আপনি পড়ছেন

মুমিনের শুষ্ক আত্মায় প্রভুর রহমতের বারি বর্ষণ শুরু হয়েছে পশ্চিম আকাশে মাহে রমজানের চাঁদ উঠার সঙ্গে সঙ্গেই। রহমতের দশ দিন শেষে ক্ষমার নদীতে ভেলা ভাসায় মুমিন বান্দা। এরপর নাজাতের বন্দরে পৌঁছে জান্নাতি মেহমান হয়ে মাহে রমজানকে বিদায় জানানোর পালা। এভাবেই মুমিনের জীবনে সৌভাগ্যের জিয়ন কাঠি ছুঁয়ে যায় মাহে রমজান।

awesome islamic wallpaper hd

হাদিস শরিফে রাসুল (সা.) বলেছেন, যখন পশ্চিম আকাশে মাহে রমজানের বাঁকা চাঁদ হাসে, তখন আকাশের যত সৌভাগ্য ও সমৃদ্ধির দরজা আছে সবগুলো আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে খুলে দেওয়া হয়। অন্য বর্ণনায় এসেছে, অনাবিল আনন্দময় জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হয়। পাশাপাশি চির কষ্টের আবাস জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়। এখানেই শেষ নয়, মানুষ যেন সব ধরনের শয়তানি ওয়াসওয়াসা থেকে বেঁচে থাকতে পারে এ জন্য শয়তানকে শেকলে বেঁধে ফেলা হয়। এ হলো মাহে রমজানের অনন্য মহাত্ম্য। বুখারি, হাদিস নম্বর ১৮০০।

মুহাদ্দিসগণ বলেন, হাদিসে বলা আকাশের দরজা খুলে দেওয়ার অর্থ হল, বান্দার ওপর অনবরত রহম বর্ষিত হতে থাকে। বান্দার আমলনামা সরাসরি আল্লাহর কাছে চলে যায় এবং বান্দা যে দোয়াই করুক না কেনো তা আরশে আজিমে পৌঁছে যায়।

আর জান্নাতের দরজা খুলে দেওয়ার অর্থ হল, অনবরত রহমত বর্ষণ হওয়ার ফলে বান্দা বেশি বেশি নেক আমলের সৌভাগ্য লাভ করে এবং জান্নাতের চাবি তার হাতের মুঠোয় চলে আসে।

একইভাবে জাহান্নামের দরজা বন্ধ করে দেওয়ার অর্থ হল, রোজাদার নেক আমল করতে করতে এমন স্তরে পৌঁছে যায় যে, তার গোনাহগুলো ক্ষমা করে দেওয়া হয় এবং সে জাহান্নাম থেকে মুক্তিপ্রাপ্তদের দলে অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়। ফালাসাফায়ে সিয়াম।

শয়তানকে বন্দি রাখার ব্যাপারে যুগশ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিস ইবনে হাজার আসকালানি (রহ.) লিখেছেন, ‘ইমাম ঈসা (রহ.) বলেন, এ মাসে কোরআন নাজিল হলে শয়তান আসমানে যাওয়া আসা এবং ফেরেশতাদের গোপন কথাবার্তা শোনা থেকে চিরতরে বঞ্চিত হয়।

ফলে কোরআন নাজিলের মাস হিসেবে শয়তানকে বন্দি করে মনে করিয়ে দেওয়া হয়, এ মাসেই তোমার ক্ষমতা খর্ব করা হয়েছে এবং মানব জাতির হেদায়মতয় গ্রন্থ কোরআন নাজিল করা হয়েছে।’ ফাতহুল বারি।

ভারতবর্ষের খ্যাতনামা মুহাদ্দিস শাহ ওয়ালি উল্লাহ দেহলভি (রহ.) বলেন, মাহে রমজানে শয়তানকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করার পরও মানুষ পাপ কাজে লিপ্ত হওয়ার দুটো কারণ হতে পারে। প্রথমত, শুধু শয়তানই মানুষকে পাপ কাজে প্ররোচণা করে না, নফসও মানুষকে গোনাহের দিকে টেনে নেয়।

তাছাড়া এ হাদিসের একটি অর্থ এরকমও হতে পারে, বড় শয়তান অর্থাৎ ইবলিসকে আটকে রাখা হয় কিন্তু তার সৈন্যরা আগের মতই মুক্ত থাকে। ফলে মানুষ শয়তানের ওয়াসওয়াসায় পড়ে যায়। হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগাহ।

মুহাদ্দিসগণ আরেকটি অর্থও করেছেন। শয়তানকে শৃঙ্খলাবন্ধ করার অর্থ হলো, রমজান মাসে ইবলিসকে দ্বীনি পরিবেশ এবং খাঁটি মুমিন বান্দাদের কাছে ঘেঁষতে দেয়া হয় না। ফলে দেখা যায়, পাপাচার সংঘটিত হয় যেসব স্থানে সেখানে ঠিকই শয়তানের যাতায়াত থাকে।

এ কারণেই দেখা যায়, মাহে রমজানে যেসব স্থানে দ্বীনি পরিবেশ বিরাজ করে ওই সব স্থানে অশ্লীলতা, পাপাচার তো দূরের কথা প্রকাশ্যে খাওয়া-দাওয়া করতেও মানুষ ইতস্তত বোধ করে। একজন মুমিন তো অবশ্যই একজন বেদ্বীন মানুষও মাহে রমজানের পবিত্রতা রক্ষার্থে দ্বীনি পরিবেশ এবং দ্বীনি সমাজে অসামজিক ও গোনাহর কাজ থেকে বিরত থাকেন। এটাই হাদিসে বলা শয়তানকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করার বাস্তব চিত্রের একটি। ফালাসাফায়ে সিয়াম।

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর