উপজেলা চেয়ারম্যান বলে কথা!

লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) গালিগালাজ করার অভিযোগ উঠেছে একই উপজেলার চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে। এ ছাড়া কর্মকর্তাদের হুমকি ও তাদের সঙ্গে অসদাচরণের কারণে জেলা প্রশাসকের (ডিসি) কাছে চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেছেন ইউএনওসহ উপজেলার বিভিন্ন দপ্তরের ১৮ জন কর্মকর্তা।

আদিতমারী উপজেলা পরিষদ- ফাইল ছবি

গত বৃহস্পতিবার লালমনিরহাটের ডিসি মো. আবু জাফরের কাছে এ অভিযোগ করেন আদিতমারী উপজেলার ইউএনও মুহাম্মদ মনসুর উদ্দিন ও ১৭ দপ্তরের কর্মকর্তাগণ। অভিযুক্ত চেয়ারম্যান হলেন ফারুক ইমরুল কায়েস। ইউএনওসহ ১৮ জন কর্মকর্তার স্বাক্ষর করা এই অভিযোগের অনুলিপি সমাজকল্যাণ মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ ও রংপুর বিভাগীয় কমিশনারের কাছেও পাঠানো হয়।

জানা যায়, গত বৃহস্পতিবার দুপুরে আদতমারী উপজেলা পরিষদে একটি মাসিক সমন্বয় সভার আয়োজন করা হয়। যেখানে উপজেলা চেয়ারম্যান ও ইউএনওসহ বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন। সভায় মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার কাছে চেয়ারম্যান ফারুক মাতৃত্বকালীন ভাতা ও ভিজিডি কার্ডের অংশ দাবি করেন। এ সময় মাতৃত্বকালীন ভাতা ও ভিজিডি কার্ড প্রদানে বিধি অনুযায়ী তালিকা প্রণয়নের কথা বলেন ইউএনও মনসুর। তার এ কথায় চেয়ারম্যান ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন এবং সভাস্থল ত্যাগ করেন।

আদিতমারী উপজেলা চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে কর্মকর্তাদের অভিযোগ

লিখিত অভিযোগে বলা হয়, সভাস্থল ত্যাগের কিছুক্ষণ পর উপজেলা চেয়ারম্যান তার একজন অনুসারী দিয়ে ইউএনও অফিস সংলগ্ন করিডরে থাকা একটি সিসিটিভি ক্যামেরা খুলতে থাকেন। এ সময় ইউএনও তার মোবাইল ফোনে ঘটনার ছবি তুলতে থাকেন। তখন চেয়ারম্যান ইউএনওকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে বলেন, ‘উপজেলা পরিষদ কি তুই চালাবি? এটা কি তোর বাবার সম্পত্তি? বেশি কথা বললে পিটিয়ে গ্রামের বাড়ি নরসিংদী পাঠিয়ে দিবো।’

এ সময় চেয়ারম্যান ফারুককে থামানোর চেষ্টা করেন উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্ত। এতে চেয়ারম্যান আরো ক্ষিপ্ত হয়ে প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাকে উপজেলা পরিষদ থেকে ঘাড় ধরে বের করে দেওয়ার হুমকি দেন। তখন উপজেলার বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তারা এর প্রতিবাদ করলে চেয়ারম্যান তাদেরও গালমন্দ করেন।

আদিতমারী উপজেলা চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে কর্মকর্তাদের অভিযোগ

পরে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যান আদিমারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুল ইসলাম। তিনি যাওয়ার পর ঠাণ্ডা হন চেয়ারম্যান ফারুক। পরিস্থিতিও নিয়ন্ত্রণে আসে। এর আগেও উপজেলা পরিষদের কর্মকর্তাদের সঙ্গে চেয়ারম্যানের অসদাচরণের কথা বলা হয় অভিযোগে।

এ বিষয়ে ইউএনও মুহাম্মদ মনসুর উদ্দিন বলেন, উপজেলা চেয়ারম্যান ফারুক উচ্চ শিক্ষিত। কিন্তু কর্মকর্তাদের সঙ্গে তার ব্যবহার মোটেও ভালো নয়। বার বার তার এ ব্যবহারের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেও কর্মকর্তারা ব্যর্থ। তাই বাধ্য হয়েই জেলা প্রশাসকের কাছে তারা অভিযোগ করেছেন। অভিযোগের বিষয়ে তাদের কাছে প্রমাণও আছে।

তবে অভিযোগের বিষয় অস্বীকার করে চেয়ারম্যান ফারুক ইমরুল কায়েস বলেন, উপজেলার অফিসগুলোতে অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়- জনগণের এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে তিনি প্রতিটি দপ্তরের কর্মকর্তাদের এসব বন্ধ করতে বলেছেন। কিন্তু কর্মকর্তারা তার এ কথা ভালোভাবে নেয়নি। তাই কর্মকর্তারা ইউএনও'র সঙ্গে মিলিত হয়ে তার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করেছে। এটি তার বিরুদ্ধে একটি ষড়যন্ত্র।

এদিকে, অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত করতে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উপ-পরিচালক (ডিডিএলজি) রফিকুল ইসলামকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন লালমনিরহাটের ডিসি মো. আবু জাফর।

তিনি জানান, আগামী তিন কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দিবেন তদন্ত কর্মকর্তা। প্রতিবেদন পাওয়ার পর দায়ী ব্যক্তির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে তা স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।