলামাবাদ।

এ ছাড়া চীন ও পাকিস্তানের ওই যৌথ বিবৃতিতে আফগান শান্তি প্রক্রিয়ায় দুই দেশের সহযোগিতার প্রসঙ্গও উল্লেখ করা হয়েছে।

ভারতীয় কূটনীতিকদের একাংশের বরাত দিয়ে আনন্দবাজার বলছে, লাদাখ দিয়ে সাম্প্রতিক উত্তেজনার আবহ যখন এখনও বিরাজ করছে, তখন কাশ্মির পরিস্থিতি নিয়ে ইসলামাবাদ ও বেইজিংয়ের যৌথ বিবৃতি কার্যত নয়াদিল্লিকে চাপে রাখারই কৌশল। এ ছাড়া আফগান শান্তি প্রক্রিয়ায় চীন-পাকিস্তানের সহযোগিতার ঘোষণাও স্পষ্টতই ভারতের স্বার্থবিরোধী।