আপনি পড়ছেন

ইবাদতের বসন্তকাল মাহে রমজান। এ মাসে রাসুল (সা.) নিজে ইবাদতের সাগরে ডুব দিতেন এবং পরিবার ও সাহাবিদের বেশি বেশি ইবাদত করতে উৎসাহ দিতেন। এ মাসে রাসুল (সা.) এর ইবাদত সম্পর্কে বেশ কিছু বই লেখা হয়েছে।

free arabian nights vector illustration

হাদিসের কিতাবেও সিয়াম অধ্যায়ে রাসুল (সা.) এর রমজানের ইবাদত সম্পর্কে খুঁটিনাটি বিষয়ে বিস্তারিত উল্লেখ রয়েছে। তবে মোটা দাগে বলতে গেলে মাহে রমজানে রাসুল (সা.) ছয় ধরনের আমল করতেন। আসুন সংক্ষেপে সে আমলগুলো সম্পর্কে জেনে নিই।

১. রোজা রাখা

মাহে রমজানের সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ আমল হলো রোজা রাখা। রাসুল (সা.) সেহরি খেয়ে রোজা রাখতেন। দেরি করে সেহরি খাওয়াকে তিনি উম্মতের জন্য কল্যাণকর এবংন দ্রুত ইফতার করাকে সৌভাগ্যের চিহ্ন বলেছেন। রাসুল (সা.) এর সেহরি ও ইফতারে কোনো জাকজমক ছিল না। খুব সাদামাটা খাবারের আয়োজনের মাধ্যমে কিভাবে সেহরি ও ইফতার সম্পন্ন করতে হয়, তিনি তা উম্মতকে শিখিয়েছেন। খাওয়া-দাওয়ার ব্যাপারে সংযমী হওয়া রোজার উদ্দেশ্য পূরণ তথা মুত্তাকি হওয়ার জন্য আবশ্যক।

২. রাতে দীর্ঘ সময় নামাজে দাঁড়িয়ে থাকা

রোজার পরই রাসুল (সা.) যে আমলটির ব্যাপারে সবচেয়ে যত্মশীল ছিলেন তা হল, রাতে দীর্ঘ সময় সালাতে দাঁড়িয়ে থাকা। রাসুলের (সা.) ওপর তাহাজ্জুদের নামাজ ফরজ ছিলো। রমজান মাসে তিনি রাতের নামাজের ব্যাপারে আরো বেশি যত্মশীল ছিলেন।

বিশুদ্ধ হাদিস থেকে জানা যায়, রাসুল (সা.) টানা তিন দিন ২০ রাকাত করে তারাবির নামাজ আদায় করেছেন। পরবর্তীতে সাহাবিদের অতিরিক্ত আগ্রহ এবং উম্মতের ওপর ফরজ হয়ে যাওয়ার ভয়ে তিনি এ নামাজ জামাতে আদায় করা থেকে বিরত থাকেন। উম্মতকে উৎসাহ দিয়ে রাসুল (সা.) বলেছেন, রমজানের রোজা এবং সালাতুল তারাবির বিনিময়ে বান্দার পূর্ববর্তী জীবনের গোনাহ মাফ করে দেওয়া হয়।

৩. বেশি বেশি কোরআন তেলাওয়াত

মাহে রমজানেই পবিত্র কোরআন নাজিল হয় এবং রাসুল (সা.) এ মাসেই নবুয়তের নূর লাভ করেন। ফলে রমজান মাসে রাসুল (সা.) বেশি বেশি কোরআন তেলাওয়াত করতেন। প্রতি বছর যতটুকু কোরআন নাজিল হত রাসুল (সা.) জিবরাইল (আ.)  তা শোনাতেন এবং জিবরাইলও (আ.) আবার রাসুল (সা.)কে ততটুকু তেলাওয়াত করে শোনাতেন।

৪. তাহাজ্জুদের নামাজ

বছরের প্রতি রাতই রাসুল (সা.) যত্নের সঙ্গে সালাতুত তাহাজ্জুদ আদায় করতেন। তবে রমজান এলে সে যত্নে যেন রত্ম খোঁজার মত মনোযোগী হতেন। দীর্ঘ সময় তাহাজ্জুদ আদায়ের কারণে রাসুল (সা.) এর পবিত্র পা মোবারক ফুলে যেত। বছরের অন্যান্য সময় রাসুল (সা.) স্ত্রীদের তাহাজ্জুদ নামাজের ব্যাপারে জোর না দিলেও রমজানে বেশ আদরের সঙ্গে ডাকাডাকি করতেন। কখনো কখনো উম্মাহাতুল মুমিনিনদের ঘুম ভাঙানোর জন্য মুখে পানিও ছিটিয়ে দিতেন রাসুল (সা.)।

৫. ইতিকাফ

মাহে রমজানের শেষ দশকে ইতিকাফ করা রাসুল (সা.) এর নিয়মিত সুন্নাত ছিল। রাসুল (সা.) এর ওফাতের পর তার পবিত্র স্ত্রীরা এ সুন্নাত জারি রেখেছিলেন। আম্মাজান আয়শা সিদ্দিকার (রা.) রেওয়াত থেকে জানা যায়, রাসুল (সা.) প্রতি রমজানের শেষ দশ দিন ইতিকাফ করতেন।

কিন্তু মৃত্যুর আগের বছর তিনি ইতিকাফ করতে করতে পারেননি। তবে মৃত্যুর বছর তিনি আগের বছরের দশ দিনসহ মোট বিশ দিন ইতিকাফ করেছিলেন। ইতিকাফের মূল উদ্দেশ্য হলো লাইলাতুল কদর তালাশ করা। যেহেতু এ সৌভাগ্যময় রজনী নির্দিষ্ট নয়, তাই রমজানের শেষ দশকের ইতিকাফের মাধ্যমে এ রাত ভাগ্যে জুটবে বলা হাদিস শরিফে দৃঢ়তার সঙ্গে বলা হয়েছে।

৬. বেশি বেশি দান-সদকা করা

মাহে রমজানে রাসুল (সা.) অত্যাধিক পরিমানে দান-খয়রাত করতেন। বুখারি হাদিস থেকে জানা যায়, রাসুল (সা.) প্রবাহিত বাতাসের মত এ মাসে দান করতেন। অর্থাৎ বাতাস যেমন সবসময় প্রবাহিত হয়, কখনো বন্ধ থাকে না, তেমনি এ মাসেও রাসুল (সা.) এর দানের হাত সবসময় সচল রাখতেন, কখনো গুটিয়ে নিতেন না।

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর