আপনি পড়ছেন

তীব্র দাবদাহে পুড়ছে দেশ। আবহাওয়া অফিসের তথ্য মতে, এবার তাপমাত্রা চল্লিশের উপরে উঠতে পারে। এরমধ্যেই আবার করোনা সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি পৃথিবীবাসীর ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্নকে চাবুক মেরে অসাড় করে দিয়েছে। করোনার টিকা আবিষ্কারের পর আমরা ভেবেই নিয়েছি, মহামারি করোনা বুঝি এবার লেজ গুটিয়ে পালাবে। তাছাড়া গরমে করোনা বিদায় নেবে বলেও এতোদিন বলাবলি করছিলেন বিশেষজ্ঞরা।

nittoponno

সব হিসাব-নিকাশ পাল্টে দিলেন মাবুদ রাব্বানা। পবিত্র কোরআনের সুরা বুরুজের ১৬ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলেছেন, ‘ফাআলুল্লিমা ইউরিদ।’ যার অর্থ- তার ইচ্ছে মতই সবকিছু হয়।

প্রেমময় প্রভুর ইচ্ছে, করোনা আরো কিছুদিন পৃথিবীবাসীকে হুঁশিয়ার করবে। পবিত্র কোরআনে পূর্ববর্তী নবী-রাসুলদের ইতিহাসে পাওয়া যায়- আল্লাহর জলজ্যান্ত আজাব দেখেও তারা সতর্ক হতো না, হাসি-তামাশা করত। করোনা এসে সে দৃশ্যই আমাদের চোখে দেখিয়ে দিয়েছে। করোনার মত আজাব দেখেও আমরা হুঁশিয়ার হচ্ছি না। সতর্ক, হেদায়াত শব্দগুলো যেন আমাদের জন্য না। আমরা যে যার মত পারছি পাপের সাম্রাজ্য গড়ে তুলছি।

আমাদের সম্পর্কেই সুরা শোয়ারায় ইরশাদ হয়েছে, ‘পাপে ডুবে থাকার ফলে মানুষের মন পাথর হয়ে যায়। ভয়ংকর আজাব চোখে দেখা না পর্যন্ত তারা সতর্ক হয় না। আমার আজাব যখন তাদের পাকড়াও করে, তখন তারা বলে- হে আল্লাহ! আমাদের কি আরেকটু সুযোগও দেবেন না।’ সুরা শোয়ারা, আয়াত ২০০-২০৩।

আসলেই আল্লাহ তো বান্দাকে সুযোগ দেনই। সত্যি বলতে আমাদের পুরো জীবনই একটা সুযোগ। হাদিস শরিফে এসেছে, মৃত্যুর গড়গড়া শব্দ শুরু হওয়ার আগ পর্যন্ত আল্লাহ বান্দার তাওবাহ কবুল করেন। হায়! এত দীর্ঘ সুযোগ পাওয়ার পরও যখন আল্লাহর আজাব আমাদের ঘিরে ফেলে তখন আমরা আরেকটু সুযোগ চাই। এটা আমাদের চরম গাফিলতির প্রমাণ।

করোনার প্রথম ঢেউ শেষে আমরা যারা বেঁচে আছি, এটা আসলে আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে একটি অফুরন্ত সুযোগ। হয়ত এবার আমাদের কারো পালা। হতে পারে কিছু সময় পরই আমাদের কারো সামনে আজরাইল ফেরেশতা মৃত্যুর পরওয়ানা নিয়ে এসে দাঁড়াবেন। তখন কোরআনে বলা পূর্ববর্তী পাপীদের মতই আমরা হয়তো বলব, হে আল্লাহ! আমাদের আরেকটু সুযোগ দিন।

তখন তো আল্লাহ বলবেন, বান্দা! তোমাকে কত সুযোগ দিয়েছি ভেবে দেখো। করোনার প্রথম ঢেউয়ে তোমার প্রতিবেশী, সহকর্মী, আপনজন দুনিয়ার ভোগবিলাস ছেড়ে মৃত্যুর গাড়িতে চড়ে পরপারে পাড়ি জমিয়েছে। আর তুমি দিব্যি পাপের সাগরে ডুবে ছিলে। এখন তুমি সুযোগ চাইছো। এবারও যদি তোমাকে সুযোগ দেওয়া হয় তাহলেও তুমি সে পাপের রাজ্যেই হারিয়ে যাবে। তোমাকে আর কোনো সুযোগ দেওয়া হবে না।

পাঠক! আমাদের অন্তর কত কঠিন এবং আল্লাহবিমুখ গাফেল হয়ে গেছে চিন্তা করলেও আঁতকে উঠতে হয়। করোনা সংক্রমণের ঊর্ধ্বমুখী এমন নাজুক সমেয়ও আমাদের ব্যবসায়ী ভাইয়েরা মাহে রমজান উপলক্ষ্যে দ্রব্যমূল্য গুদামজাত করে বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে রেখেছেন।

mozutdar

বাজারে কৃত্রিমসঙ্কট সৃষ্টিকারী নব্বই শতাংশ ব্যবসায়ী ভাই কিন্তু নামাজি, দাড়িওয়ালা, টুপিওয়ালা। দ্বীনদার এসব মানুষগুলো দুইটাকা বেশি লাভের আশায় আপামর জনসাধরণকে কষ্ট দিচ্ছে, রোজাদার মানুষকে বিপদে ফেলার কালো স্বপ্ন বুনছে, এসব যেন কোনোভাবেই বিশ্বাস হতে চায় না। কিন্তু বাস্তব চিত্র এমনটিই।

হে আমার ব্যবসায়ী ভাই। আমাদের কষ্ট দিয়ে কত টাকাই বা মুনাফা করবেন। আপনি কি দেখেননি, কোটি কোটি টাকার মালিক বিনা চিকিৎসায় মারা গেছেন। যখন করোনা ফুসফুসে আক্রান্ত করার কারণে কোটিপতি বাবার সামনে সন্তান শ্বাস নিতে না পারার যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে, ওই বাবার অনুভূতি কল্পনা করুন, অঢেল টাকার বিনিময়েও আদরের সন্তানকে এক মুহূর্ত বেশি শ্বাস নেওয়ার ব্যবস্থা করা গেলো না! যে টাকা আপনাকে, আপনার সন্তান-প্রিয়জনকে বাঁচাতে পারে না, রোজাদার-দ্বীনদার সাধারণ মানুষকে কষ্ট দিয়ে সে টাকার পাহাড় গড়ে তুলছেন, আপনার জন্য সত্যিই আফসোস হয়।

যারা মজুতদারি করে তাদের সম্পর্কে রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘পৃথিবীতে সবচেয়ে নিকৃষ্ট অভিশপ্ত হলো সে, যে দাম বাড়ানোর উদ্দেশ্যে নিত্যপণ্যের কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি করে।’ আরেক হাদিসে রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘মজুতদার অভিশপ্ত, আর যে বাজার সচল রাখে সে রহমতপ্রাপ্ত।’

রাসুল (সা.) আরো বলেছেন, ‘কেউ যদি ৪০ দিন খাদ্যদ্রব্য মজুদ করে রাখে আর এর বিনিমিয় একদিনও মানুষ খাদ্য কষ্টে ভুগে, তাহলে মজুতদার তার সব সম্পত্তি যদি আল্লাহর রাস্তায় দানও করে দেয়, কিংবা এর সমপরিমাণ আরো সম্পদও যদি মজুতদার দান করে, তবুও ওই একদিন মানুষকে কষ্ট দেওয়ার গোনাহর কাফফারা আদায় হবে না।’ মজুতদারিদের ভয়াবহতা সম্পর্কে মেশকাত শরিফে এমন আরো কিছু হাদিস পাওয়া যায়।

বিশ্বের অন্যান্য দেশে রমজান এলে রোজাদারদের সম্মানে ব্যবসায়ীরা বিশাল মূল্য ছাড় দেন। এমনকি অমুসলিম দেশেও রোজাদারদের সম্মানে বিনামূল্যে খাবার বিতরণ করা হয়। পৃথিবীর ইতিহাসে বাংলাদেশের চিত্রই ভিন্ন। রোজা আসার কয়েক মাস আগে থেকেই আমাদের ব্যবসায়ী ভাইয়েরা মজুতদারি শুরু করেন। রোজায় মানুষকে কষ্ট দিয়ে তৃপ্তির হাসি হাসেন। যখন রোজা চলে যায় তখন মন খারাপ করেন এবং আবার আগামী রোজার জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন।

হে আমার ব্যবসায়ী ভাই! মানুষকে কষ্ট দিয়ে, রোজাদারদের ফাঁদে ফেলে আপনি যে টাকা উপার্জন করছেন, সে টাকার বিনিময়ে কিন্তু এক মুহূর্তও বেশি বাঁচতে পারবেন না।

আশা করি, করোনার এই আজাব থেকে আমরা সবাই শিক্ষা নিতে পারব এবং নিজেদের শুধরিয়ে নেওয়ার সুযোগটি পুরোপুরি কাজে লাগাবো। হে আল্লাহ! আমাদের নেকজিন্দেগী যাপনের তাওফিক দিন। আমিন।

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর