সাহায্য চাও সালাত ও সবরের মাধ্যমে
- Details
- by ইসলাম
পবিত্র কোরআনের সুরা বাকারায় আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘ইয়া আইয়্যুহাল্লাজিনা আমানুস তায়িনু বিসসাবরি ওয়াসসালাহ।’ অর্থ- হে ইমানদারগণ! তোমরা সালাত ও সবরের মাধ্যমে আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করো। ‘ওয়াইন্নাহা লাকাবিরাতুন ইল্লা আলাল খাশিয়িন।’ অর্থ- নিশ্চয়ই কাজটি খুবই কঠিন। শুধুমাত্র বিনয়ী ব্যক্তিদের পক্ষেই এমনটি করা সহজ।’
মানবজীবনের সব সমস্যা, হতাশা, অপ্রাপ্তির সমাধান একবাক্যে-এক কথায় বলে দিয়েছেন আল্লাহ তায়ালা। আল্লাহর সাহায্য ছাড়া এক মুহূর্তও বেঁচে থাকা, সামনে এগুনো মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। মানুষ যখন হতাশ হয়ে পড়ে, আশার আলো যখন নিভু নিভু, তখন কী করবে, কীভাবে আলোর দেখা পাবে সেই জটিল প্রশ্নের সহজ উত্তর দেওয়া হয়েছে এ আয়াতে।
আল্লাহ বলেছেন, যত বড় বিপদেই পড়ো না কেনো, সালাত এবং সবরের মাধ্যমে সাহায্য চাও। সহি হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, রাসুল (সা.) যখন দুশ্চিন্তায় ভুগতেন কিংবা কোনো বিপদে পড়ে যেতেন সঙ্গে সঙ্গে সালাতে দাঁড়িয়ে আল্লাহর সাহায্য চাইতেন।
এই সাহায্য চাওয়ার মাধ্যমে বান্দার সঙ্গে আল্লাহর গভীর সম্পর্ক তৈরী হয়। বুখারির হাদিসে রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে আল্লাহর কাছে চায় না, আল্লাহ তার ওপর রাগ হন।’ তাই রাসুল (সা.) বলেছেন, তোমরা বেশি বেশি আল্লাহর কাছে চাও। এমনকি তোমার জুতার ফিতা ছিঁড়ে গেলে অথবা খাবারের লবন ফুড়িয়ে গেলেও।
দার্শনিক ইমাম গাজালি (রহ.) বলেন, আল্লাহর কাছে চাওয়ার মাধ্যামে বান্দার ভেতর তায়াক্কুল তৈরী হয়, বান্দার বিশ্বাস গাঢ় হয়। বান্দা যখন আল্লাহ তায়ালাকে কোনো কিছু দেওয়ার একমাত্র মালিক বলে বিশ্বাস করে নেয় তখনই সে আধ্যাত্মিক জগতের একটি উঁচু স্তরের সিঁড়ি অতিক্রম করে। যে সিঁড়ি বান্দার সঙ্গে প্রভুর সম্পর্ক আরো গভীর করে দেয়। ফলে বান্দা দুনিয়াতেই জান্নাতের সুখ-সমৃদ্ধি অনুভব করতে থাকে।
আল্লাহর কাছে চাওয়ার দুটি মাধ্যম রয়েছে। একটি সালাত, অন্যটি সবর। সালাতের মাধ্যমে বান্দা নিবিড়ভাবে আল্লাহর কাছে যাবতীয় দুঃখ-কষ্ট, অভাব-অনটন ও প্রয়োজনের কথা তুলে ধরে। আর সবরের মাধ্যমে বান্দা অপেক্ষা করে কখন আল্লাহ তার বিপদাপদ, অভাব-অনটন দূর করবেন।
ইমাম গাজালি বলেন, সালাতের চেয়ে সবরের মর্যাদা অনেক বেশি। কেননা সালাতের একটি নির্দিষ্ট সময় রয়েছে। কিন্তু সবর সর্বক্ষণ করতে হয়। সালাত আদায় করা সহজ। সবর রক্ষা করা খুবই কঠিন। সবর সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, ‘ইন্নাল্লাহা মাআসসাবিরিন’। অর্থাৎ, যারা সবর অবলম্বন করে আল্লাহ তাদের সঙ্গে থাকেন।
যেহেতু সবরকারীর সঙ্গে আল্লাহ থাকেন বলা হয়েছে তাই সবরের মর্যাদা সালাতের চেয়েও বেশি। তাছাড়া সালাত আদায় করার জন্যও নিরবিচ্ছিন্ন সবরের প্রয়োজন। সবর ছাড়া সালাত কিংবা কোনো ইবাদতই ধারাবাহিকতার সঙ্গে করা সম্ভব নয়।
দুঃখজনক হলেও সত্য, আমরা যতটা না সালাতের চর্চা করি, সবরের চর্চা তার সিকি ভাগও করি না। ফলে আমাদের ব্যক্তিজীবন থেকে শুরু রাষ্ট্রীয় জীবন- কোথাও ধৈর্যের চিহ্ন দেখা যায় না। এর মারাত্মক ফল দাঁড়িয়েছে এই যে, জাতিগতভাবে আমরা আল্লাহর ওপর তায়াক্কুল করা ছেড়ে দিয়ে মানুষের ওপর, ক্ষমতার ওপর, নেতার ওপর নির্ভর করা শুরু করেছি।
মানুষ যখন আল্লাহ বিমুখ হয়ে যায়, তখন তাদের জন্য ধ্বংস ছাড়া আর কিছুই অপেক্ষা করে না। এখনো সময় আছে, আসুন আমরা মানুষের থেকে মুখ ফিরিয়ে সালাত ও সবরের মাধ্যমে আল্লাহর দিকে ফিরে আসি। তাহলেই আমাদের দুনিয়া-আখেরাতের জীবন সুন্দর-সুখী হবে।
গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...
খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর