এমপির শপথ নিলেন মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি!

গণতন্ত্রের বিধান, আইনের ফাঁক-ফোকর বলে কথা। যার জোরে একজন মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিও সংসদ সদস্য (এমপি) হিসেবে শপথ নিয়েছেন! শুনতে অবাক লাগলেও এটি বাস্তব ঘটনা। আর ঘটনাটিও খুব বেশি দূরের নয়, দ্বীপরাষ্ট্র শ্রীলঙ্কায়। গত মঙ্গলবার এই দেশটিরই আইনসভার সদস্য পদে শপথ নিয়েছেন খুনের মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি। প্রেমালাল জয়শেখর নামের ওই ব্যক্তি দেশটির ক্ষমতাসীন শ্রীলঙ্কা পদুজনা পার্টির (এসএলপিপি) সদস্য। লজ্জাজনক এই ঘটনার প্রতিবাদে ওয়াকআউট করেন দেশটির বিরোধী দলের সংসদ সদস্যরা।

শপথ নিচ্ছেন প্রেমালাল জয়শেখর

ব্রিটিশ গণমাধ্যম গার্ডিয়ান বলছে, দেশটির আইন অনুযায়ী হত্যার মামলায় দোষী সাব্যস্ত কোনো অপরাধী শ্রীলঙ্কায় নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারে না। কিন্তু আইনি জটিলতা ও ফাঁক-ফোকরের সুযোগ নিয়ে নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে এমপি হিসেবে শপথ নিয়েছেন প্রেমালাল জয়শেখর।

জানা যায়, বিরোধী দলের নির্বাচনী সমাবেশে ২০১৫ সালে গুলি চালিয়ে একজনকে খুন করেন প্রেমালাল। ওই ঘটনায় দায়ের করা মামলায় গত জুলাই মাসে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। কিন্তু রায় ঘোষণার আগেই গত ৫ আগস্টের সাধারণ নির্বাচনের জন্য মনোনয়ন পত্র জমা দিয়েছিলেন তিনি।

শ্রীলঙ্কার পার্লামেন্ট

শ্রীলঙ্কার নির্বাচন কমিশন সূত্রে বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার ক্ষেত্রে মনোনয়ন সংক্রান্ত যাবতীয় কর্মকাণ্ড শেষ হওয়ার পরই প্রেমালালের মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা করা হয়। তাই আইন অনুযায়ী তাকে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়।

তবে নির্বাচনে বিজয়ী হলেও জেল কর্তৃপক্ষের আপত্তির কারণে গত ২০ আগস্ট সংসদের প্রথম অধিবেশনে যোগ দিতে পারেননি তিনি। এর পর প্রেমলাল সংসদে হাজির থাকার অনুমতি চেয়ে আদালতে আপিল করেন। এ ব্যাপারে গত সোমবার দেশটির আদালত আদেশ দিয়ে বলে, মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি হলেও সংসদ সদস্যের অধিকার রক্ষার্থে প্রেমালালকে কারাগার থেকে সংসদে নিয়ে যেতে হবে। তবে অধিবেশন শেষে আবার তাকে কারাগারে ফিরিয়ে আনতে হবে। তার পরই গত মঙ্গলবার শপথ গ্রহণের জন্য প্রেমালালকে সংসদে হাজির করা হয়।

তবে এ ঘটনায় ক্ষোভে ফেটে পড়ে শ্রীলঙ্কান সংসদের বিরোধী শিবির। প্রেমালালের শপথ গ্রহণের প্রতিবাদে কালো চাদর পরে তারা সংসদে আসেন। তার পর সংবিধান লঙ্ঘনের অভিযোগ জানিয়ে তীব্র প্রতিবাদ করে ওয়াকআউট করেন বিরোধী দলের সংসদ সদস্যরা। তাদের অভিযোগ, মাহিন্দা রাজাপাকশের দলের লোক হওয়ায় প্রেমলালকে বিশেষ সুবিধা দেওয়া হয়েছে।

তবে রাজনীতি বিশ্লেষকরা বলছেন, শ্রীলঙ্কার ইতিহাসে নজিরবিহীন এই ঘটনায় অর্থাৎ একজন খুনিকে সংসদ সদস্য পদে বসিয়ে আইন ও সংবিধান দুটোরই অবমাননা করা হয়েছে। যার প্রভাব দীর্ঘ মেয়াদে ভালো হবে না বলে সতর্ক করেন তারা।