আল্লামা শফীর শ্যালক: ‘চরম মিথ্যাচার’ করেছেন বাবুনগরী

আল্লামা শাহ আহমদ শফীর মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী ‘চরম মিথ্যাচার’ করেছেন বলে মন্তব্য করেছেন তার শ্যালক মাঈন উদ্দীন রুহী। আজ শনিবার দুপুরে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের ব্যানারে করা সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি।

রুহীর সংবাদ সম্মেলন

গত ২৩ ডিসেম্বর চট্টগ্রামের হাটহাজারী মাদ্রাসায় হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ ও মাদ্রাসাটির পক্ষ থেকে যৌথ সংবাদ সম্মেলন করা হয়। এতে কথা বলেন হেফাজতের আমির আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী।

সংগঠনটির সাবেক আমির আল্লামা শফীর ‘স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক হীন চক্রান্তে’ তাকে নিয়ে হত্যার মামলা করা হয়েছে। মাদ্রাসার শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নষ্ট ও হেফাজত নেতাদের হয়রানি করতে এটি করা হয়েছে।

এক প্রশ্নের জবাবে বাবুনগরী বলেন, আল্লা শফী (রহ.) জীবিত থাকতে যারা ফায়দা লুটেছে, তারাই এখন রাজনৈতিক স্বার্থ উদ্ধারে নেমেছে। মন্ত্রীর কাছ থেকে নিজেদের ফায়দা লুটতে মামলাটি করেছেন তারা। ‘চিহ্নিত এই দালালদের’ কয়েকজনকে আমরা চিনি, দেশবাসীও চেনে। এখন তাদের নাম বলছি না আমি।

বাবুনগরীর সংবাদ সম্মেলন

বাবুনগরীর এসব বক্তব্যকে ‘চরম মিথ্যাচার’ আখ্যা দিয়ে আজ সংবাদ সম্মেলনে মাঈন উদ্দীন রুহী বলেন, বয়োবৃদ্ধ এই আলেমের এমন মিথ্যাচার অকল্পনীয় ও বিস্ময়কর। গত ১৬-১৯ সেপ্টেম্বর হাটহাজারী মাদরাসার ঘটনাপ্রবাহ আপনারা সবাই জানেন।

সে সময় বাবুনগরী মাদরাসায় অবস্থান নিয়ে সকল ঘটনা ফেসবুক লাইভে প্রচার করেছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘শহীদ’ আল্লামা শফীর রুমে কীভাবে ভাঙচুর করা হয়, তা সবাই দেখেছে।

কয়েকজন মাওলানা গিয়ে মাদরাসা থেকে শফীকে পদত্যাগে বাধ্য করেন দাবি করে রুহী বলেন, এর পরই অক্সিজেন মাস্ক খুলে হুজুরকে মৃত্যুর দিকে ঠিলে দেয়া হয়।

আল্লামা শফীর জানাজা

আল্লামা শফীর জানাজায় ইমামতি করেন তার পুত্র মাওলানা ইউসুফ মাদানী। জানাজার আগে দেয়া বক্তব্যে পিতার মৃত্যুকে স্বাভাবিক বলে জানান তিনি। তবে তাকে ‘অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে’ এতে বাধ্য করানোর অভিযোগ তুলেছেন রুহী।

তিনি বলছেন, বাবুনগরীর ছত্রছায়ায় পরিকল্পিতভাবে জানাজায় অবস্থান নেয় জামায়াত, শিবির, বিএনপি, হুজী, হিজবুত তাহরিরসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীরা। তারা ইউসুফ মাদানীর বক্তব্য সীমিত ও নির্ধারিত করে দেয়।

মাঈন উদ্দীন রুহীর সংবাদ সম্মেলনে ইউসুফ মাদানী উপস্থিতি ছিলেন না। এর ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে রুহী বলেন, ইউসুফ মাদানীকে আসতে দেয়নি আল্লামা মামুনুল হক বাহিনী, হাটহাজারী থেকে ফিরিয়ে দেয়া হয় তাকে।

আল্লামা শাহ আহমদ শফী ও আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী

এর আগে হাটহাজারী মাদ্রাসায় আল্লামা শফীর অক্সিজেন খুলে রাখার অভিযোগ নাকচ করেন মাদ্রাসাটির পরিচালক বাবুনগরী। তিনি বলেন, তখন হুজুরের ব্যক্তিগত সহকারী (খাদেম) মাওলানা শফিউল আলমসহ মাদ্রাসার বেশ কয়েকজন শিক্ষক সেখানে উপস্থিত ছিলেন, সেখানে এমনটা হওয়ার প্রশ্নই উঠে না।

এ সময় উপস্থিত থাকা মাওলানা শফিউল আলম বলেন, আহমদ শফী সাহেবের অক্সিজেন খোলার কোনো ঘটনা ঘটেনি। এটি ডাহা মিথ্যা অভিযোগ।

প্রসঙ্গত, ২০১৩ সালে শাপলা চত্বরের কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে কার্যত দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে হেফাজতে ইসলাম। শাহ আহমদ শফীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে মাদ্রাসা ও হেফাজতের নেতৃত্ব নিয়ে তা প্রকাশ্যে আসে।

বাবুনগরী ও আনাস মাদানি

একভাগে আছেন সর্বশেষ মাদ্রাসা ও হেফাজতের নেতৃত্ব থেকে ছিটকে পড়া আহমদ শফীর ছেলে আনাস মাদানী। অন্যভাগে রয়েছেন উভয় ক্ষেত্রে নেতৃত্ব ফিরে পাওয়া আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী।

আনাস মাদানীর নেতৃত্বাধীন অংশটি বরারবই দাবি করে আসছে, আল্লামা শফীর মৃত্যু স্বাভাবিক ছিল না, তাকে হত্যা করা হয়েছে। এ অভিযোগে গত ১৭ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-৩ এ নালিশি মামলাটি দায়ের করেন আহমদ শফীর শ্যালক মোহাম্মদ মাঈন উদ্দিন। এটি আমলে নিয়ে তদন্তে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) নির্দেশ দেন আদালত।

প্রধান আসামি করা হয়েছে- সম্প্রতি ভাস্কর্যবিরোধী বক্তব্য দিয়ে তোপের মুখে পড়া হেফাজতের যুগ্ম মহাসচিব আল্লামা মামুনুল হককে। এ ছাড়া আরো ৩৫ জনকে আসামি করা হয়েছে মামলাটিতে।

তবে হেফাজত আমির বাবুনগরীসহ বর্তমান নেতৃত্ব দাবি করে আসছে, আল্লামা শফী আগে থেকেই অসুস্থ ছিলেন। যখন বেশি অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন, হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ নিয়ে কোনো গাফিলতি করা হয়নি।