তুরস্ককে সেনা প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়ে সাইপ্রাস যাচ্ছেন পম্পেও

পূর্ব ভূমধ্যসাগরের বিরোধপূর্ণ এলাকায় তুরস্কের তেল-গ্যাস অনুসন্ধান করা নিয়ে প্রতিবেশী গ্রিস ও সাইপ্রাসের সঙ্গে চলমান উত্তেজনা কমাতে এবার এগিয়ে আসছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও। সে লক্ষ্যে আগামীকাল শনিবার তিনি সাইপ্রাস সফরে যাবেন। পাশাপাশি শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য তুরস্ককে তাদের সেনা প্রত্যাহারেরও আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও

এর আগে কাতারের দোহায় এক সংক্ষিপ্ত সফর করবেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। সেখানে তিনি আফগানিস্তানের সরকার ও তালেবানদের মধ্যকার দীর্ঘ প্রতীক্ষিত আলোচনার উদ্বোধন করতে সহায়তা করবেন। এরপরই সাইপ্রাসের উদ্দেশ্যে রওনা দেবেন মার্কিন এই শীর্ষ কূটনীতিক।

বৃহস্পতিবার দোহার উদ্দেশ্যে রওনা দেয়ার প্রক্কালে তিনি সাংবাদিকদের বলেছিলেন, সাইপ্রাসে তার এই সফর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ান এবং গ্রিসের প্রধানমন্ত্রী কিরিয়াকোস মিতসোটাকিসের সঙ্গে ফোনালাপের পরিপূরক হবে।

বিতর্কটি এমনভাবে সমাধান করা দরকার, যা কূটনৈতিক ও শান্তিপূর্ণ হয় উল্লেখ করে মাইক পম্পেও বলেন, এই সমস্যাটি নিয়ে কাজ করবো। পাশাপাশি সাইপ্রাসের জনগণের দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে সম্পর্কিত যে ঝুঁকিগুলো রয়েছে সেগুলো নিশ্চিত করার চেষ্টা করছি।

এ সময় উত্তেজনা হ্রাসের চেষ্টা করায় জার্মানির প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তিনি। গ্রিস এবং সাইপ্রাসকে জোরালো সমর্থন দেয়ায় ফ্রান্সকেও ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, আশা করছি সত্যিকারের আলোচনা হবে এবং সেখানে থেকে সামরিক বাহিনী প্রত্যাহার করে নেবে তুরস্ক।

এর আগে বৃহস্পতিবার ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) নেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে গ্রিসের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী মিলতিয়াডিস ভারভিটসিওটিস বলেছেন, আঙ্কারা যদি সাইপ্রাসের সমুদ্রসীমা থেকে সামরিক নৌযান এবং গ্যাস ড্রিলিং জাহাজ অপসারণ না করে তাহলে ইইউ নেতাদের উচিত, সীমিত ও নির্দিষ্ট সময়ের জন্য তুরস্কের ওপর একটি কঠোর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা।

পূর্ব ভূমধ্যসাগরের বিরোধপূর্ণ এলাকায় তুরস্কের তেল-গ্যাস অনুসন্ধানকারী জাহাজ

ইউরোপীয় পার্লামেন্টের পররাষ্ট্র বিষয়ক কমিটিকে তিনি বলেন, নিষেধাজ্ঞার এই চাপ সীমিত সময়ের জন্য দেয়া হলেও যেন তা গুরুতর এবং কঠোর হয়। আঙ্কারাকে এই বার্তা দিতে হবে যে, ইউরোপ এখানে আলোচনার জন্য এসেছে এবং তার মূল্যবোধ রক্ষার জন্য তারা রয়েছে।

আরব নিউজের খবরে বলা হয়, পূর্ব ভূমধ্যসাগরে জ্বালানি সংস্থান নিয়ে সাইপ্রাস, গ্রিস ও তুরস্কের মধ্যকার সংকট সমাধানের উপায় নিয়ে আলোচনা করতে আগামী ২৪-২৫ সেপ্টেম্বর একটি বিশেষ শীর্ষ সম্মেলন করবেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতারা।

গত আগস্ট মাসে বিরোধপূর্ণ ওই এলাকায় তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে নামে তুরস্ক। পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী গত ১ সেপ্টেম্বর অনুসন্ধান বন্ধ করার কথা ছিল। কিন্তু তা বন্ধ না করে আগামী ১২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অনুসন্ধান অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছে দেশটি। এর পর থেকেই ন্যাটোর সদস্যভুক্ত এই দেশ দুটির মধ্যে উত্তেজনা বেড়ে যায়।

তুরস্কের এ সিদ্ধান্তে খুশি হতে পারেনি গ্রিস। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পদক্ষেপটিকে 'বেআইনি' আখ্যা দিয়ে বিবৃতি প্রকাশ করা হয়েছে। সেখানে তারা ওই অঞ্চলের স্থিতিশীলতা বজায় রাখার উদ্যোগ নিতে আঙ্কারার প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। বিপরীতে তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানও গ্রিসকে উদ্দেশ করে কড়া বার্তা দিয়েছেন। বলেছিলেন, যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবেলায় তুরস্ক সব সময় প্রস্তুত রয়েছে।