আপনি পড়ছেন

সাধারণ এবং আলেম সমাজে সমানভাবে জনপ্রিয় পবিত্র কোরআনের ব্যাখ্যাগ্রন্থ সাফওয়াতুত তাফাসিরের লেখক শায়েখ আলি আস-সাবুনি (রহ.) ১৯৩০ সালে সিরিয়ার আলেপ্পায় জন্মগ্রহণ করেন। পিতা শায়েখ জামিল ছিলেন আলেপ্পার মস্তবড় আলেম। ইলমে দ্বীনের হাতেখড়ি হয় বাবার কাছেই। অল্প বয়সেই কোরআন হিফজ করেন।

ali as sabuni

প্রাথমিক শিক্ষা সম্পন্ন করার পর মাদসারায়ে আত-তিজারিয়ায় ভর্তি হন শায়েখ সাবুনি। তবে এখানে বেশি দিন পড়াশোনা চলল না। মূলত এখানে ছাত্রদের সুদভিত্তিক অর্থনীতির ওপর পড়াশোনা করানো হতো এ কারণেই কিশোর আলী সাবুনি এ মাদরাসা ত্যাগ করেন।

পরবর্তীতে তিনি আলেপ্পার অন্যতম শরিয়াহ ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান খাসরাউইয়্যাতে ভর্তি হন। বেশ কৃতিত্বের সঙ্গে এখান থেকে ১৯৪৯ সালে গ্রাজুয়েশন শেষ করার পর আলেপ্পার শিক্ষামন্ত্রণালয় কর্তৃক উচ্চ শিক্ষার জন্য মিশরের আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠানো হয় তাকে।

১৯৫২ সালে মিশরের আল আজহারের শরিয়া অনুষদ থেকে দ্বিতীয়বার তিনি গ্রাজুয়েশন করেন এবং ১৯৫৪ সালে শরিয়াহর ওপর বিশেষ কোর্স সম্পন্ন করে আলেপ্পায় ফিরে আসেন। ১৯৬২ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ আট বছর নিজ জন্মভূমিতে ইসলামের ওপর অধ্যাপনা করেন।

পরবর্তীতে তিনি মক্কার উম্মুল কোরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শরিয়া অনুষদের অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন। একই সঙ্গে তিনি মক্কার আরেক বিশ্ববিদ্যালয় কিং আবদুল আজিজের শিক্ষা অনুষদের অধ্যাপক হিসেবেও নিয়োগ পান। দীর্ঘ ২৮ বছর এ দুই বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেন তিনি। এ সময়ে অসংখ্য গুণী ছাত্র তার কাছে ইসলামের ওপর গভীর পান্ডিত্যের দীক্ষা নেন।

ali sabuni

অধ্যাপনার পাশাপাশি লেখালেখিও চালিয়ে যান তিনি। পবিত্র কোরআনের ব্যাখ্যা গ্রন্থ সাফাওয়াতুত তাফাসির তার অনবদ্য রচনা। এ তাফসির গ্রন্থটির অন্যতম বৈশিষ্ট হলো কোরআনের জটিল বিষয়গুলো সহজে খুব চমৎকারভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে।

যেসব বিষয় আলেমরা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে হিমশিম খেতেন, সে বিষয়গুলোর তিনি সুন্দর গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা দেওয়ার কারণে আলেম এবং সাধারণ মানুষের কাছে সাফাওয়াতুত তাফাসির বেশ সুখপাঠ্য তাফসির হয়ে উঠে। বাংলাদেশসহ বিশ্বের নামিদামি বহু বিশ্ববিদ্যালয় ও মাদরাসায় এ তাফসিরটি পাঠ্য।

পবিত্র কোরআনের ওপর আলী আস-সাবুনির আরেকটি গ্রন্থ হলো রাওয়ায়েউল বায়ান ফি আয়াতিল আহকাম। এ গ্রন্থটি গবেষক আলেমদের জন্য বিশেষ উপকারি গ্রন্থ। পবিত্র কোরআরে বিধান সম্বলিত আয়াতগুলো একত্রে করে ব্যখ্যা করা হয়েছে গ্রন্থটিতে। কোরআনের বিধানগুলো যে কতটা যৌক্তিক এবং বিজ্ঞানসম্মত তাই প্রমাণ করে দেখানো হয়েছে এ গ্রন্থে।

আলি সাবুনির উল্লেখযোগ্য আরো কয়েকটি গ্রন্থ হলো কাবস মিন নুরিল কোরআন, তাফসিরুল ওয়ামি আল মুয়াসসার, কাশফুল ইফতিরাত ইত্যাদি। এ মহান কোরআন গবেষক গত ১৯ মার্চ শুক্রবার মহান রবের ডাকে সাড়া দিয়ে আখেরাতের পথে পাড়ি জমান। তার মৃত্যুতে মুসলিম বিশ্বে শোকের ছাঁয়া নেমে আসে।

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর