আপনি পড়ছেন

মিয়ানমারে সেনা অভ্যুত্থানবিরোধী বিক্ষোভে ইতোমধ্যে ৫ শতাধিক মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে। জান্তা প্রশাসন দেশটির নোবেল বিজয়ী নেত্রী অং সাং সু চিসহ কয়েক হাজার বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করেছে। এরপরও বন্দুকের গুলি উপেক্ষা করে প্রত্যেক দিন রাজপথে জড়ো হচ্ছেন নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ। বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ মিয়ানমারে রাজনীতি থেকে শুরু করে সব বিষয়ে অতীতে ধর্মীয় গোষ্ঠীটি বড় ধরনের ভূমিকা রেখে এসেছে।

myanmar budhist monks protestমিয়ানমারের সেনা অভ্যুত্থানের বিষয়ে বিভক্ত দেশটির বৌদ্ধ ভিক্ষরা

বলা বাহুল্য রাখাইন থেকে মুসলিম সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাদের বিড়াতন ও 'জাতিগত নিধনে' বিশেষ ভূমিকা রয়েছে বৌদ্ধ নেতাদের। অহিংস মর্মবাণীকে পায়ে দলিয়ে তাদের করা নৃশংসতা বিখ্যাত টাইম ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদে জায়গা করে নিয়েছে।

গত ১ ফেব্রুয়ারি দেশটির সেনাবাহিনী সু চির দলকে হটিয়ে ক্ষমতার দখল নেয়। এরপর থেকে বিক্ষোভ ঘিরে মিয়ানমারে বৌদ্ধ ভিক্ষুদের মধ্যে নজিরবিহীন বিভক্তি দেখা দিয়েছে। একাংশ সরাসরি জনতার কাতারে দাঁড়িয়ে বিক্ষোভে অংশ নিচ্ছেন। তারা বলছেন, সামরিক একনায়কতন্ত্রে কখনো দেশের উন্নয়ন হয় না। বিপরীতে ভিক্ষুদের আরেকাংশ জান্তা সরকারকে সমর্থন দিচ্ছে এবং তাদের পক্ষে রাজপথে অবস্থান নিয়েছে।

এই অংশের দাবি, সেনাবাহিনী দেশের সংবিধান সমুন্নত রাখছে। এদের মধ্যে এমন ভিক্ষুও রয়েছেন, যাদের লাখ লাখ অনুসারী রয়েছে এবং অতীতে রাজনীতির দিক বদলে ভূমিকা রেখেছেন।

নজিরবিহীন বিভক্তির বিষয়ে বিবিসি দুই মেরুর এমন দুজন ভিক্ষুর সঙ্গে আলাপ করেছেন। ইউ পার মাক খ এবং ইউ সান্দর থিরি তুলে ধরেছেন, রক্তাক্ত সংঘাত, বিভক্তির কারণগুলো এবং কীভাবে মিয়ারমার এ পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পেতে পারে।

myanmar protest army warnsমিয়ানমারে সেনা অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে বিক্ষোভকারীর দেহে দেশটির নেত্রী সু চির ছবি, পাশে অভ্যুত্থানের নায়ক সেনাপ্রধান মিন অং হ্লাইং

ইউ সান্দর থিরিকে মিয়ানমারে ভিক্ষুদের পুরোহিত বলা হয়। আর ইউ পার মাক খ মাগওয়ে আশ্রমের প্রধান হিসেবে আছেন। সেনা অভ্যুত্থানের বিষয়ে সান্দর জানান, সেনাপ্রধান জেনারেল মিন অং হ্লাইং বহুবার প্রেসিডেন্ট এবং স্টেট কাউন্সেলরকে নির্বাচন কমিশন যে ভোটগ্রহণ নিয়ে সমস্যা করেছে, তা সমাধানে আহ্বান জানিয়েছেন। কিন্তু তারা আহ্বান অস্বীকার করে নতুন একটি সরকার গড়ার পথের পরিস্থিতিতে দেশকে ঠেলে দিয়েছেন।

সেনা অভ্যুত্থানের বিরোধিতা করে পার মাক বলেছেন, ক্ষমতা দখলের পেছনে সেনাবাহিনীর অনেক অর্থনৈতিক স্বার্থ জড়িত। এসব স্বার্থ সুরক্ষা করার জন্যই ক্ষমতা তাদের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। আর ক্ষমতা দখলের পথ তৈরি করতেই ভোটের অনিয়মকে জাহির করেছে। বাস্তরে ভোট নিয়ে কোনো অনিয়ম হয়নি, তারা প্রমাণও দেখাতে পারেনি। ফলে সেনাবাহিনীর অবস্থানকে সমর্থনের কোনো সুযোগ নেই।

বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলি-গ্রেপ্তার নির্যাতনের বিষয়ে সান্দর বলেন, 'সেনাবাহিনী ডিক্রি জারি করে তা জনগণকেও জানিয়েছে। কিন্তু বিক্ষোভকারীরা কী করছে? তারা সড়কে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেছে, নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর ইট-পাথর এমনকি গুলিও করছে। এমন পরিস্থিতিতে কী করতে পারে নিরাপত্তা বাহিনী?'

তিনি আরও বলেন, 'সেনাবাহিনী তো এক বছরের মধ্যে বহুদলীয় গণতান্ত্রিক নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এ সময়ের মধ্যে তারা বিজয়ী দলের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করবে। সুতরাং আমরা বর্তমান অবস্থাকে সেনা অভ্যুত্থান বলব না; পরিস্থিতি বিবেচনায় তাদের আসতে হয়েছে এবং আমরা তা সমর্থন করেছি।'

এ বিষয়ে পার মাক বলেন, 'সামরিক প্রশাসন গণহারে বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করছে, গুলি করে মারছে, রাস্তায় দেখামাত্র পিটিয়ে তাড়িয়ে দিচ্ছে। সব মিলিয়ে ভয়ানক পরিস্থিতি তৈরি করেছে। সেনাবাহিনী কখনো গণতান্ত্রিক সরকারের মতো জনগণের উন্নয়নে কাজ করে না। এ কারণে তারা জনগণকে বোকা বানানোর চেষ্টা করে।'

বর্তমান সংকট উত্তরণে সান্দর সেনাবাহিনী যে এক বছর অপেক্ষার কথা বলেছে, তা মেনে নেওয়ার পরামর্শ দেন। এরপর আশা করছেন, বিষয়টি নিয়ে আর কোনো প্রশ্ন থাকবে না। তবে পার মাক বলেন, জনগণকে সামরিক একনায়কতন্ত্রের বিরুদ্ধে লড়াইটা জারি রাখতে হবে। প্রয়োজনে প্রতিরোধের নানা পন্থা বের করতে হবে। তাহলেই জনগণ তাদের লক্ষে পৌঁছতে পারবে, যেমনটি তারা চাইছে।

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর

Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.

Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.