পাকিস্তানের ইতিহাসে প্রথম তৃতীয় লিঙ্গের আইনজীবী

ধর্মীয় রক্ষণশীল দেশ হিসেবে পরিচিত পাকিস্তানে এক সময় তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের 'অচ্ছুত' হিসেবে দেখা হতো। এমনকি এখনো কিছু কিছু জায়গায় এই অবস্থা রয়েছে। তবে ধীরে ধীরে সেটার পরিবর্তন হচ্ছে। ২০১৮ সালে দেশটির পার্লামেন্টে তাদের অধিকার সুরক্ষায় একটি আইন পাস করে সরকার।

সহকর্মীদের সঙ্গে আলাপরত পাকিস্তানের ইতিহাসে প্রথম তৃতীয় লিঙ্গের আইনজীবী (ডানে)

ওই আইনের আওতায় অন্য সবার মতো 'হিজড়া' বা তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদেরও সমঅধিকারের স্বীকৃতি এবং সামাজিক বৈষম্য ও নৃসংশতা থেকে সুরক্ষা নিশ্চিত করার অধিকার দেয়া হয়েছে। আর সেটির রেশ ধরেই এবার পাকিস্তানের ইতিহাসে প্রথম তৃতীয় লিঙ্গের আইনজীবী হিসেবে রেকর্ড সৃষ্টি করলেন ২৮ বছরের নিশা রাও।

সম্প্রতি তিনি কালো কোট পরিধান করে মক্কেলের খোঁজে করাচির সিটি কোর্টে হাজির হয়েছেন। এর মধ্য দিয়েই ইতিহাসের অংশ হয়ে গেলেন এই আইনজীবী।

সর্বপ্রথম ২০০৯ সালে পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্ট জাতীয় পরিচয়পত্রে হিজড়াদের তৃতীয় লিঙ্গ হিসেবে পরিচয় প্রদান করে। কিন্তু তাদের অধিকাংশই এখনো যৌন নিপীড়নের শিকার হন এবং বিয়ে বাড়িতে নেচে-গেয়ে কিংবা রাস্তায় ভিক্ষা করে জীবন চালায়।

নিশা রাও

তবে নিশা তার জীবনকে এভাবে পরিচালিত করতে চাননি। লাহোরের একটি মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম হয় তার। কিন্তু সমাজের কটূ কথার ভয়ে মাত্র ১৮ বছর বয়সেই নিশাকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেয় তার পরিবার।

সেখান থেকে তৃতীয় লিঙ্গের আরো দুই জনের সঙ্গে করাচি এসে অন্য হিজড়াদের কাছে আশ্রয় নেয়। তবে বাকিরা তাকে সৎ পরামর্শ না দিয়ে রাস্তায় ভিক্ষা করতে বা যৌনকর্মী হতে বলে। কিন্তু নিশার পরিকল্পনা ছিল ভিন্ন। তাইতো ভিক্ষা করে পাওয়া অর্থ দিয়ে একটি নৈশ ল’ কলেজে ভর্তি হয়ে যান। কয়েক বছরের চেষ্টায় সেখান থেকে ‍তিনি আইনের ডিগ্রি অর্জন করেন। চলতি বছরের শুরুতেই করাচি বার অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য হয়ে ইতিহাসের অংশ হয়ে যান।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেয়া সাক্ষাৎকারে নিশা রাও জানান, ইতিহাস সৃষ্টি করতে পেরে তিনি গর্বিত। তার হাতে এখন অর্ধশত মামলা আছে এবং একই সঙ্গে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের অধিকার নিয়ে কাজ করে, এমন একটি এনজিওর হয়েও কাজ করছেন।