মিয়ানমারে সেনা অভ্যুত্থানে আরো বিভাজিত আসিয়ান জোট
- Details
- by আন্তর্জাতিক ডেস্ক
মিয়ানমারে গত নভেম্বরের নির্বাচনে অং সান সুচির দল দ্য ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি (এনএলডি) প্রায় ৮৫ শতাংশ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়। তবে নির্বাচনে সুচির দলের বিরুদ্ধে জালিয়াতির অভিযোগ তুলে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। এরপর থেকেই সামরিক বাহিনীর সঙ্গে সুচি সরকারের সম্পর্ক ভালো যাচ্ছিলো না। সর্বশেষ নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগ তুলে গত সপ্তাহে এক অভ্যুত্থানে সেনাবাহিনী ক্ষমতা দখল করে।
মিয়ানমারের এ সংকটে বড় ধরনের ধাক্কার মুখে পড়েছে দক্ষিণপূর্ব এশিয়া। দীর্ঘদিন সমস্যার মধ্যে থাকা মিয়ানমার নিয়ে এ জোটের মধ্যে কোন ঐক্যমত দেখা যায় নি। নতুন সমস্যা নিয়েও এ অবস্থানের পরিবর্তন হয় নি। বরং মিয়ানমারের বর্তমান রাজনৈতিক সংকট অঞ্চলটিতে বিভাজন নতুন করে স্পষ্ট করে তুলেছে।
ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, ফিলিপাইন, ভিয়েতনাম, মিয়ানমার, কম্বোডিয়া, ব্রুনেই এবং লাওস- এই ১০ দেশ মিলিয়ে গঠিত এসোসিয়েশন অব সাউথইস্ট এশিয়ান নেশনস (আসিয়ান) জোট।
এশিয়া টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মিয়ানমারের অভ্যুত্থান আসিয়ান জোটকে বড় ধরনের ঝাঁকুনি দিয়েছে। তবে মিয়ানমারের সংকটে আসিয়ান কেন এতোটা প্রভাবিত হলো? মূলত বছরের পর বছর ধরে জোটের দেশগুলোর সমন্বিত নীরবতা, গণতান্ত্রিকভাবে দেশটির পিছিয়ে পড়া নিয়ে কোন রকম পদক্ষেপ না নেয়া এবং মিয়ানমারে চলে আসা নির্মমতা নিয়ে আসিয়ান নীরব দর্শকের ভূমিকা রেখে আসছে। এশিয়ার এ ছোট কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ দেশটির সমস্যা সমাধানে আসিয়ানের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত ঐক্যমতের কোন পদক্ষেপ দেখা যায় নি। বরং মিয়ানমার ইস্যুতে আসিয়ানের দেশগুলোর মধ্যে নানা মত দেখা গিয়েছে। এরমাধ্যমে অঞ্চলে ভূ-রাজনৈতিক বিভাজনের পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক পরিস্থিতির ভিন্নতা খুব স্পষ্টভাবে প্রতিফলিত হয়েছে।
এশিয়া টাইমসকে রিচার্ড হায়দারিয়ান জানান, মিয়ানমারের অভ্যুত্থান নিয়ে আসিয়ানের সদস্য দেশগুলো ভিন্ন ভিন্ন প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করেছে। কিছু সদস্য সরাসরি এ ঘটনার নিন্দা জানিয়েছে। আবার অনেকে চীনের মতো নীরব ভূমিকা নিয়েছে।
সমস্যাগ্রস্ত ফিলিপাইনের মতো আসিয়ানের কিছু দেশ মিয়ানমারের ঘটনার পর নিজেদের গণতন্ত্র নিয়েও শঙ্কিত। এসব দেশ আশঙ্কা করছে জোটের নীরবতার সুযোগ নিয়ে তাদের গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারের বিরুদ্ধেও একই ধরনের স্বৈরতন্ত্র দাঁড়াতে পারে।
এছাড়া কম্বোডিয়া এবং থাইল্যান্ডের স্বৈরশাসকরা মিয়ানমারের বিষয়ে চীনের মতো পরাশক্তিধর দেশগুলোর সঙ্গে সুর মেলাচ্ছে। মিয়ানমারে দীর্ঘদিন সংকট চললেও দেশটির বিরুদ্ধে কোনধরনের আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার বিপক্ষে চীন। দেশটির মিয়ানমারের এ সংকটকে পুরোপুরি অভ্যন্তরীণ সমস্যা বলে অভিহিত করে আসছে।
কম্বোডিয়ার নেতা হুন সেন ‘অভ্যন্তরীণ বিষয়’ বলে মিয়ানমারের সামরিক অভ্যুত্থানের বিষয়টিকে খুবই হালকাভাবে উড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি এ প্রসঙ্গে আরো বলেন, ‘কোন দেশের অভ্যন্তরীন বিষয়ে কম্বোডিয়া মন্তব্য করবে না। যদি আসিয়ান কাঠামোর মধ্যেও হয় তাহলেও এর ব্যতয় ঘটবে না।’
মিয়ানমারের আরেক প্রতিবেশি দেশ থাইল্যান্ডেও সেনাবাহিনীর ব্যাপক প্রভাব রয়েছে। পাঁচ বছরের সেনাশাসনের পর দেশটিতে বর্তমানে গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা চললেও সেনাবাহিনী সেখানে সর্বোচ্চ অবস্থানে রয়েছে। দেশটির বর্তমান উপ-প্রধানমন্ত্রী এবং সাবেক সেনাকর্মকর্তা প্রায়ুত ওংসোয়ানও মিয়ানমারের পরিস্থিতিকে ‘অভ্যন্তরীণ বিষয়’ বলে উল্লেখ করেছেন।
তবে থাইল্যান্ডে অবস্থানরত মিয়ানমারের হাজার হাজার অভিবাসী নিজ দেশে সংগঠিত অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে জোর প্রতিবাদ জানিয়েছে। এছাড়া ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া এবং সিঙ্গাপুরের মতো আসিয়ানের শীর্ষ দেশগুলো মিয়ানমারের সংকট কঠোর অবস্থান নিয়েছে। এ অঞ্চলের সবচেয়ে উন্নত দেশ এবং মিয়ানমারের শীর্ষ বিনিয়োগকারী এ বিষয় নিয়ে ‘গভীর উদ্বেগ’ প্রকাশ করেছে।
সিঙ্গাপুরের পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের পক্ষ থেকে দেয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘গোটা পরিস্থিতি আমরা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছি। আশা করছি সবপক্ষ আলোচনার মাধ্যমে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে সক্ষম হবে এবং দেশটিতে শান্তি ফিরে আসবে।’
মিয়ানমারের বিষয় নিয়ে মালয়েশিয়ার পক্ষ থেকেও উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রনালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ‘মিয়ানমারের বর্তমান পরিস্থিতি এবং মহামারীর প্রভাব থেকে পরিত্রানের জন্য নেতাদের মধ্যে অব্যাহত আলোচনার পক্ষে তারা।’
মিয়ানমারে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠির ওপর জান্তা সরকারের নিষ্পেশনের বিরুদ্ধে সবচেয়ে কঠোর ভূমিকা নিয়েছে মালয়েশিয়া। এশিয়ার দেশগুলো যেখানে এক্ষেত্রে কোন ধরনের হস্তক্ষেপের ভূমিকা নেয় নি সেখানে মালয়েশিয়া একাই রোহিঙ্গাদের পক্ষে কথা বলেছে।
গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...
খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর
Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.
Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.