দুই দেশের সম্প্রীতির সেতুবন্ধন এক মসজিদ

বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের অধিকাংশ স্থানে বিভিন্ন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলেও একটি স্থানের পরিস্থিতি সম্পূর্ণই বিপরীত। সেখানে উভয় দেশের মানুষের মধ্যে সৌহার্দ্য, ভ্রাতৃত্ব ও সম্প্রীতির সেতুবন্ধন গড়ে উঠেছে। মূলত একটি মসজিদকে কেন্দ্র করেই তাদের মাঝে সম্প্রীতির এ বন্ধন।

বাঁশজানী ঝাকুয়াটারী জামে মসজিদে নামাজ পড়েন ভারত-বাংলাদেশের মানুষ

কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী উপজেলার পাথরডুবি ইউনিয়নের বাঁশজানি সীমান্তে অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী বাঁশজানী ঝাকুয়াটারী জামে মসজিদ। এটি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৮২০ সালে। অর্থাৎ ব্রিটিশ আমল থেকে মসজিদটি দাঁড়িয়ে আছে। বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের আন্তর্জাতিক মেইন পিলার ৯৭৮-এর সাব পিলার ৯ এসের পাশে অবস্থিত এই মসজিদে পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহার জেলার সাহেবগঞ্জ থানার ঝাকুয়াটারী গ্রাম ও কুড়িগ্রাম জেলার ভূরুঙ্গামারী উপজেলার পাথরডুবি ইউনিয়নের বাঁশজানি গ্রামের লোকেরা নিয়মিত নামাজ আদায় করে থাকেন। এক্ষেত্রে তাদের কোনো আইনি ঝামেলায়ও পড়তে হয় না।

জানা গেছে, বাংলাদেশের ভূখণ্ডে নির্মিত মসজিদটির নাম 'ঝাকুয়াটারী সীমান্ত জামে মসজিদ'। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের সময় গ্রামটির উত্তর অংশ ভারতে ও দক্ষিণ অংশ বাংলাদেশে পড়ে যায়। বাংলাদেশ অংশের নাম হয় বাঁশজানি গ্রাম। আর ভারতীয় অংশের নাম আগেরটাই থেকে যায়। পরে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ করলে গ্রামটি বেড়ার বাইরে পড়ে যায়। তবুও উভয় দেশের বাসিন্দারা এই মসজিদেই নিয়মিত নামাজ আদায় করেন। বিভিন্ন আচার-অনুষ্ঠানেও একে অপরকে আমন্ত্রণ করেন।

বাঁশজানী ঝাকুয়াটারী জামে মসজিদ

স্থানীয়রা জানান, পূর্ব পুরুষ থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত দুই বাংলার মানুষ মিলেমিশে বসবাস করেন এবং একসঙ্গে এই মসজিদটিতে নামাজ পড়েন। যে কোনো বিপদে-আপদে একে অপরের সহায়তায় এগিয়ে আসেন। যুগ যুগ ধরে সীমান্তের দুই পাড়ের মানুষের মাঝে সেতুবন্ধন চলমান রয়েছে।

তবে কেউ কেউ আক্ষেপের কথাও বলেন। জানান, মসজিদটির সংস্কার প্রয়োজন। কিন্তু গ্রামের মানুষদের সেই সামর্থ্য নেই। কর্তৃপক্ষকে জানালে তারা এসে ছবি তুলে ও ভিডিও করে নিয়ে যান। এরপর আর কারোরই খোঁজখবর থাকে না।

এ বিষয়ে ভূরুঙ্গামারী উপজেলা চেয়ারম্যান নুরুন্নবী চৌধুরী খোকন বলেন, ১৯৪৭ সাল থেকে দুই দেশের মুসল্লিরা মসজিদটিতে নামাজ আদায় করে আসছেন এবং এখন পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলার কোনো অবনতি ঘটেনি। এটির উন্নয়নমূলক কাজ করা গেলে দর্শনার্থীদেরও আকর্ষণ করানো যাবে। বিষয়টি সরকারের নজরে আনার চেষ্টা চলছে।

কুড়িগ্রামের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) ও উত্তরবঙ্গ জাদুঘরের প্রতিষ্ঠাতা অ্যাডভোকেট আব্রাহাম লিংকন বলেন, ছোট্ট ও জীর্ণ ঝাকুয়াটারী মসজিদটি সম্প্রীতির এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। এটি আন্তর্জাতিক বন্ধুত্বের চমৎকার একটি উঠান, যা উভয় দেশের ধর্মীয় পর্যটন হিসেবেও গড়ে উঠতে পারে।

সেটির জন্য এখানে আগে একটি প্রসারিত পাকা সড়ক দরকার জানিয়ে তিনি বলেন, স্থানীয় ও জেলা প্রশাসন কিংবা উভয় দেশ মিলে মসজিদটিকে দৃষ্টিনন্দন করতে পারলে আন্তর্জাতিক নজির সৃষ্টি হবে।