গভীর সংকটে যুক্তরাষ্ট্র-তুরস্কের সম্পর্ক
- Details
- by আন্তর্জাতিক ডেস্ক
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে নতুন বছরে নতুন অধ্যায় শুরু হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছিলেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যিপ এরদোয়ান। তবে সম্প্রতি তুরস্কের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুলেমান সোয়লু অভিযোগ করেন, ২০১৬ সালের ১৫ জুলাই এরদোয়ান সরকারকে হটানোর উদ্দেশ্যে করা ব্যর্থ সামরিক অভ্যুত্থানের পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের হাত রয়েছে। এমন অভিযোগের পর প্রশ্ন উঠেছে, রাশিয়া ও চীনের মতো মার্কিন প্রতিপক্ষের সঙ্গে হাত মেলানো এরদোয়ান কী সত্যিই বাইডেন প্রশাসনের সঙ্গে সম্পর্ক গড়তে চায়?
যুক্তরাষ্ট্র-তুরস্ক সম্পর্কের যত সমীকরণ
গত সপ্তাহে তুরস্কের সংবাদমাধ্যম হুরিয়াত পত্রিকায় দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সুলেমান সোয়লু বলেন, এটা স্পষ্ট যে ১৫ জুলাইয়ের ব্যর্থ অভ্যুত্থানের পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের হাত রয়েছে। তাদের আদেশের ভিত্তিতে ফেতুল্লাহ সন্ত্রাসবাদী সংস্থা (ফেটো) এই অভ্যুথান ঘটাতে চেয়েছিল এবং ইউরোপ এই বিষয়ে উৎসাহী ছিল।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর এই অভিযোগ পুরোপুরি অস্বীকার করে তাৎক্ষণিক নিন্দা জানিয়েছে। ইউএস স্টেট ডিপার্টমেন্টের ভাষ্য, ‘তুরস্কের ঘটনার জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে দায়ী করা ভিত্তিহীন ও দায়িত্বজ্ঞানহীন। ন্যাটো এবং কৌশলগত বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অংশীদার হওয়ার পরও তুরস্কের এমন দাবি অসামঞ্জস্যপূর্ণ।’
ভারতের সংবাদ সংস্থা এএনআই জানায়, এরদোয়ানের বন্ধু হওয়ায় প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন যুক্তরাষ্ট্র ও তুরস্কের মধ্যে অনেক সম্ভাব্য দ্বন্দ্বের বিষয় এড়িয়ে গেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে জো বাইডেনের ক্ষেত্রে বিষয়গুলো সেরকম হবে না। এরদোয়ানের সঙ্গে বেশ কয়েকটি ইস্যুতে দ্বন্দ্ব হতে পারে নতুন মার্কিন প্রেসিডেন্টের। তবে তুরস্ককে বেশি দূরেও ঠেলে দেবেন না বাইডেন, কারণ তিনি আঙ্কারাকে পশ্চিমাদের সঙ্গে এবং ন্যাটো জোটের মধ্যে রাখতে চান।
বাইডেন
রাশিয়া থেকে এস-৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র ক্রয়কে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দ্বন্দ্বের বড় আশঙ্কা রয়েছে। ন্যাটোর অপারেশন সুরক্ষার জন্য হুমকিস্বরূপ এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলো না কেনার জন্য বারবার আহ্বান জানিয়েছে মার্কিন প্রশাসন। তবে যুক্তরাষ্ট্রের আহ্বান উপেক্ষা করে ২০১৯ সালে রাশিয়ার কাছ থেকে এই ক্ষেপণাস্ত্র নেয় আঙ্কারা এবং তা পরীক্ষাও করে। পরে গত বছরের ডিসেম্বরে তুরস্কের সামরিক সংগ্রহ সংস্থা এবং প্রতিরক্ষা শিল্প প্রতিষ্ঠানের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র।
গত শুক্রবার পেন্টাগনের মুখপাত্র জন কিরবি বলেন, নতুন মার্কিন প্রেসিডেন্ট চান আঙ্কারা যাতে রাশিয়ান এস-৪০০ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ত্যাগ করে। তিনি আরও বলেন, ‘তুরস্ক দীর্ঘদিন ধরে ন্যাটো জোটের মূল্যবান সদস্য। তবে সম্প্রতি এস-৪০০ কেনার সিদ্ধান্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটো মিত্র হিসাবে তুরস্কের প্রতিশ্রুতির সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ। আমরা তুরস্ককে এস-৪০০ না রাখার অনুরোধ করছি।
এর উত্তরে তুরস্ক ইনসিরলিক ঘাঁটি ব্যবহারে মার্কিন সেনাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারির হুমকি দিয়েছে। ওই ঘাঁটিতে বিপুল পরিমাণ মার্কিন সৈন্য, বিমান এবং প্রায় ৪০টি পারমাণবিক ওয়ারহেড রয়েছে।
এস-৪০০
দুই দেশের মধ্যে আরেকটি বড় দ্বন্দ্ব হতে পারে তুরস্কের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংক তুরকিয়ে হালক বানকাসির বিরুদ্ধে আদালত মামলা নিয়ে। মার্কিন নিষেধাজ্ঞা এড়াতে ইরানকে ২০ মিলিয়ন ডলার দিয়ে সাহায্য করার ক্ষেত্রে ব্যাংকটির বিরুদ্ধে জালিয়াতি এবং অর্থ পাচারের অভিযোগ আনা হয়েছিল গত বছর। গত জুনে ট্রাম্প ওই মামলার প্রধান আইনজীবীকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করেছিলেন।
হালক ব্যাঙ্ক ইরানকে সহায়তা করার অভিযোগ অস্বীকার করেছে। আগামী মার্চ মাসে মামলাটির বিচার শুরু হবে।
এছাড়াও সিরিয়া, ইরাক, লিবিয়া এবং আজেরবাইজানে আগ্রাসনমূলক নীতির কারণে তুরস্কের সঙ্গে মতবিরোধ রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের। এর পাশাপাশি উত্তর সাইপ্রাস দখল এবং কাতার ও সোমালিয়ায় সামরিক ঘাঁটি প্রতিষ্ঠারও ঘোর বিরোধী মার্কিনরা।
উপরন্তু এগান সাগর অঞ্চলে ন্যাটোর সদস্য দেশ গ্রিসের সঙ্গে এবং পূর্ব ভূমধ্যসাগরে সাইপ্রাস, গ্রীস এবং ফ্রান্সের সঙ্গে উত্তেজনা বাড়ছে তুরস্কের।
উল্লেখ্য, নির্বাচনী প্রচারণার সময় এরদোয়ানকে ‘স্বৈরশাসক’ বলে অভিহিত করে বাইডেন বলেন, ‘তাকে এর মূল্য দিতে হবে।’
এরদোয়ান
এর মাধ্যমে বাইডেন ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, নির্বাচিত হওয়ার পর এরদোয়ান প্রশাসনের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন। এরপর যদিও এরদোয়ান মুখে বলে যাচ্ছেন তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক দৃঢ় করতে চান, তবে এ বিষয়ে এখনো কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেননি তিনি।
আমেরিকান অগ্রগতির কেন্দ্রের জাতীয় নিরাপত্তা ও আন্তর্জাতিক নীতিবিষয়ক কেন্দ্রের পরিচালক ম্যাক্স হফম্যান বলেছেন, শাস্তিমূলক পদক্ষেপ নিতে গেলে তাদের অর্থনীতি ভেঙ্গে পড়বে। এতে করে তুরস্কের গণতন্ত্র আরও হুমকির মধ্যে পড়তে পারে এবং দেশটি সম্পূর্ণ রাশিয়াপন্থী হয়ে যাবে। যে কারণে যুক্তরাষ্ট্র তুরস্কের প্রতি কঠোর পদক্ষেপ নিতে পারবে না। আর মার্কিন ও ইউরোপীয় চাপের মুখে এরদোয়ানও তার দমনমূলক নীতি বদলাবেন না।
তিনি বলেন, তবে তুরস্কে ২০২৩ বা তার আগে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এতে এরদোয়ানের হারার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপ তুরস্কের আগ্রাসন রোধে লাল সংকেত দিতে পারে।’
গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...
খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর
Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.
Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.