‘ভুয়া ভিডিও’ দেখিয়ে ট্রাম্পকে ফিলিস্তিনের বিরুদ্ধে খেপান নেতানিয়াহু

মধ্যপ্রাচ্য সম্পর্কে মার্কিন নীতিকে প্রভাবিত করতে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের একটি আপত্তিকর ভিডিও ক্লিপ দেখিয়েছিলেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। সম্প্রতি নিজের লেখা নতুন বই 'রাগে' তে চাঞ্চল্যকর এই অভিযোগটি করেছেন ওয়াশিংটন পোস্টের সিনিয়র সংবাদদাতা এবং লেখক বব উডওয়ার্ড।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু

৩৯২ পৃষ্টার এই বইয়ে ট্রাম্পের সবচেয়ে পরিণতিপূর্ণ বৈদেশিক নীতি সংক্রান্ত সিদ্ধান্তের বিবরণ দিয়েছেন বব উডওয়ার্ড। সেখানে তিনি বলেন, কাউকে হত্যা করার আদেশ দিচ্ছিলেন মাহমুদ আব্বাস, এমন একটি ভুয়া ভিডিও ট্রাম্পকে দেখিয়েছিলেন নেতানিয়াহু। এর পরই ফিলিস্তিন সম্পর্কে মার্কিন নীতি পরিবর্তন করেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট।

ফিলিস্তিনের প্রতি ট্রাম্পের দৃষ্টিভঙ্গি বদলানোর টার্নিং পয়েন্ট কী ছিল সে সম্পর্কে উডওয়ার্ডের কাছে বিবরণী প্রকাশ করেছিলেন সাবেক মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন। এমনকি ট্রাম্পের সঙ্গে বেশ কয়েকটি হাই-প্রোফাইলের মতবিরোধের জের ধরে ২০১৮ সালে এক্সন মবিলের সিইও পদচ্যুত হয়েছিলেন।

উডওয়ার্ড তার বইতে লেখেন, প্রথমদিকে নেতানিয়াহুকে ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে শান্তির প্রধান বাধা হিসেবে দেখেছিলেন ট্রাম্প। এমনকি তিনি ইসরায়েলি নেতা সম্পর্কে সন্দেহ প্রকাশ শুরু করেছিলেন। প্রেসিডেন্ট হওয়ার প্রথম মাসে ওয়াশিংটনে তার একটি সফরের সময় ট্রাম্প ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রীকে বলেছিলেন যে, ফিলিস্তিনিদের নয়, বরং শান্তি প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হওয়ার পেছনে নেতানিয়াহু সরকারকেই আসল বাধা বলে মনে করেন।

পরবর্তীতে ২০১৭ সালে ইসরায়েল সফরের সময় ওই ভিডিওটি দেখার পর ফিলিস্তিন সম্পর্কে মার্কিন প্রেসিডেন্টের দৃষ্টিভঙ্গি নাটকীয়ভাবে পরিবর্তন হয়ে যায়। তেল আবিবে নেতানিয়াহুর সঙ্গে বৈঠককালে ট্রাম্পের কাছে ভিডিও ক্লিপটি উপস্থাপন করা হয়েছিল। তখন হোয়াইট হাউসের সিনিয়র উপদেষ্টা এবং ট্রাম্পের জামাতা জ্যারেড কুশনার বৈঠকটিতে টিলারসনকে ডেকে নিয়েছিলেন, কারণ নেতানিয়াহুর দেখানো ভিডিওটি দেখে ট্রাম্প বিরক্ত ছিলেন।

দখলকৃত পশ্চিম তীরে ইসরায়েলের অবৈধ বসতি

টিলারসনকে ভিডিওটি দেখতে দিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছিলেন, 'এটা দেখ! এটা অবিশ্বাস্য! আপনার এটি দেখতে হবে।'

ভিডিওতে দেখা গেছে যে, ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস অনুমানযোগ্য প্রসঙ্গত শব্দ এবং বাক্যগুলোকে একত্রিত করে শিশু হত্যার আদেশ দিচ্ছেন। এ সময় সুযোগ বুঝে ট্রাম্পকে নেতানিয়াহু জিজ্ঞাসা করেছিলেন, 'অথচ আপনিই সেই ব্যক্তিকে সাহায্য করতে চান?'

ওই সময়টাতে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে বিচার হচ্ছিল। বৈঠক শেষে তিনি কক্ষ ছেড়ে চলে যাওয়ার পর টিলারসন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে উদ্দেশ করে বলেছিলেন, 'প্রেসিডেন্ট, আপনি কি বুঝতে পেরেছেন যে পুরো ভিডিওটি বানোয়াট ছিল।' জবাবে ট্রাম্প বলেছিলেন, আচ্ছা এটি বানোয়াট নয়।

ভিডিও দেখার পর দিন পশ্চিম তীরের বেথেলহেমে দুই নেতার সাক্ষাৎকালে ব্যক্তিগতভাবে আব্বাসকে আক্রমণ করেছিলেন ট্রাম্প। তাকে একজন 'মিথ্যাবাদী' এবং 'হত্যাকারী' আখ্যা দিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, দীর্ঘদিনের ফিলিস্তিনি নেতার ওপরে বিশ্বাস করা যেতে পারে বলে তাকে প্রভাবিত করা হয়েছিল। এর জন্য আব্বাসের নিন্দা করেছিলেন তিনি।

এর পরই ওয়াশিংটনে ফিরে ফিলিস্তিনের প্রতিনিধি অফিস বন্ধ করে দেন ট্রাম্প এবং পশ্চিম তীর, গাজা ও ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় সকল সহায়তা বাতিল তরে দেয়ার নির্দেশ দেন।