সমর্থকরা যে কোনো খেলার প্রাণ। কিন্তু প্রিয় দলকে সমর্থন দিতে গিয়ে কিংবা দলটার প্রতি আবেগাপ্লুত হয়ে ফুটবলপ্রেমিরা মাঝে মাঝে উদ্ভট সব কাণ্ড করে বসেন। যা পুরনো প্রবাদটাকে নতুন করে ভাবাতে বাধ্য করে। দুষ্ট গরুর চেয়ে শূন্য গোয়াল অনেক ভালো। প্রবাদটা চলমান ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপের জন্য প্রযোজ্য হয়ে উঠছে। ইউরোর পনেরতম আসরের সূচনালগ্ন থেকেই যে কাঠগড়ায় সমর্থকরা!

spectators creating problem in euro cup

সন্ত্রাসবাদ ঠেকাতে আসরে পাঁচ স্তরের নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছে আয়োজক দেশ ফ্রান্স। ইউরোপিয়ান ফুটবলের সর্বোচ্চ প্রতেযোগিতার মাঝের শুরু হয়ে হলেও জঙ্গি হামলা, অতর্কিত সন্ত্রাসবাদের মতো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। তাই বলে হাত গুটিয়ে বসে থাকার সুযোগ নেই ফ্রান্সের পুলিশ সদস্যদের। বেপরোয়া সমর্থকদের ঠেকাতে ব্যস্ত সময় কাটাতে হচ্ছে ফ্রান্সের প্রশাসনকে।

সমর্থকদের বিশৃঙ্খলার শুরু ও সর্বশেষ দু'টোই মার্শেইতে। ১২ জুন মার্শেই শহরের রাজপথ রক্তে রঞ্জিত করেছিল ইংল্যান্ড-রাশিয়া সমর্থকদের ব্যাপক সংঘাত। মার্শেইর মারামারি উগ্র সমর্থকরা টেনে নিয়ে গিয়েছিলেন লিলেতেও। সেখানে তাদের সঙ্গে যোগ দেন ওয়েলস ও স্লোভাকিয়ার ফুটবলপাগলরা। ‌'বি' গ্রুপে থাকা দলগুলোর সমর্থকদের আবার উস্কে দিয়েছে স্বাগতিক ফ্রান্সের অুনসারিরা।

এই পাঁচ দলের সমর্থকরা লিলে এতটাই বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছিলেন যে রূদ্রমূর্তি ধারণ না করে পারল না ফ্রান্সের আইনশৃঙ্খলাবাহিনী। সমর্থকদের ছত্রভঙ্গ করতে লাঠিচার্জের পাশাপাশি টিয়ার গ্যাস, পিপার স্প্রে ছুড়েছে ফ্রেঞ্চ পুলিশ। সেদিনও ৩৭ জনকে আটক করেছিল ফ্রান্স প্রশাসন। এই ঘটনা পরবর্তীতে অতিথি সাধারণ সমর্থকদের জন্য হয়ে উঠেছে 'আটক বা গ্রেফতার আতঙ্ক'। তবে এতকিছুও দমাতে পারেনি ফুটবল উগ্রবাদীদের। বরং তারা সমণ্বিত হয়ে পুলিশের ওপর হামলা চালাতে মরিয়া হয়ে উঠেছিল।

ইংল্যান্ড ও রাশিয়ার সমর্থকদের সপ্তাহব্যাপী মারামারি ইউরোর নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলেছিল। বাধ্য হয়ে দুই দেশের ফুটবল সংস্থাকে তাদের অনুসারীদের থামানোর হুঁসিয়ারী দিয়েছিল উয়েফা। রাশিয়াকে তো নিষিদ্ধের বার্তাও শুনিয়েছিল উয়েফা। তবে সেটার স্থায়িত্ব ঘণ্টাখানেকও ছিল না। ইউরোপিয়ান ফুটবলের সর্বোচ্চ সংস্থা নিষেধাজ্ঞা নাটকে অবশ্য কিছুটা শান্ত হয়েছেন রাশান সমর্থকরা।

এর ফাঁকে রাশিয়ার এক ফুটবল সংগঠকের উস্কানিমূলক বক্তব্য পরিস্থিতি আরো ঘোলাটের দিকে নিয়ে গিয়েছিল। স্বদেশী ফুটবল অনুরাগীদের ইংলিশ ভক্তকূলের উপর হামলার ভূয়ষী প্রশংসা করেছেন। রোববার রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনও এক প্রকার উস্কানিমূলক বক্তব্য ছুড়ে দিয়েছেন। বলেছেন, 'দুইশ রাশিয়ান সমর্থক কীভাবে হাজার হাজার ইংলিশ ফ্যানদের উপর হামলা করে?'

spectators creating problem in euro cup 1

ইংলিশ-রাশানদের তাণ্ডবের রেশ পুরোপুর না কাটতে আগ্রাসী হয়ে উঠেছেন ক্রোয়েশিয়ার সমর্থকরা। শুক্রবার ক্রোট সমর্থকদের বিশৃঙ্খলা ছাড়িয়ে গেল ইংলিশ-রাশানদের সংঘর্ষ-সংঘাতের ঘটনাকেও। শুক্রবার সেন্ট এঁতের সবুজ ময়দান পুড়িয়েছেন বোমা ও আগুনের ফুল্কি নিক্ষেপ করে। মূলত জোড়া গোলে এগিয়ে থাকার পরও ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ হারানোয় ক্ষোভের এমন বিস্ফোরণ ঘটিয়েছেন ক্রোটপ্রেমীরা।

বিষয়টি সুষ্ঠুভাবে খতিয়ে দেখছে উয়েফা। সংস্থাটির একটি সূত্র এ রকম আভাসও দিয়ে ফেলেছে বড় ধরণের শাস্তি পেতে পারে ক্রোয়েশিয়া ফুটবল ফেডারেশন। শাস্তি থেকে এড়াতে পারবে না চেক প্রজাতন্ত্র, গ্রুপের আরেক প্রতিদ্বন্দ্বি তুরস্কও। সেন্ট এঁত স্টেডিয়ামের গ্যালারীতে ক্রোট সমর্থকেদের সঙ্গে মারপিট করেছে চেকপ্রেমরীরা। তুর্কি সমর্করা হামলা চালিয়েছের স্প্যানিশ সাপোর্টারদের উপর।

তবে আলোচনার মূলে কিন্তু ক্রোট সমর্থকরাই। গুটি কয়েকজন সমর্থক মাঠে অগ্নিফুল্কি নিক্ষেপের ঘটনা যে ক্রোয়েশিয়া ফুটবলের জন্য সর্বনাশ ডেকে এনেছে কার্যত এটা স্পষ্ট। তাই ম্যাচ পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে ক্ষমা চেয়েছিলেন ক্রোট কোচ অ্যান্তনি ক্যাকিক। বিশৃঙ্খলাকারীদের 'ক্রীড়াঙ্গনের সন্ত্রাস' বলেও আখ্যায়িত করেছেন তিনি। সমর্থকদের পাগলামির সীমা লঙ্ঘন করায় কোচের পর শনিবার ক্ষমা চেয়েছে ক্রোয়েশিয়া ফুটবল ফেডারেশনও। তাতে অবশ্য শাস্তি এড়াতে পারছে না সিএফএফ, তবে শাস্তিটা লাঘব হতে পারে।

বোমা (প্রাণঘাতী নয়) নিক্ষেপ ও আগুনের কুণ্ডুলি ছোড়ার ঘটনায় খেলোয়াড়, রেফারি কিংবা ম্যাচ অফিসিয়ালসদের কেউ হতাহত হননি। তবে ৫ মিনিট বন্ধ রাখতে হয়েছিল ক্রোট-চেক ম্যাচটা। শেষ অবধি ম্যাচটা অমীমাংশিত থেকে গেছে ২-২ গোলে।

spectators creating problem in euro cup 2

অবশ্য ম্যাচের ফলটা হয়ে উঠেছে গৌণ একটা ব্যাপার। মুখ্য ইসু হয়ে দাঁড়িয়েছে ক্রোট সমর্থকদের আতঙ্ক ছড়ানো কাণ্ড। সমর্থকরা কাঠগড়ায় তো আছেনই, সঙ্গে প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে উঠেছে ফ্রান্সের আসর আয়োজনও। বিশ্বের বিভিন্ন গণমাধ্যমে চলছে ফ্রান্স প্রশাসনের মুণ্ডুপাত। কথা উঠছে এ কেমন নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা? যেখানে বিস্ফোরক দ্রব্যাদি নিয়ে স্টেডিয়ামে প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে?

এই প্রশ্নটা তাজা থাকতেই মার্শেই তে আরেকদফা মারামারির নাটক হয়ে গেছে। যেখানে এবার প্রধান চরিত্রে হাঙ্গেরির সমর্থকরা। শনিবার আইসল্যান্ড ম্যাচের আগ মুহূর্তে স্টেডিয়ামে পুলিশের সঙ্গে ব্যাপক সংঘাত করেছে হাঙ্গেরির সমর্থকরা। বার্তা সংস্থা এএফপি জানিয়েছে গ্যালারীর চূড়ায় ওঠার চেষ্টা করেন হাঙ্গেরির সমর্থকরা। সেখানে আইসল্যান্ডের সমর্থকরা আগে থেকে উপস্থিত হওয়ায় পুলিশ তাদের সেখানে যাওয়ার অনুমতি দেয়নি। তখণ কথা কাটাকাটির এক ফাঁকে ফ্রেঞ্চ পুলিশকে ঘুসি মেরে বসেন হাঙ্গেরি এক সমর্থকরা। রক্তাক্ত অবস্থায় ওই পুলিশকে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। পরে গ্যালারীতে কয়েক মিনিটের মারপিট হয়ে গেছে পুলিশ ও হাঙ্গেরি ফানদের মধ্যে। এ সময় লাঠিচার্জের পাশাপাশি অতিথি সমর্থকদের লক্ষ্য করে পিপার স্প্রে ছুড়েছে ফ্রেঞ্চ পুলিশ।

শুধু ফ্রেঞ্চ পুলিশই নন, সমর্থকদের উগ্র আচরণের শিকার হয়েছেন ক্রীড়া সাংবাদিকেরাও। টুর্নামেন্টের নিউজ কাভারেজ করতে এসে লাঞ্ছিত হয়েছেন ব্রাজিলের দু'জন সংবাদকর্মী। বৃহস্পতিবারর গারে ডু নর্ড রেল স্টেশনের সামনে জার্মান সমর্থকরা বর্ণবাদ আচরণ করার পাশাপাশি তাদের উপর হামলাও করেছেন।ব্রাজিলিয়ান টিভি চ্যানেলের ক্যামেরাম্যান ফার্নান্দো ডি হেনরিক অলিভেইরার ভাষ্য অনুযায়ী, দায়িত্ব পালনের সময় তাঁকে চড় মারার পাশাপাশি সহকর্মী সোনিয়া ব্লোটাকে লাথি মারার মতো ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটিয়েছেন জার্মানরা।

আপনি আরো পড়তে পারেন

মেসি-হিগুয়েইনে রাজসিক জয়, সেমিতে আর্জেন্টিনা

রোনালদোর দুঃস্বপ্নের মাইলফলক, খাদের কিনারে পর্তুগাল

টিকে থাকল বেলজিয়ামের আশা

‘শুরু থেকেই খেলবেন মেসি’

আর্জেন্টিনার সামনে ভেনেজুয়েলা

Stay on top of the latest sports news, including cricket and football, from around the world. Get comprehensive coverage of matches, tournaments, and leagues— along with expert analysis and commentary from our team of sports journalists. Whether you're a die-hard fan or a casual observer, you'll find everything you need to know about your favorite sports here.

Sports, cricket, and football are popular topics in the world of sports. Cricket is a bat-and-ball game played between two teams of eleven players and is particularly popular in South Asian countries. Football, also known as soccer, is a team sport played with a spherical ball between two teams of eleven players and is widely popular worldwide. Sports enthusiasts follow the latest news, matches, tournaments, and leagues in these sports and analyze and comment on the performances of players and teams.