বাবরি মসজিদ: ভারতে মুসলিমদের বঞ্চিতবোধ বাড়ছে
- Details
- by আন্তর্জাতিক ডেস্ক
তিন দশক ধরে চললো তদন্ত, সাক্ষ্য দিলেন ৮৫০ জন ব্যক্তি, ৭ হাজারের বেশি ডকুমেন্ট, ছবি ও ভিডিওটেপ; এতো কিছুর পরও কোনো অপরাধীকে খুঁজে পেলো না ভারতের আদালত; অযোধ্যায় ষোড়শ শতকের বাবরি মসজিদ যেনো ধসে পড়েছে এমনি এমনি।
এলকে আদভানিসহ বেশ কয়েকজন বিজেপি নেতা এই বাবরি মসজিদ ধ্বংসের মামলার আসামী ছিলেন। সম্প্রতি এ রকম ৩২ জন আসামীকে খালাস দিয়েছে ভারতের আদালত। তারা দাবি করেছে, বাবরি মসজিদে হামলার ঘটনা ঘটিয়েছে ‘অচিহ্নিত আততায়ীর’ দল, এবং এই ঘটনা পরিকল্পিত ছিলো না।
অথচ অসংখ্য প্রত্যক্ষদর্শী আদালতে দাবি করেছেন যে, তারা স্থানীয় পুলিশ ও রাজনৈতিক নেতৃত্বে বাবরি মসজিদে হামলা করতে দেখেছেন, এবং এই ঘটনার দেখেছেন আরো হাজার হাজার লোক। তারপরও আদালত বলছে- এই ঘটনা পরিকল্পিত নয়; যেনো অপরিকল্পিতভাবে কাউকে খুন করলে, তা আর খুন থাকে না।
গত বছর ভারতের সুপ্রিম কোর্ট বলেছিলো বাবরি মসজিদের বিষয়টি ‘পরিকল্পিত ঘটনা’ এবং এটি ‘আইনের শাসনের গুরুতর লঙ্ঘন’।
যেভাবে ঘটলো খালাসপ্রাপ্তি
সাধারণ দৃষ্টিকে ভারতের আদালতের এই রায়টিকে দেশটির বিশৃঙ্খলাপূর্ণ ও আস্থাহীণ বিচারব্যবস্থার প্রতি আরো একটি অভিযোগ হিসেবে দেখা হচ্ছে। বহু লোক মনে করেন এই রায়টি ভারতের বিচারব্যবস্থার এমন ক্ষতি করলো যা কখনোই সংশোধনযোগ্য নয়। একই সাথে প্রমাণিত হলো বিচারব্যবস্থায় রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের নোংরা সত্য।
আরো স্পষ্ট করে এ কথা বলা যায় যে ভারতের ২০০ মিলিয়ন মুসলিম জনসংখ্যা এই রায়কে মূলধারার ভারতীয় সমাজ থেকে তাদেরকে আলাদা করে দেওয়ার উদ্যোগ হিসেবে দেখছেন। নরেন্দ্র মোদির হিন্দুত্ববাদী বিজেপি সরকারের নীতি মুসলিমদের ইতিহাসের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি কোণঠাসা করে দিয়েছে। ১৯৪৭ সালে স্বাধীন হওয়ার পর ভারতকে বিশ্বের সবচেয়ে বড় গণতন্ত্রিক দেশ ও বহুত্ববাদী দেশ হিসেবে অভিহিত করা হতো; কিন্তু ভারত আর সেই প্রশংসার যোগ্য আছে কি না তা নিয়ে যৌক্তিক ও জোরালো প্রশ্ন উঠছে।
ভারতে প্রতি বছর গরুর মাংস খাওয়ার কারণে বা এই অভিযোগে বহু মুসলিমকে হত্যা করা হয়। সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দুরা এই সত্য সম্পর্কে স্পষ্টত অবগত। মোদির সরকার প্রতিবেশি দেশের অমুসলিম নাগরিকদের সুবিধা দিতে তার দেশের নাগরিকত্ব আইন সংশোধন করেছে। মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ কাশ্মিরের স্বাধিকার রোহিত করার মতো বিশ্বজুড়ে সমালোচিত পদক্ষেপও নিয়েছে ভারত সরকার। যা দেশটিতে মুসলিমদের ক্রমেই কোণঠাসা করে দিয়েছে।
বাড়ছে মুসলিমদের বঞ্চিত ও অপমানিত করার ঘটনা
চলতি বছর ভারতের করোনাভাইরাস ছড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিলো মুসলিমদের উপর। দিল্লিতে একটি ধর্মীয় আয়োজনে উপস্থিত হওয়ার পর তাদের উপর এই অভিযোগ আনা হয়। প্রায় প্রতিটি ভারতীয় মিডিয়ায় সে সময় মুসলিমদের বিষোদগার করা হয়। অথচ মহামারির সময় হিন্দুদের একই ধরনের জমায়েত নিয়ে না হয়েছে রাজনৈতিক আলোচনা, না তা পেয়েছে সংবাদ মাধ্যমের কাভারেজ।
