নিউজিল্যান্ডে ইতিহাস, গর্বিত মুসলিমরা

প্রায় দেড় বছর আগে নিউজিল্যান্ডের দুটি মসজিদে নারকীয় হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটিয়েছিল এক উগ্রবাদী শ্বেতাঙ্গ সন্ত্রাসী। সেই ঘটনায় দেশটির আদালত বৃহস্পতিবার রায় ঘোষণা করেছে। রায়ে ব্রেন্টন টারান্ট নামের অস্ট্রেলীয় বংশোদ্ভূত ওই ডানপন্থী সন্ত্রাসীর যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। যা দেশটির ইতিহাসে প্রথম ঘটনা। এদিকে, নিউজিল্যান্ডের সরকার ও জনগণ সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে, সেজন্য গর্ববোধ করছেন দেশটির মুসলমানরা।

রায় ঘোষণার পর হাইকোর্টের সামনে নিউজিল্যান্ডের জনগণ

দেশটির গণমাধ্যমে বলা হয়েছে, ক্রাইস্টচার্চ গণহত্যায় দোষী ব্রেন্টন টারান্টকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত। সেইসঙ্গে এই শ্বেতাঙ্গ খ্রিস্টান সন্ত্রাসীকে প্যারোল না দেওয়ার নির্দেশও দিয়েছে আদালত। অর্থাৎ বাকি জীবন তাকে কারাগারেই কাটাতে হবে। পৃথিবীর অন্যতম শান্তিপ্রিয় দেশ নিউজিল্যান্ড। সেই দেশে এই নৃশংসতা চালানোর ঘটনায় এই প্রথম কারো যাবজ্জীবন সাজা হলো। অর্থাৎ দেশটির ইতিহাসে এটি প্রথম ঘটনা।

জানা গেছে, এদিন দেশটির হাইকোর্টের বিচারপতি ক্যামেরন মান্ডের সাজা ঘোষণার পর তার মত প্রকাশ করেন। তখন তিনি বলেন, যে অপরাধ সে করেছে, তাতে নির্দিষ্ট সময়ের কারাদণ্ডের সাজা যথেষ্ট নয়। কারণ ভয়ংকর ওই অপরাধের ব্যাপারে তার কোনো অনুশোচনা নেই।

রায় ঘোষণার পর হাইকোর্টের সামনে সেদিন বেঁচে যাওয়াদের কয়েকজন

আল-জাজিরা জানিয়েছে, বিচারক অপরাধী টারান্টের উদ্দেশে বলেন, তোমার অপরাধ এতটাই ঘৃণ্য যে, আজীবন কারাগারে আটকে রাখলেও তা সাজা হিসেবে পর্যাপ্ত হবে না। আমি যতটুকু বুঝতে পারছি, তাতে মনে হচ্ছে, তোমার মনে নিহতদের প্রতি এখনও কোনো সহানুভূতি জাগ্রত হয়নি। তুমি একটি নির্দিষ্ট সম্প্রদায়ের প্রতি ঘৃণা থেকে যে হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছ, সেই অপরাধের জন্য দুনিয়ার কোথাও তোমার জায়গা নেই।

এদিকে, সন্ত্রাসী টারান্ট যে মসজিদে সবচেয়ে ভয়াবহ গণহত্যা চালিয়েছে, ক্রাইস্টচার্চের সেই আল নূর মসজিদের ইমাম জামাল ফাউদা বলেছেন, অপরাধীকে শাস্তি দেওয়া হলেও আমরা আমাদের প্রিয়জনদের ফিরে পাব না। তবে এদেশের আইনি ব্যবস্থা যেভাবে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছে তাতে আমি গর্বিত।

উগ্র সন্ত্রাসী টারান্ট

তিনি বলেন, ওই জঘন্য অপরাধের একত্রে প্রতিবাদ জানিয়েছেন এদেশের মুসলিম ও অমুসলিম সকলেই। ধর্মের নামেই হোক কিংবা জাতীয়তাবাদের নামেই হোক, যেকোনো সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে নিউজিল্যান্ডের জনগণ যে একসঙ্গে লড়াই করবে, সেটা আমরা বিশ্বকে দেখাতে সক্ষম হয়েছি।

উল্লেখ্য, গত বছরের ১৫ মার্চ নিউজিল্যান্ডে দুটি মসজিদে শুক্রবার জুমার নামাজের সময় হামলা চালায় ওই উগ্রবাদী সন্ত্রাসী। স্বয়ংক্রিয় বন্দুকের এলোপাথারি গুলিতে সেদিন ৫১ জন মুসল্লি শহীদ হয়েছেন। আরো অন্তত অর্ধশত মুসল্লিকে সে হত্যার চেষ্টা করে। নৃশংস সেই ঘটনা ফেসবুকে লাইভ প্রচার করে ওই পাষণ্ড। এতে হতবাক হয়েছে যায় বিশ্ব।

শুধু তাই নয়, তৃতীয় আরো একটি মসজিদে সে হামলা চালাতে চেয়েছিল বলে তদন্তে বেরিয়ে এসেছে। গত সোমবার দেশটির আদালতে কুখ্যাত এই মৌলবাদীর অপরাধের সাজা নির্ধারণে শুনানি শুরু হয়। এ সময় দেশটির সরকারি আইনজীবী জানান, আল নূর মসজিদ এবং লিনউডের ইসলামিক সেন্টার ছাড়াও আরো একটি মসজিদে হামলা চালাতে চেয়েছিল সে। তবে অ্যাশবার্টন মসজিদে যাবার পথে তাকে আটক করা হয়।