বঙ্গবন্ধুর জন্য রোজা রাখেন, কোরবানিও দেন তিনি

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ভালোবেসে মাঝে-মধ্যেই তার জন্য রোজা রাখেন ৬৮ বছরের বৃদ্ধ আব্দুল মান্নান মিয়া। দোয়া-মাহফিল আয়োজন করার পাশাপাশি জাতীয় শোক দিবসে বঙ্গবন্ধুর নামে কোরবানিও দেন। দলীয় নেতাকর্মীসহ গরীব-দুঃখীদের দাওয়াত দিয়ে খাওয়ান। এমনকি নিজের বাড়িতে তৈরি করেছেন বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর।

আব্দুল মান্নান মিয়া

বঙ্গবন্ধু ও আওয়ামী লীগের প্রতি নিবেদিত প্রাণ আব্দুল মান্নান মিয়ার বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সদর উপজেলার বুধল ইউনিয়নে। তার ইচ্ছা মৃত্যুর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে একটিবার দেখা করা এবং বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরটি সরকারের কাছে হস্তান্তর করে দেয়া।

রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে হারিয়েছেন নিজের সকল স্বয়-সম্পত্তি। তবুও দমে যাননি। বঙ্গবন্ধু ও আওয়ামী লীগকে ভালোবেসে তৈরি করেছেন বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর। সেখানে আছে বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার ছবি, বিভিন্ন ঘটনায় আহত আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ছবি, বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী, কারাগারের রোজ নামচাসহ বিভিন্ন বই।

তিনি জানান, ১৯৬৮ সাল থেকে আওয়ামী লীগের নিবেদিত কর্মী হিসেবে দলের জন্য কাজ করছেন এবং এর জন্য অনেকে তাকে 'পাগল' বলে আখ্যায়িত করেন। ২০০০ সালে দুর্বৃত্তরা তার বসতঘরটিতে আগুন লাগিয়ে দেয়। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে প্রায়ই ক্ষমতাসীনদের দ্বারা নির্যাতনের শিকার হতেন।

সদর উপজেলার অষ্টগ্রামে তার অসংখ্য জমিজমা ও বাড়ি ছিল। ২০০৩ সালের দিকে এলাকার প্রভাবশালী এবং তৎকালীন চারদলীয় জোট সরকারের অনুসারী আশরাফ আলী ভেন্ডারী তার সরলতাকে কাজে লাগিয়ে নানাভাবে চাপ প্রয়োগ ও ভয়ভীতি দেখিয়ে ১২০ শতাংশ জায়গা এবং স্থানীয় মার্কেটের ১৮টি দোকান ঘর নিজ নামে লিখে নেন। এমনকি মিথ্যা মামলায় ৮ মাস জেলও খাটান, যোগ করেন আব্দুল মান্নান মিয়া।

মান্নান মিয়ার বাড়ি

বর্তমানে কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কের পাশে একটি জরাজীর্ণ বাড়িতে স্ত্রী রওশনারা বেগমসহ থাকেন আব্দুল মান্নান মিয়া। এক সময় মুদি ব্যবসায়ী ছিলেন। এখন সারাদিন বাড়িতেই থাকেন। তার তিন ছেলে ও দুই মেয়ে আছে। মেয়েদের বিয়ে হয়ে গেছে এবং ছেলেরা এলাকাতেই ছোট-খাট কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন।

ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন বলেন, ১৯৯২ সাল থেকে ওনাকে চিনি এবং মান্নান মিয়া দলের জন্য অনেক কাজ করেছেন। আগে দলের সকল সকল মিটিংয়ে উপস্থিত থাকতেন। এখন অসুস্থ হওয়ায় সেটা আর সম্ভব হয় না, তবুও মাঝে-মধ্যে আমাদের নিষেধ সত্ত্বেও চলে আসেন। তার জীবনের শেষ ইচ্ছা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করা এবং সেটা করিয়ে দিতে পারলে আমরা খুশি হবো।

ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল হক বলেন, ১৯৭০ সাল থেকেই তিনি আওয়ামী লীগের সঙ্গে যুক্ত এবং দলের জন্য নিবেদিত প্রাণ। শহরে দলের মিটিং-মিছিলে অংশ নিতে নিয়মিত ৮-১০ কিলোমিটার পথ পায়ে হেঁটে পাড়ি দিতেন। নিষেধ সত্ত্বেও এখনো তিনি সভা-সমাবেশে আসেন।