কাতার অবরোধ অবিলম্বে প্রত্যাহারের দাবি

পারস্য উপসাগরীয় দেশ কাতারের বিরুদ্ধে সৌদি জোটের চাপিয়ে দেয়া অবরোধ অবিলম্বে প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন জাতিসংঘের একজন বিশেষজ্ঞ। তবে এ বিষয়ে সৌদি জোটের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।

সৌদি বাদশাহ সালমান ও কাতারের আমির শেখ তামিম (ডানে)

২০১৭ সালের জুনে সন্ত্রাসবাদে মদদ দেয়ার অভিযোগ তুলে কাতারের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে সর্বাত্মক অবরোধ আরোপ করে সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, মিশর ও বাহরাইন। এরপর ইরান ও তুরস্কের সঙ্গে সম্পর্ক কমানো, মুসলিম ব্রাদারহুডকে সমর্থন না দেয়া ও আলজাজিরা বন্ধসহ বেশ কিছু শর্ত জুড়ে দেয় চার দেশ।

সাম্প্রতিক এক রিপোর্টে জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞ অ্যালেনা ডুহান বলেছেন, কাতারের সঙ্গে সৌদি জোটের অবরোধের মূলে সন্ত্রাসবাদ নয়, আঞ্চলিক ঝামেলা। এভাবে একটি দেশের সাধারণ মানুষের মানবাধিকার হরণ করে সরকারকে শিক্ষা দেয়ার নীতি কোনো অবস্থায়ই গ্রহণযোগ্য নয়।

রিপোর্টে বলা হয়, নিষেধাজ্ঞার ফলে সাধারণ কাতারিদের মৌলিক অধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে। তাছাড়া দেশ চারটি থেকে কাতারিদের বহিষ্কার করায় তারা কাজ হারিয়েছেন, পারিবারিক সম্পর্কেও নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এটি সুস্পষ্টভাবে মানবাধিকারের লঙ্ঘন।

আলজাজিরা বন্ধের দাবির বিষয়ে জাতিসংঘ বিশেষজ্ঞ বলেন, এটি আন্তর্জাতিক আইনের বিরোধী। সম্প্রতি বেশ কয়েকটি সন্ত্রাসবিরোধী আইন করেছে কাতার সরকার। তার পরও অবরোধ অব্যাহত রাখাটা একেবারেই অমানবিক।

জাতিসংঘের পতাকা

ডয়চে ভেলের খবরে বলা হয়, অ্যালেনা ডুহানের মতো জাতিসংঘ বিশেষজ্ঞরা স্বাধীনভাবে কাজ করেন। তাদের দেয়া কোনো রিপোর্ট জাতিসংঘের হিসেবে বিবেচিত না হলেও সংস্থাটি তা গ্রহণ ও ব্যবহার করতে পারে। সে হিসেবে এই রিপোর্টটিও জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলের ২০২১ সালে অনুষ্ঠিতব্য বৈঠকে উপস্থাপিত হতে পারে।

সদ্য সমাপ্ত মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগ মুহূর্তে কাতারের ওপর তিন বছর ধরে চলা অবরোধ অবসানের ইঙ্গিত দিয়েছিল সৌদি আরব। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেওর সঙ্গে এক ভার্চুয়াল বৈঠকের পর এমনটাই জানান দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রিন্স ফয়সাল বিন ফারহান।

অবরোধের শুরু থেকেই সৌদি জোটের সব অভিযোগ অস্বীকার করে তা অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার অভিযোগ আনে কাতার। দেশটির আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি জানান, চলমান সংকট নিরসনে আলোচনায় বসতে তার দেশ প্রস্তুত রয়েছে। তবে চাপিয়ে দেয়া শর্তে নয়, তা হতে হবে কাতারের সার্বভৌমত্বকে সম্মান জানিয়ে।

সৌদি হুমকি উপেক্ষা করে ইরান, তুরস্ক ও মুসলিম ব্রাদারহুডের সঙ্গে সম্পর্ক আরো জোরদার করে কাতার। দেশটিতে বিখ্যাত মুসলিম সেনাপতি খালিদ বিন ওয়ালিদের নামে তৈরি তুর্কি ঘাঁটিতে থানি সরকারের সমর্থনে কয়েক হাজার সেনা মোতায়েন করেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যিপ এরদোয়ান। দেশটিতে তুরস্ক ও ইরান জরুরি খাদ্যসহ অন্যান্য সামগ্রী পাঠিয়ে পাশে দাঁড়ানোয় সৌদি জোটের অবরোধ ভেস্তে যায়।

তুর্কি প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান ও কাতারের আমির শেখ তামিম

সম্প্রতি তুর্কি প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান বলেন, শুধু কাতার নয়, পুরো পারস্য উপসাগরীয় দেশগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেই কাতারে তাদের সেনারা অবস্থান করছে। এর জবাবে তুরস্কের সামরিক ঘাঁটির কারণে মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি হয়েছে বলে পাল্টা অভিযোগ করেন আমিরাতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আনোয়ার গারগাশ।

ইরানের উত্থান ঠেকাতে উপসাগরীয় দেশগুলোকে ঐক্যবদ্ধ হতে এবং কাতারের ওপর আরোপ করা অবরোধের অবসান ঘটাতে চাইছে যুক্তরাষ্ট্র। বিষয়টি একাধিকবার প্রকাশ্যে বলেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী পম্পেও। এর আগে অবরোধ নিরসনে বেশ কয়েক দফা উদ্যোগ নেয়া হলেও তা ব্যর্থ হয়।