আপনি পড়ছেন

ইসলাম একটি স্বতন্ত্র জীবনব্যবস্থা। আছে নিজস্ব রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি এবং রাষ্ট্রীয় নীতিমালা। দুঃখজনক হলেও সত্য, দীর্ঘ দুইশ বছর ভারতীয় উপমহাদেশের আলেমরা ইসলামের রাজনৈতিক কলাকৌশল সম্পর্কে খুব একটা ভাবার এবং প্রয়োগ করার সুযোগ পাননি। বিষয়টিকে সুসাহিত্যিক আবুল মনসুর আহমদ তার ভাষায় লিখেছেন, আমরা দুইশ বছর গোলামী করার কারণে ইসলামের বাদশাহি নীতিমালার চর্চা ভুলে গেছি।

dr. karzavi

ইসলামের রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির মডেল অবশ্যই হযরত মুহাম্মাদ (সা.)। বর্তমান বিশ্বের মুসলিম রাজনৈতিক সংগঠনগুলোও রাসুল (সা.) কে আদর্শ মেনেই রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। কৌশলগত কারণেই মুসলিম সংগঠনগুলোর নেতাদের কখনো মুশরিক, বিধর্মীদের সঙ্গে সন্ধি করতে হয়।

দুঃখজনক হলেও সত্য, যাদের মাঝে ইসলামি সমাজ বিনির্মাণ এবং রাষ্ট্রগঠনের নূন্যতম তাগিদও কাজ করে না, তারাই ইসলামি রাজনীতির সমালোচনা এবং অনর্থক ফতোয়াবাজি করে সমাজে ও রাষ্ট্রে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিতে বড় ভুমিকা পালন করেন।

মিশরীয় ইসলামি স্কলার এবং কাতার ইউনিভার্সিটির শরিয়া অনুষদের সাবেক ডিন ড. ইউসুফ আল কারজাভী ‘প্রায়োরিটিস অব দি ইসলামিক মুভমেন্ট ইন দি কামিং ফেস’ গ্রন্থে মুসলিম রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক কলাকৌশল সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেন। সেখানে তিনি একটি অধ্যায়ে ইসলামের বৃহত্তর স্বার্থে মুশরিক অথবা জালেম শাসকের সঙ্গে সন্ধি করার বিষয়ে চমৎকার যুক্তিসংগত কিছু পয়েন্ট তুলে ধরেন।

ইউসুফ আল কারজাভি বলেন, সুদানের ইসলামি আন্দোলনের নেতা ড. হাসান আল তুরাবি কৌশলগত কারণে সোস্যালিষ্ট ইউনিয়নে যোগ দেন। শুধু তাই নয়, তারা জালেম সরকারের সঙ্গে সন্ধি করে রাষ্ট্রীয় পদও লাভ করেন। এ সময় একদল আলেম তাদের তীব্র সমালোচনা করেন। পরবর্তীতে দেখা গেছে, হাসান তুরাবিরাই সুদানে শরিয়াহ আইন চালু করতে সক্ষম হন।

ড. কারজাভি বলেন, সিরিয়ার মুসলিম সংগঠনের কাউকে কাউকে অনৈসলামিক শক্তির সঙ্গে সন্ধি করার ফলে কট্টরপন্থী আলেমদের ফতোয়ার কবলে পড়তে হয়েছিলো। মূলত রাসুল (সা.) এর রাজনৈতিক প্রজ্ঞা সম্পর্কে গভীর জ্ঞান না থাকার কারণেই কট্টরপন্থীরা এ ধরনের ফতোয়াবাজী করেন।

রাসুল (সা.) এর রাজনৈতিক জীবনে দেখা যায় তিনি দ্বীনের স্বার্থে মুশরিক-অত্যাচারিতের সঙ্গে শান্তিচুক্তি করতেন। যেমন হুদায়বিয়ার সন্ধি। এমনও দেখা গেছে, যখন দুটি মুশরিকশক্তি যুদ্ধে লিপ্ত হতো রাসুল (সা.) একটি মুশরিক শক্তির পক্ষ নিতেন। যেমন খুজায়াহ গোত্রের সঙ্গে রাসুল (সা.) এর মিত্রতা।

ড. কারজাভি বলেন, অমুসলিম শাসক বা জালেম শাসকের সঙ্গে অংশ নেওয়া কিংবা তার সঙ্গে জোট বাঁধার বহু উদাহরণ স্বয়ং রাসুল (সা.) এবং সাহাবিদের জীবনে রয়েছে। এক্ষেত্রে তিনি ইবনে তাইমিয়ার উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, শায়েখ ইবনে তাইমিয়া (রহ.) এর সমর্থনে বিশাল গ্রন্থ লিখেছেন।

শায়েখ ইবনে তাইমিয়া বিস্তর গবেষণা করে ফতোয়া দিয়েছেন, কোনো অমুসলিম কিংবা জালেম সরকারের অধীনে থেকে যদি অল্প কিছু খারাপ কাজ করেও বেশি ভালো কাজ করা যায় কিংবা বেশি খারাপ কাজ থেকে বিরত থাকা যায় তাহলে এমন সরকারের সঙ্গে জোট করা কিংবা ওই সরকারের অধীনে যেকোনো ধরনের পদ-পদবি গ্রহণ করা সম্পূর্ণ জায়েজ।

বিস্তারিত জানতে- ড. ইউসুফ আল কারজাভি, প্রায়োরিটিস অব দি ইসলামিক মুভমেন্ট ইন দি কামিং ফেস, ৩৮-৪১ পৃষ্ঠা।

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর