মুক্তিযোদ্ধাদের রাষ্ট্রীয় সম্মান প্রদর্শনে নতুন নির্দেশনা

১৯৭১ সালে জীবন বাজি রেখে যারা দেশের স্বাধীনতার জন্য লড়াই করেছেন সেসব যুদ্ধাহত ও খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মৃত্যুতে রাষ্ট্রীয়ভাবে সম্মান প্রদর্শনের ব্যাপারে নতুন করে নির্দেশনা জারি করা হয়েছে।গত মঙ্গলবার নতুন করে এ সংক্রান্ত একটি আদেশ জারি করেছে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়।

বীর মুক্তিযোদ্ধা- ফাইল ছবি

এর আগে ২০০৫ সাল পর্যন্ত দেশে মারা যাওয়া বীর মুক্তিযোদ্ধাদের রাষ্ট্রীয় সম্মান প্রদর্শন করেই সমাহিত বা সৎকার করা হতো। কিন্তু ওই বছর সরকার এ সংক্রান্ত আদেশটি বাতিল করে। দীর্ঘ ১৫ বছর পর নতুন করে ‘বীর মুক্তিযোদ্ধার মৃত্যুতে রাষ্ট্রীয়ভাবে সম্মান প্রদর্শন আদেশ, ২০২০’ জারি করেছে সরকার।

আদেশে বলা হয়, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত বিভিন্ন প্রমাণক তালিকার যেকোনো একটিতে নাম আছে- এমন মুক্তিযোদ্ধাদেরই মৃত্যুর পর রাষ্ট্রীয়ভাবে সম্মান প্রদর্শন করা হবে। এ জন্য সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসক (ডিসি) বা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) অবহিত করতে হবে। যেসব মুক্তিযোদ্ধা রাজধানী ঢাকায় অবস্থান করছেন তাদের ক্ষেত্রে মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টকেও অবহিত করা যাবে।

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়

মৃত মুক্তিযোদ্ধার পরিবারের সদস্য, আত্মীয়-স্বজন, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ বা দেশের যে কোনো নাগরিক বিষয়টি প্রশাসনকে জানাতে পারবেন। অবগত হওয়ার পর প্রশাসন এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বা সংবাদমাধ্যমে কোনো বীর মুক্তিযোদ্ধার মৃত্যুর খবর জানা গেলে সেক্ষেত্রে যাচাই-বাচাই করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

আদেশে আরো বলা হয়, কোনো বীর মুক্তিযোদ্ধা যদি মহানগর বা জেলা সদরে মারা যান তাহলে তাকে রাষ্ট্রীয় সম্মান প্রদর্শনের ক্ষেত্রে সরকারের প্রতিনিধিত্ব করবেন ডিসি। তিনি যদি জনগুরুত্বপূর্ণ বা রাষ্ট্রীয় কোনো কাজে ব্যস্ত থাকেন তাহলে এ দায়িত্ব পালন করবেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এডিসি)। উপজেলা পর্যায়ে মারা যাওয়া বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান প্রদর্শনের জন্য সরকারের প্রতিনিধিত্ব করবেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)। তিনি যদি জনগুরুত্বপূর্ণ বা রাষ্ট্রীয় কোনো কাজে ব্যস্ত থাকেন তাহলে এ দায়িত্ব পালন করবেন সহকারী ভূমি কমিশনার।

এতে আরো বলা হয়, সরকারের প্রতিনিধিরা রাষ্ট্রীয় সম্মান প্রদর্শনের শুরুতে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা দিয়ে মৃত বীর মুক্তিযোদ্ধার কফিন আবৃত করবেন। তারপর পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন কফিনে। এ সময় একটি নির্দিষ্ট সংখ্যক পুলিশ সদস্য মৃত মুক্তিযোদ্ধার প্রতি সশস্ত্র সালাম প্রদর্শন করবেন। পাশপাশি করুণ সুর বাজানো হবে বিউগলে।

মৃত মুক্তিযোদ্ধাকে গার্ড অব অনার প্রদানের এ কার্যক্রম পরিচালনা করবেন সংশ্লিষ্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি)। তিনি যদি রাষ্ট্রীয় কারণে ব্যস্ত থাকেন তাহলে সেই দায়িত্ব পালন করবেন পরবর্তী জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা। মৃত মুক্তিযোদ্ধা যদি সশ্রস্ত্র বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হন তাহলে তাকে ওই বাহিনীর নিজস্ব রীতি অনুযায়ী সম্মান প্রদর্শন করা হবে।

তারপর বীর মুক্তিযোদ্ধাকে তার শেষ ইচ্ছা বা ধর্মীয় বিধান মেনে সমাধিস্থ বা সৎকার করা হবে। এর আগে কফিন থেকে জাতীয় পতাকা খুলে নেওয়া হবে। কোনো মুক্তিযোদ্ধার পরিবার যদি অসচ্ছল হয়, তাহলে তাদের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে অনুদান দেওয়া হবে।