আপনি পড়ছেন

ইসলামী বর্ষপঞ্জির প্রথম মাস মহররম। আরবি মহররম শব্দের অর্থ সম্মানিত বা তাৎপর্যপূর্ণ। এ মাসে অসংখ্য ঐতিহাসিক তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা ঘটেছে- ফলে এ মাসের নাম মহররম রাখা হয়েছে। জাহেলি যুগেও আরবরা এ মাসকে বিশেষ মর্যাদার চোখে দেখত। যুদ্ধবিক্ষুদ্ধ আরবরা চারটি মাসে রক্ত ঝরানো হারাম মনে করত। এর মধ্যে মহররম মাস একটি। আসুন কোরআন-সুন্নাহর আলোকে মহররম মাসের তাৎপর্য সম্পর্কে জেনে নিই।

muharram

হিজরি বর্ষের প্রথম মাস

হজরত ওমর (রা.) এর সময় ইসলামী সাম্রাজ্যের ব্যাপক বিস্তার ঘটে। তখন প্রশাসনিক সুবিধার জন্য ওমর (রা.) মুসলমানদের জন্য হিজরি সন শুরু করেন। শুরুতে বিভিন্ন প্রস্তাব এসেছিলো। কেউ বলেছিলো, রাসুল (সা.) এর জন্মের মাস থেকে হিজরি সন গণণা শুরু হবে। আবার কেউ বলেছিলো রাসুল (সা.) এর ইন্তেকাল কিংবা তার নবুওয়াত পাওয়ার দিন থেকে নয়া সালের গণনা শুরু হোক।

ওমর (রা.) প্রস্তাব করলেন, রাসুল (সা.) এর হিজরতের দিন থেকে এ মাসের গণনা শুরু হোক। সবার সম্মতিক্রমে ওমর (রা.) এর মতটি গৃহীত হয়। এভাবেই মহররম হিজরি বর্ষের প্রথম মাসের মর্যাদা লাভ করে।

নিষিদ্ধ মাসের অন্তর্ভূক্ত

মহররম মাসের অনত্যমত তাৎপর্য হলো এটি নিষিদ্ধ মাস। এ মাসের আরবরা যুদ্ধ এবং রক্তপাত থেকে বিরত থাকত। নিষিদ্ধ মাস মোট চারটি। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন, ‘আসমান ও জমিন সৃষ্টির সময় থেকেই আল্লাহর কাছে মাসের সংখ্যা বারোটি। এর মধ্যে চারটি মাস খুবই সম্মানীত। সুতরাং তোমরা এ মাসের সম্মান নষ্ট করে নিজেদের ক্ষতির মধ্যে ফেলো না।’ সূরা তাওবাহ, আয়াত ৩৬।

হজর আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘বছরে মোট বারোটি মাস আছে। এর মধ্যে চারটি মাস নিষিদ্ধ মাসের অন্তর্ভূক্ত। সেগুলো হলো জিলকদ, জিলহজ, মহররম এবং রজব।’ বুখারি, হাদিস নম্বর ৪৬৬২; মুসলিম, হাদিস নম্বর ১৬৭৯।

নফল ইবাদতের মাস

সুফিরা মহররম মাসকে বিশেষ ইবাদতের মাস হিসেবে পালন করে থাকেন। ইমাম গাজ্জালি লিখেছেন, এ মাসের প্রতি রাতে তাহাজ্জুদ, জিকির এবং দিনের রোজা আধ্যাত্মিক উন্নতির পক্ষে বেশি কার্যকরী। বিশেষ করে এ মাসের ১০ তারিখের রোজার ব্যাপারে হাদিস শরিফে রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘এ রোজা গত এক বছরের গোনাহের কাফফারা।’ মুসলিম, হাদিস নম্বর, ১১৬২।

eid ul adha

আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা মহররম মাসের রোজা রাখতে চাইলে ৯ এবং দশ অথবা ১০ এবং ১১ তারিখ মিলিয়ে রেখো। শুধু ১০ তারিখ রোজা রাখা ইহুদিদের নিয়ম।’ মুসলিম, হাদিস নম্বর ১১৩৪।

তাৎপর্যপূর্ণ আশুরা

মহররম মাসের দশ তারিখকে ইয়াওমে আশুরা বলা হয়। এ দিনের ঐতিহাসিক তাৎপর্য বলে শেষ করা যাবে না। সহি এবং জয়িফ বর্ণনায় আশুরার দিনের বহু ঘটনার কথা বলা হয়েছে। এ দিনে পৃথিবী সৃষ্টি হয়েছে, এ দিন পৃথিবী ধ্বংস হবে, আদম (আ.) এর সৃষ্টি এ দিনেই হয়েছে - এ ধরনের বহু বর্ণনা হাদিস শরিফে পাওয়া যায়।

মহররম মাসের রোজা ফরজ ছিলো

বুখারি শরিফে আয়শা (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে, ‘রমজানের রোজা ফরজ হওয়ার আগে উম্মতে মোহাম্মাদীর ওপর মহররম মাসের ১৩, ১৪ এবং ১৫ তারিখের রোজা ফরজ ছিলো। দ্বিতীয় হিজরির শাবান মাসে রমজানের রোজা ফরজ করা হলে আশুরার রোজা নফল হয়ে যায়। তখন কারো ইচ্ছে হলে এ রোজাগুলো রাখত, কারো ইচ্ছে হলে রাখত না।’ মুসলিম, হাদিস নম্বর ১১২৮।

হৃদয়বিদারক কারবালার ঘটনা

কারবালারর ঘটনার কারণেও মহরম মাস তাৎপর্যপূর্ণ। ইমাম জালালুদ্দিন সুয়ুতি তার বিখ্যাত গ্রন্থ তারিখুল খুলাফায় এবং ইবনে কাসির আল বিদায়া ওয়াননেহায়ায় বলেছেন, ৬৩ হিজরির মহররম মাসের ১০ তারিখে কারবালার প্রান্তরে নবীজির নাতি জান্নাতে যুবকদের সর্দার ইমাম হোসাইনকে (রা.) নির্মমভাবে খুন করা হয়। শিয়া সম্প্রদায়ের মুসলমানরা এদিন মাতম-মিছিলের মাধ্যমে শোক পালন করেন। তবে সুন্নি মুসলমানরা এ ধরনের শোকপালনকে হারাম মনে করেন।

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর