আপনি পড়ছেন

২৬ মার্চ স্বাধীনতার ৫০ বছর উদযাপন করল বাংলাদেশ। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের সঙ্গে রক্তাক্ত বিচ্ছেদের পর কি ধরনের সমাপ্তিতে আসা যায়? তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান এখনো সেই হত্যাকাণ্ড নিয়ে শিউরে উঠে, যে ঘটনা ৩০ লাখ বাংলাদেশির প্রাণ কেড়ে নিয়েছিলো। বর্তমানে সেই দেশটি এখন শুরুর দিকের চরম দারিদ্রতা থেকে ঘুরে দাঁড়িয়েছে। উন্নয়নের দিক থেকে ইসলামাবাদের চেয়ে এখন ঢাকা এগিয়ে। অন্যদিকে পাকিস্তানে ইসলাম ধর্মের উদ্বেগজনক উত্থান এবং স্বাধীনতার ওপর মাত্রাতিরিক্ত নিয়ন্ত্রণ ও বারবার সামরিক পুনরুত্থানের কারণে সেখানে বেসামরিক সরকারের স্থিতিশীলতায় ব্যাঘাত ঘটেছে। আর ভারতের সঙ্গে সুবিধার কথা না বললেই নয়।

bangladesh flagস্বাধীনতার প্রতীক লাল সবুজের পতাকা হাতে দূরন্ত কিশোর

মার্চের শুরুতে, যখন প্রতিবেশী বার্মায় সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সেনাবাহিনী ক্ষমতায় আসার প্রতিবাদে জনবিক্ষোভ দ্বিতীয় মাসে প্রবেশ করে ,ঠিক তখন কয়েকশ কিলোমিটার পশ্চিমে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কোভিড-১৯ এর কারণে ভার্চুয়ালি ফ্রেন্ডশিপ ব্রিজ উদ্বোধনের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। দুই কিলোমিটার লম্বা এই সেতুর মাধ্যমে পশ্চিমবঙ্গ থেকে বাংলাদেশ এবং ত্রিপুরাকে (উত্তরপূর্ব ভারতের আট রাজ্যের একটি) সংযুক্ত করা হবে। এই প্রকল্পের পুরোটাই ভারতের অর্থায়নে সম্পন্ন হয়েছে। ৬ বছর আগে মোদি যখন ঢাকা এসেছিলেন তখনই প্রকল্পটি উদ্বোধন করা হয়। অন্যান্য পারস্পরিক সুবিধার মতো এ সেতুটির কল্যাণে চট্টগ্রামের সক্রিয় বন্দর শহরের সঙ্গে একটি সড়ক নেটওয়ার্ক চালুর মাধ্যমে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলও আংশিকভাবে খুলে যাবে।

১৯৭১ সালে বাংলাদেশিদের সাহায্য করতে ভারতীয় সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপে পাকিস্তানি সেনারা পরাজিত হয়। ১৬ ডিসেম্বর তারা ঢাকায় আত্মসমর্পণ করে, যা একটি নতুন স্বাধীন দেশের রাজধানীতে পরিণত হয়। যারসঙ্গে চার হাজার ৪১৩ কিলোমিটার স্থল সীমানার মধ্যে চার হাজার ১৪২ কিলোমিটারই ভাগাভাগি করে। ৫০ বছর আগে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের স্বাধীনতার জন্য সংগ্রামে সমর্থন জানিয়ে তাদের জন্য সীমান্ত খুলে দেয় ভারত। আজ আমরা একসঙ্গে একটি সমৃদ্ধ অঞ্চল গড়ে তুলেছি।

প্রতিবেশীই প্রথমে অথবা নিকট প্রতিবেশীকে আগে গুরুত্ব দেওয়া এই মর্মে ভারত এবং বাংলাদেশ তৎকালীন নেতৃত্ব থেকে বর্তমানের দুই প্রধান দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে আরো গভীর করে তুলেছে।

করোনার ভ্যাকসিন নিয়ে কূটনৈতিক সুবিধা পাওয়ার বিষয়টি দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো, আফগানিস্তান, ভুটান ও মালদ্বীপেও প্রয়োগ করা হয়েছে। এই আঞ্চলিক কৌশলগত অগ্রাধিকারের দিক থেকেই ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তাদের পূর্বাঞ্চলীয় প্রতিবেশীর স্বাধীনতার ৫০ বছর উদযাপন আয়োজনে নিজে উপস্থিত থেকে অংশ নিয়েছেন। একবছর আগে কোভিড-১৯ মহামারি শুরু হওয়ার পর এটিই নরেন্দ্র মোদির প্রথম বিদেশ সফর। ভারত ও বাংলাদেশের ঐতিহাসিক সম্পর্ককে আরো মজবুত করার জন্য এটি আরও একটি প্রতীক।

আসাম, পশ্চিমবঙ্গ, মেঘালয় এবং ত্রিপুরার মতো ভারতের মাটিতে থাকা বাংলাদেশের ছিটমহল এবং বাংলাদেশে ছড়িয়ে থাকা ভারতের ১১১টি ছিটমহল, যা ১৯৪৭ সালের বিভাজনে স্বাধীন ভারত ও পাকিস্তানের জন্ম এবং পরবর্তীতে ১৯৭১ সালে পূর্ব পাকিস্তানের স্বাধীন বাংলাদেশ হয়ে উঠার পর সৃষ্টি হয়েছিলো।

সাম্প্রতিক বছরগুলোয় নানারকম স্বেচ্ছা উদ্যেগের মাধ্যমে এক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য প্রচেষ্টা চালিয়েছে নয়াদিল্লি। এসব পদক্ষেপের মধ্যে ২০২০ সালের শেষের দিকে একটি পঞ্চম আন্তঃসীমান্তীয় রেল সংযোগ চালু। এ ছাড়াও আঞ্চলিক ছিটমহলগুলির সংবেদনশীল মামলাগুলো নিয়ে একটি সম্মিলিত মনোভাব তৈরি করেছে ভারত।

বিগত কয়েক দশকে বাংলাদেশ সফলতার যে পথ পাড়ি দিয়েছে সেজন্য পাকিস্তান ঈর্ষা করতেই পারে। পাকিস্তান যেখানে বারবার সামরিক অভ্যুত্থান এবং কয়েক দশক ধরে সামরিক একনায়কতন্ত্র চালানোর চেষ্টা করেছে, সেখানে বাংলাদেশের প্রশাসন তুলনামূলক নাগরিক ধারা বজায় রেখেছে। নিরাপত্তা ও আন্তঃরাষ্ট্রীয় দিক থেকে দেখলে ১৯৭১ সালে পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্গে বিচ্ছিন্ন হলেও ১৯৪৭ থেকে ১৯৯৯ সালের মধ্যে ভারতের সঙ্গে চারবার বিবাদে জড়িয়ে পড়েছে পাকিস্তান। অন্যদিকে বাংলাদেশকে ১৯৭১ সালের পর থেকে কোনো যুদ্ধের যন্ত্রণা ভোগ করতে হয়নি।

অর্থনৈতিক দিক থেকে দেখলে ২০২০ সালে বিশ্বের মধ্যে ৩৫তম অর্থনীতির দেশ হিসেবে জায়গা করে নিয়েছে বাংলাদেশ, যেখানে পাকিস্তানের অবস্থান ৪৩তম।

সর্বশেষ ২০২০ সালে ইউনাইটেড নেশনস ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রামের (ইউএনডিপি) প্রকাশিত এ বিষয়ক প্রতিবেদনে মানব উন্নয়ন সূচকে ১৮৯টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৩৩তম। আর এক্ষেত্রে পাকিস্তানের অবস্থান ১৫৪তম।

পাকিস্তানের একটি শীর্ষ দৈনিকের একজন প্রথমসারির কলামিস্ট দুই বছর আগে ‘কেন পাকিস্তানকে ছাড়িয়ে গেল বাংলাদেশ’ শিরোনামে একটি নিবন্ধ লিখেন। সেখানে তিনি তার মতামতের যুক্তি হিসেবে কিছু প্যারামিটার উল্লেখ করেন। যার মাধ্যমে দেখানো হয় গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ কীভাবে ইসলামি প্রজাতন্ত্রের পাকিস্তানের সঙ্গে এগিয়ে রয়েছে। এখানে মাথাপিছু আয়ের কথা উল্লেখ করা হয় (বাংলাদেশি নাগরিকদের মাথাপিছু আয় দুই হাজার ডলারের বেশি, বিপরীতে একজন পাকিস্তানি নাগরিকের এক হাজার ১৩০ ডলার)। প্রাথমিক শিক্ষাগ্রহণের হার বাংলাদেশে ৯৮ শতাংশ এবং পাকিস্তানে ৭২ শতাংশ। বাংলাদেশে গড় আয়ু ৭২ বছর আর পাকিস্তানে তা পাঁচ বছর কম। আর শিশুমৃত্যুর হারের দিক থেকে (বাংলাদেশে প্রতি হাজারে ২৫ জন, পাকিস্তানে যা দ্বিগুণেরও বেশি-হাজারে ৫৯জন)।

লেখক তার নিবন্ধে বিশেষভাবে নোট করেন, বাংলাদেশিরা চূড়ান্তভাবে ভোটারদের কাছে দায়বদ্ধ। রাজনীতিবিদরা অস্ত্র অথবা সামরিক স্থাপনায় ব্যয় না করে সাধারণ মানুষের জন্য ব্যয় করেন।

লেখক : সাংবাদিক

প্রিয় পাঠক, ভিন্নমতে প্রকাশিত লেখার বিষয়বস্তু, রচনারীতি ও ভাবনার দায় একান্ত লেখকের। এ বিষয়ে টোয়েন্টিফোর লাইভ নিউজপেপার কোনোভাবে দায়বদ্ধ নয়। ধন্যবাদ।

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর