বাংলাদেশ-পাকিস্তান সম্পর্কে নজর ভারত-চীনের

পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক উন্নত বা উষ্ণ হচ্ছে বলে মনে করা হয়। সম্প্রতি ঢাকার ওপর থেকে ভিসা নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয় ইসলামাবাদ। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের সাথে ঢাকায় বৈঠক করেন পাক হাইকমিশনার ইমরান আহম্মেদ সিদ্দিকি। বৈঠকে একাত্তরের গণহত্যার জন্য পাকিস্তানকে ক্ষমা চাইতে বলা হয়।

চীন, পাকিস্তান ও বাংলাদেশের পতাকা

এর পরই দুই দেশের সম্পর্কের উন্নয়নের বিষয়ে কূটনৈতিক মহলে গুঞ্জন শুরু হয়। মনে করা হয়, দক্ষিণ এশিয়ার ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ-পাকিস্তান সম্পর্ক উন্নতি হলে তা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

কেননা, পাকিস্তানকে শত্রু এবং বাংলাদেশকে পরীক্ষিত বন্ধু হিসেবে বিবেচনা করে ভারত। এই শত্রুর সঙ্গে বন্ধুর ‘মসৃণ সম্পর্ক’ বা ‘উষ্ণ সম্পর্ক’ নিয়ে দেশটির কূটনীতিক বিশ্লেষকদের শঙ্কা বাড়ছে।

ঢাকার একটি জাতীয় পত্রিকার মতামত পাতায় দিল্লি থেকে অঞ্জন রায় চৌধুরীর লেখা এক নিবন্ধে এমনটাই বলা হয়েছে। তাতে ২০০৭-০৯ সাল পর্যন্ত ঢাকায় দায়িত্ব পালন করা ভারতীয় ইকমিশনার পিনাক রঞ্জন চক্রবর্তীর বক্তব্যও রয়েছে।

বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের পতাকা

বাংলাদেশ-পাকিস্তানের সম্পর্ক উন্নয়নে চীন সহায়তা করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ঢাকা ও ইসলামাবাদের সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে বেইজিং কাজ করছে, এতে কোনো সন্দেহ নেই।

‘ভারতের বিরুদ্ধে ব্যবহার করতে বাংলাদেশে পাকিস্তানের শক্তি বাড়াতে চায় চীন। ভারতের প্রতিবেশী দেশগুলোতে শক্ত ঘাঁটি গড়ার ‘স্ট্রিং পার্ল কৌশলের’ অংশ হিসেবে এমনচা চাইছে দেশটি।’

এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপির শাসনামলের উদাহরণ টানেন পিনাক চক্রবর্তী। বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন দলটি এখন দেশের সংসদের বাইরের বিরোধী দল হিসেবে রয়েছে।

বাংলাদেশ ও ভারতের পতাকা

নিবন্ধে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর শাহাব এনাম খানের বরাত দিয়ে বলা হয়, বাংলাদেশ-পাকিস্তানের সম্পর্ক স্বাভাবিক দেখতে চায় চীন, এ কথাটা ঠিক।

২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনের মাধ্যমে দেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে। সেই থেকে টানা তিন মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ক্ষমতায় রয়েছে দলটি।

২০১৯ সালের হিসাবে বাংলাদেশ-পাকিস্তানের মধ্যে ৫৪৩ মিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য হয়েছে বলে নিবন্ধে উল্লেখ করা হয়। উভয় দেশের এই বাণিজ্যে বড় বিনিয়োগকারী হিসেবে চীনের নাম বলা হয়।

বাংলাদেশ ও চীনের পতাকা

একই সময়ে চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য হয়েছে ১৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের। দেশটি বিনিয়োগ করেছে আরো ৪০ বিলিয়ন ডলারের, বলছেন ভারতীয় পর্যবেক্ষকরা।

২০১০ সালে একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের বিচারে ট্রাইব্যুনাল গঠনের পর ঢাকা-ইসলাবাদ সম্পর্কের অবনতি হয় বলে উল্লেখ করা হয়। পরে যুদ্ধাপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হলে পাক সংসদে তীব্র নিন্দা জানানো হয়। ভারতীয়দের মত, শাহরিয়ার আলম ও ইমরান সিদ্দিকির বৈঠক সেই সম্পর্ক আবার স্বাভাবিক হওয়ার ইঙ্গিত দিচ্ছে।

এর আগে গত বছর জুলাই মাসে পাক হাইকমিশনারের দায়িত্ব পান ইমরান আহম্মেদ সিদ্দিকি। ওই বছর পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ইমরান খান -ফাইল ছবি

একাত্তরের গণহত্যা বাংলাদেশকে এক ধরনের ট্রমার মধ্যে রেখেছে বলে মনে করেন শাহাব এনাম খান। এ জন্য পাকিস্তানের ক্ষমা চাওয়া আবেগপ্রবণ বিষয় এবং দীর্ঘদিনের দাবি বলে উল্লেখ করা হয়।

দীর্ঘ ৯ মাসের বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের শেষ সময়ে জড়িয়ে পড়েছিল পাকিস্তানের চির বৈরী ভারত। দেশটি বাংলাদেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক অব্যাহত রাখতে চায়। এ জন্য গত বছরের আগস্টে বাংলাদেশ সফর করেন ভারতীয় কূটনীতিক হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা। সে সময় উভয় দেশের সম্পর্ক আরো জোরদারের বিষয়ে আলোচনা হয়।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতিতে বিশ্বাস করে উল্লেখ করে বিশ্লেষকদের বরাতে বলা হয়, এ জন্য ঢাকার সঙ্গে ভালো সম্পর্ক রেখেই বিতর্কতি নাগরিকত্ব আইন ও তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তির দ্রুত সুরাহা করা উচিত।