শুধু এটুকুই নয়। গত শীতে দিল্লি দাঙ্গায় উসকানির অভিযোগে অনেক নিরাপরাধ মুসলিম শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করে মাসের পর মাস আটকে রাখা হয়েছে। যদিও তাদের বিরুদ্ধে স্পষ্ট প্রমাণ নেই। অন্য দিকে দাঙ্গায় স্পষ্টত উসকানি দেওয়া, জনসম্মুখে হুমকি দেওয়া বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঘোষণা দেওয়া হিন্দু রাজনৈতিক নেতারা অবাধে ঘুরে বেড়াচ্ছে।
বাবরি মসজিদের রায়টিকে মুসলিমরা সোজাসুজি তাদেরকে অপদস্ত ও অপমানিত করার আরো একটি ভারতীয় কাজ হিসেবেই দেখছেন।
ভারতীয় মুসলিমদের এই বোধকে অযৌক্তিক বলার কোনো সুযোগ নেই। আর মোদি সরকারও ভারতকে হিন্দুদের দেশ বানাতে যথাসম্ভব স্পষ্ট তৎপরতা দেখিয়ে যাচ্ছে। জনপ্রিয় সংবাদ মাধ্যমগুলো প্রকাশ্যে মুসলিমদের অপমান করে নানা রকম কন্টেন্ট প্রচার করছে। ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে মুসলমানদের সমর্থন দেওয়া রাজনৈতিক দলগুলোও মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। সবচেয়ে শক্তিশালী বিরোধী দল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে ভোটের রাজনীতে মুসলিমদের ব্যবহারের অভিযোগ আছে। কেবল ক্ষমতায় উঠার সিঁড়ি হিসেবে মুসলিমদের ব্যবহার করেছে তারা।
দিল্লি-ভিত্তিক একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের গবেষক অসিম আলি এ বিষয়ে বলেন, “ভারতের মুসলমানরা ভারতের রাষ্ট্র ব্যবস্থার উপর থেকে বিশ্বাস হারিয়ে ফেলছে। রাজনৈতিক দল, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এবং ভারতীয় মিডিয়া মুসলমানদেরকে নাগরিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করছে। ফলে মুসলিমদের মধ্যে হতাশা বাড়ছে।”
বঞ্চিত করার লজ্জার ইতিহাস বয়ে চলছে ভারত
ভারতের জনসংখ্যার ১৪ শতাংশ মুসলিম। অথচ পুলিশে মুসলমানদের অংশগ্রহণ পাঁচ শতাংশের কম। ভারত সরকার ভারতকে হিন্দুদের দেশে পরিণত করার চেষ্টা করছে এবং এর দায়িত্ব গিয়ে পড়ছে মুসলিমদের কাঁধেও। অত্যন্ত অন্যায়ভাবে এই চেষ্টা করে যাচ্ছে মোদি সরকার।
ভারতজুড়ে মুসলিমরা অর্থনৈতিক বঞ্চনার শিকার হচ্ছে। একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, ভারতীয় মুসলমান শিশুদের বিদ্যালয়ে যাওয়ার হার যথেষ্ট ভালো থাকলেও, উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায় থেকে তাদের ঝরে পড়ার হারও অনেক। এর মূল কারণ অর্থনৈতিক মন্দাবস্থা।
আইনসভায়ও মুসলমানদের অংশগ্রহণ কমে গেছে। ১৯৮০ সালে আইনসভার নিম্নকক্ষে ৯% মুসলিম সদস্য ছিলেন। কিন্তু বর্তমানে তা কমে হয়েছে ৫%। ২০১৪ সালে বিজেপি যখন ক্ষমতায় আসে, তাদের মধ্যে কোনো মুসলিম সদস্য ছিলেন না, এবং সেবারই প্রথম ভারতে কোনো দল সরকার গঠন করেছে কোনো মুসলিম সংসদ সদস্য ছাড়াই।
অথচ মোদি প্রায়ই বলেন যে তার সরকার ধর্মীয় পরিচয়ের কারণে কোনো জাতিগোষ্ঠির প্রতি বৈষম্য করে না। এর প্রমাণ হিসেবে তিনি বিভিন্ন মুসলিম দেশের সাথে তার দেশের ভালো সম্পর্কের দোহাই দেন। কিন্তু তার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরা মোদিকে ‘ছদ্মবেশি ধর্মনিরপেক্ষ’ হিসেবে অভিহিত করেন।
গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...
খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর
Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.
Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.