দীর্ঘ ২০ বছর কারাগারের অন্ধকার কনডেম সেলে কাটানোর পর অবশেষে মুক্তি পেলেন খুলনার আলোচিত মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি শেখ জাহিদ (৫০)। গতকাল সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে খুলনা জেলা কারাগার থেকে মুক্তি পান তিনি। স্ত্রী-সন্তানকে হত্যার মিথ্যা অভিযোগে জীবনের দীর্ঘ একটা সময় তাকে কারাগারের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে কাটাতে হয়েছে।

seikh jahidমুক্তির পর কারাগারের গেটে শেখ জাহিদ

বিষয়টি নিশ্চিত করে খুলনা জেলা কারাগারের সুপার মো. ওমর ফারুক বলেন, স্ত্রী ও দেড় বছরের শিশু সন্তানকে হত্যার মিথ্যা অভিযোগে গত ২০ বছর কারাগারের অন্ধকারে মৃত্যুর প্রহর গুনেছেন শেখ জাহিদ। তাকে ২০ বছর আগে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছিলেন আদালত। বেশ কয়েক বছর আগে আদালতের এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন তিনি। শুনানি শেষে সম্প্রতি তাকে মুক্তির আদেশ দেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।

তিনি আরো জানান, সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ থেকে প্রথমে শেখ জাহিদের মুক্তির আদেশ পাঠানো হয় বাগেরহাট জেলা আদালতে। পরে সোমবার সেখান থেকে আদালতের নির্দেশ এসে পৌঁছায় খুলনা জেলা কারাগারে। আদালতের নির্দেশ এসে পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গেই তার মুক্তির কার্যক্রম শুরু করা হয়। সকল প্রস্তুতি শেষে সন্ধ্যায় তাকে কারাগার থেকে মুক্তি দেওয়া হয়।

seikh jahid 2মুক্তির পর কারাগারের গেটে শেখ জাহিদ

এদিকে দুই দশক কারাগারে মৃত্যুর প্রহর গুনার পর মুক্তি পেয়ে আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন শেখ জাহিদ। দীর্ঘ বছর পর মুক্ত আকাশ-বাতাসের দেখা পেয়ে কারাগারের গেটেই সবার সামনে কেঁদে ফেলেন তিনি। তাকে নিতে আসা তার স্বজনরাও আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন।

কারাগারের গেটে শেখ জাহিদ সাংবাদিকদের বলেন, কখনো এই বন্দিদশা থেকে মুক্তি পাবেন তা তিনি ভাবেননি। নির্দোষ হয়েও জীবনের একটি দীর্ঘ সময় তাকে কারাগারের অন্ধকারে কষ্টে কাটাতে হয়েছে। তার ধারণা, তার স্ত্রীর আগের স্বামীই তাকে এবং তার সন্তানকে হত্যা করেছে। তার শ্বশুর-শ্বাশুড়ি মিথ্যা মামলায় তাকে ফাঁসিয়েছে।

এদিন তাকে কারাগারের গেটে নিতে আসেন তার চাচা শেখ আশরাফুজ্জামান, ছোট বোন ও দুই ভগ্নিপতি। পরে তাকে সেখান থেকে নিয়ে যাওয়া হয় খুলনা নগরীর মিয়াপাড়া এলাকায় বোনের বাসায়। তার গ্রামের বাড়ি বাগেরহাট জেলার রূপসা উপজেলার নারিকেলি চাঁদপুর এলাকায়।

জানা যায়, ১৯৯৪ সালে বাগেরহাটের ফকিরহাট থানার উত্তর পাড়ার ময়েন উদ্দিনের মেয়ে রহিমা খাতুনকে বিয়ে করেন শেখ জাহিদ। বিয়ের পর থেকে তিনি শ্বশুরবাড়িতে ঘরজামাই থাকতেন। বিয়ের দেড় বছরের মাথায় তাদের ঘর জুড়ে আসে একটি কন্যা সন্তান। তার নাম রাখা হয় রেশমা খাতুন। কয়েকবছর পরে শ্বশুরবাড়ির ৫০০ গজ দূরে একটি পাকা ঘর করে সেখানে বসবাস শুরু করেন জাহিদ-রহিমা দম্পতি।

পরে ১৯৯৭ সালের ১৬ জানুয়ারি বাড়ির দরজা ভেজানো অবস্থায় দেখতে পেয়ে রহিমার মা আনজিরা বেগম ডাকাডাকি শুরু করেন। এক পর্যায়ে ঘরের ভেতর ঢুকে তিনি মেয়ে ও নাতনির মরদেহ খাটের ওপর পড়ে থাকতে দেখেন। এর একদিন পর ফকিরহাট থানায় স্বামী শেখ জাহিদের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন রহিমার বাবা ময়েন উদ্দিন।

এ মামলার ১৯৯৮ সালের ১৮ জানুয়ারি আদালতে আত্মসমর্পন করেন আসামি জাহিদ। আর মামলার তদন্ত শেষে একই বছরের ১৯ নভেম্বর আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে পুলিশ। পরে প্রায় তিন বছর শুনানি শেষে ২০০০ সালের ২৫ জুন জাহিদকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেন বাগেরহাট জেলা ও দায়রা জজ আদালত। আদালতের এ রায়ের বিরুদ্ধে তিনি হাইকোর্টে আপিল করেন। পরে দীর্ঘ চার বছর শুনানি শেষে ২০০৪ সালের জুলাই মাসে হাইকোর্টও নিম্ন আদালতের আদেশ বহাল রাখেন। এরপর তিনি ২০০৭ সালে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আপিল করেন। পরে চলতি বছরের ২৫ আগস্ট আদালত তাকে মুক্তির আদেশ দেন।

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর

Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.

Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.