ভারতীয় আদালত: করোনায় বলির পাঁঠা তাবলিগ জামাত

ভারতে করোনার সংক্রমণ ছড়ানোর জন্য দেশটির রাজধানী দিল্লির নিজামুদ্দিনে অনুষ্ঠিত তাবলিগ জামাতের মারকাজে অংশ নেওয়া বিদেশি দায়ী করেছে দেশটির কর্তৃপক্ষ। তবে এর মাধ্যমে ওই বিদেশি মুসল্লিদের ‘বলির পাঁঠা’ করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন দেশটির একটি আদালত। শুক্রবার এ সংক্রান্ত এক মামলার শুনানিতে বোম্বে হাইকোর্ট এমন মন্তব্য করেন। করোনা সংক্রমণ ছড়ানোর দায় সংখ্যালঘুদের ওপর চাপানো হয়েছে বলেও মনে করে আদালত।

দিল্লিতে তাবলীগ জামাতে অংশ নেওয়াদের একাংশ

ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভি বলছে, এদিন আদালত তাবলিগ জামাতের ২৯ বিদেশি নাগরিকের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা খারিজ করে দেন। সেইসঙ্গে রায়ের পর্যবেক্ষণে বোম্বে হাইকোর্ট এমন মন্তব্য করেন।

প্রসঙ্গত, গত মার্চে ভারতে করোনা সংক্রমণ বাড়তে শুরু করে। ওই সময় নিজামুদ্দিনে তবলিগ জামাতের মারকাজ চলছিল। এ সময় ভারত সরকার দেশটিতে লকডাউন ঘোষণা ও অন্যান্য বিধি-নিষেধ জারি করে। মারকাজ আয়োজনকারীদের দাবি, সরকারি ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে তারা সমাবেশের কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করেন। কিন্তু তার পরও করোনার সংক্রমণের জন্য তাবলিগের জমায়েতকে দায়ী করা হয়।

বোম্বে হাইকোর্ট

ক্ষমতাসীন দল বিজেপির এমন অভিযোগ ও পদক্ষেপের সঙ্গে তাল মেলায় দেশটির উগ্র জাতীয়তাবাদীরা। তাবলিগ জামাত কর্তৃপক্ষ এমনকি দেশটির মুসলিম সম্প্রদায়কে নিয়ে তারা নানা প্রপাগান্ডা চালাতে থাকে। অন্যদিকে, বেশ কিছু বিদেশি মুসল্লিকে আটক করার পাশাপাশি জেল-জরিমানা করা হয়। সেইসঙ্গে অনেকের বিরুদ্ধে দেওয়া হয় নিষেধাজ্ঞা, যাতে পরবর্তীতে তারা আর ভারতে প্রবেশ করতে না পারে।

এদিন শুনানিতে বোম্বে হাইকোর্ট বলেন, প্রিন্ট ও ইলেকট্রিক মাধ্যমে এই বিদেশিদের বিরুদ্ধে শুধু শুধু ট্রায়াল চলেছে। রাজনৈতিক দল ও সরকার এই সংকটে অনুঘটক হিসেবে কাজ করেছে। আর এভাবে বিদেশিদের বলির পাঁঠা করা হয়েছে।

আদালত আরো বলেন, বিগত অর্ধ শতাব্দির বেশি সময় ধরে দিল্লির ওই মারকাজ অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। ফলে এই জমায়েত নিয়ে অপপ্রচার চালানোর চেষ্টা অযৌক্তিক। ভারত সরকারের যাবতীয় নিয়ম-কানুন মেনেই তারা মারকাজে অংশ নিয়েছেন। ধর্মপ্রচার নয়, বরং ইসলামের রীতিনীতির সাক্ষী হতেই যে তারা মসজিদে থাকছেন- তা স্থানীয় প্রশাসনকে জানিয়েছিলেন তারা।

কিন্তু তার পর ওইসব বিদেশি নাগরিকের বিরুদ্ধে যে অপপ্রচার চালানো হয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে যে পদক্ষেপ করা হয়েছে, তা নিয়ে অনুশোচনার সময় এসেছে। সরকারের পদক্ষেপে যে ক্ষত তৈরি হয়েছে, অবিলম্বে তাতে প্রলেপ দেয়া দরকার, বলেন আদালত।