বাইডেনের পররাষ্ট্রনীতিতে মোটাদাগে যা থাকছে

মার্কিন পররাষ্ট্রনীতিকে প্রথা থেকে বের করে ব্যক্তিগত ও একতরফায় নিয়ে গিয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ‘আমেরিকা প্রথম’ এমন স্লোগান নিয়ে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে বিভিন্ন ইস্যুতে বিতর্কিত অবস্থান নেন তিনি। সেই অবস্থার পরিবর্তন হতে চলেছে। কারণ ক্ষমতায় বসার পর দেশকে প্রথাগত পররাষ্ট্রনীতিতে ফিরিয়ে নেবেন বলে জানিয়েছেন নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। আন্তর্জাতিক আইন ও পশ্চিমা মূল্যবোধের ভিত্তিতে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত সম্পর্ক মেরামত ও ভারসাম্য আনবেন তিনি।

জো বাইডেন

এমনটাই উঠে এসেছে প্রভাবশালী ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসির বিশ্লেষণমূলক এক প্রতিবেদনে। তাতে বলা হয়, মোটা দাগে বাইডেনের পররাষ্ট্রনীতি হবে জাতিসংঘের নীতি, জলবায়ু পরিবর্তন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সমন্বয়ে করোনা মোকাবেলা, আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও সমন্বয়, ন্যাটো ও আঞ্চলিক জোটসহ মিত্রদের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়ন।

অথচ এসব বিষয় থেকে মুখ ফিরিয়ে ট্রাম্প একা চলার নীতি নেয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের ভাবমূর্তি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, মিত্ররাও আস্থা হারিয়েছে। ফলে দেশটির ভাবমূর্তিকে পুনরুদ্ধার করার পাশাপাশি একনায়কতন্ত্রের বদলে ফের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার নীতি নিবেন বাইডেন।

বিবিসির মতে, বাইডেনের পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে সবার আগে রয়েছে জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যু। ট্রাম্প এটিকে গুরুত্বহীন করে প্যারিস চুক্তি থেকে বের করে নেন যুক্তরাষ্ট্রকে। বাইডেন বলেন, প্যারিস জলবায়ু চুক্তিতে যোগ দেয়ার পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তনকে গুরুত্ব দেবেন তিনি। দূষণ কমাতে ২ ট্রিলিয়ন ডলারের কর্মসূচি নেয়ার পরিকল্পনা করা হচ্ছে।

প্যারিস জলবায়ু চুক্তি

জলবায়ুর পরই ইরান তথা মধ্যপ্রাচ্য নীতিকে সবচেয়ে গুরুত্ব দেবেন জো বাইডেন। বিশেষ করে, ছয় জাতি-গোষ্ঠীর সঙ্গে ২০১৫ সালে সম্পাতিক ইরানের পরমাণু সমঝোতা গুরুত্ব পাবে। এ চুক্তি থেকে ২০১৮ সালে একতরফাভাবে যুক্তরাষ্ট্রকে বের করে নিয়ে তেহরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন ট্রাম্প।

এখন সে চুক্তিতে ফেরা হোক বা না হোক নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টায় যুক্ত হবেন বাইডেন। ইরান চুক্তি কঠোরভাবে মেনে না চললে নিষেধাজ্ঞাও না তোলার কথা জানিয়েছেন তিনি।

এ অঞ্চলের আরেকটি ইস্যুত হচ্ছে সৌদি জোট ও তাদের ইয়েমেন যুদ্ধে ট্রাম্পের অব্যাহত সমর্থন। এই সমর্থন বন্ধ করে সৌদি জোটকে শান্তির দিকে নিয়ে যাবেন বাইডেন। মার্কিন বামপন্থী দল ও কংগ্রেসের অনেক আইনপ্রণেতাও এই যুদ্ধ বন্ধের পক্ষে।

মধ্যপ্রাচ্যে ইরান ও সৌদি আরব নীতিতে ভারসাম্য আনবেন জো বাইডেন। এ বিষয়ে মার্কিন পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা নীতি বিশ্লেষক ড্যানিয়েল প্লেটকা বলেন, ট্রাম্পের সৌদি ঘেঁষানীতি থেকে সরে এনে ইরানমুখী হবেন বাইডেন।

ইরান ও সৌদি আরব ইস্যু

মুসিলম দেশগুলোকে তো বটেই, গোটা বিশ্ব নাড়িয়ে দিয়েছে ট্রাম্পের আরব-ইসরায়েল নীতি। বিশেষ করে, ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলের মধ্যে ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থান থেকে সরে এসে তেল আবিবের স্বার্থ রক্ষায় সম্ভব সবকিছু করেছেন তিনি। জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি, শতাব্দীর সেরা চুক্তির নামে ফিলিস্তিনকে পঙ্গু করার নীতি নেন ট্রাম্প।

এর ঠিক বিপরীতমুখী হয়ে ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক পুনঃস্থাপন করবেন নতুন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। এ ছাড়াও পূর্ব জেরুজালেমে ফিলিস্তিনের মার্কিন কনস্যুলেট খোলা, ফিলিস্তিনিদের মার্কিন সহায়তা দেয়া, সেখানে কাজ করা জাতিসংঘ সংস্থাগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক পুনঃস্থাপন করবেন তিনি। তবে সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ কয়েকটি দেশের সঙ্গে ইসরায়েলের চুক্তিকে স্বাগত জানান বাইডেন।