মেরকেলের মুকুট দখলে লড়াই তুঙ্গে

জার্মানির নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে আসছে, বাড়ছে লড়াই। ক্ষমতাসীন জোটে বর্তমান চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মেরকেলের স্থান দখল নিয়ে রীতিমতো যুদ্ধ শুরু হয়েছে। রক্ষণশীল দুই নেতার মধ্যকার ‘জঘন্য’ লড়াইয়ে সিডিইউ-সিএসইউ জোট সংকটে পড়েছে বলে খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা এএফপি।

মেরকেলের মুকুট দখলে লড়াই তুঙ্গে

মেরকেলের দল ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্রেটিক লিগের (সিডিইউ) প্রধান আরমিন ল্যাশেট এবং তাদের জোটের শরিক বেভেরিয়া সিস্টার পার্টির (সিএসইউ) নেতা মার্কোস সোয়েডার সেপ্টেম্বরের নির্বাচনে চ্যান্সেলর পদে জোট থেকে কে নেতৃত্ব দিবেন, তা নিয়ে গত সপ্তাহে বিতর্কে জড়িয়েছেন।

এ দুই নেতা চলতি সপ্তাহের মধ্যে এ বিষয়ে একটি চুক্তি করতে চান। তবে দলীয় সূত্র বলছে, রবিবার (১৮ এপ্রিল) পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো চুক্তি হয়নি। তবে উভয় দলের শীর্ষ দুই নেতা কঠোর গোপনীয়তার মধ্যে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন।

মেরকেলের পূর্বসূরি হিসেবে ল্যাশেটই চ্যান্সেলর পদে সাধারণ পছন্দ বলে মনে করা হচ্ছে। কিন্তু জার্মানির করোনা মহামারি ব্যবস্থাপনা নিয়ে সিডিইউর ব্যর্থতা সোয়েডারকে জনপ্রিয় করে তুলেছে এবং তিনি ল্যাশেটকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছেন।

গত রবিবার (১৮ এপ্রিল) সোয়েডার নিজেকে চ্যান্সেলর পদে প্রার্থী ঘোষণা করেন। একই সাথে তিনি হুমকি দেন, এ বিষয়ে দ্রুত সমঝোতা না হলে সিডিইউর ল্যাশেট সোয়েডারকেই তার প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে দেখতে পাবে। একই দিন সিডিইউর নেতারা ল্যাশেটকে সমর্থন দিলেও সোয়েডার তাতে সমর্থন দেননি। উল্টো তিনি অভিযোগ করেন, জোট জনপ্রিয়তার নিরিখে প্রার্থী চূড়ান্ত করতে ব্যর্থ হয়েছে।

জার্মানির গ্রিন পার্টি চ্যান্সেলর পদে অ্যানেলা বায়েরবকসকে তাদের প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করেছে

এআরডির সাম্প্রতিক জরিপে দেখা গেছে, জার্মানির ৪৪ শতাংশ মানুষ জোট থেকে চ্যান্সেলর পদে সোয়েডারকে সমর্থন করছেন। বিপরীতে মাত্র ১৫ শতাংশ মানুষের সমর্থন রয়েছে ল্যাশেটের পক্ষে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, মেরকেলের নেতৃত্ব সিডিইউ-সিএসইউ দীর্ঘ ১৬ বছর ক্ষমতায় রয়েছে। এ সময়ে মেরকেল তার ক্যারিশমেটিক নেতৃত্বর মাধ্যমে জোট ও দেশের মর্যাদা সমুন্নত রাখতে সমর্থ হয়েছেন। কিন্তু করোনা মহামারি তাকে মাথা নিচু করতে বাধ্য করছে। কারণ দেশটিতে বর্তমানে করোনার তৃতীয় ঢেউ চলছে এবং বিশ্বের তৃতীয় অর্থনীতির দেশটিতে ইতিমধ্যে ৮০ হাজারের বেশি মানুষকে করোনায় প্রাণ দিতে হয়েছে।

আরমিন ল্যাশেট ও মার্কোস সোয়েডার চ্যান্সেলর পদে জোটের প্রার্থী হতে লড়াই করছেন

এদিকে জার্মানির গ্রিন পার্টি চ্যান্সেলর পদে কো-লিডার অ্যানেলা বায়েরবকসকে তাদের প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করেছে। নিজের মনোনয়নের পর বায়েরবকস বলেন, ‘আমাদের দলের নতুন অধ্যায় শুরু হলো। দেশের জন্য আমাদের পদটিতে বিজয়ী হতে হবে।’ বায়েরবকস তরুণ বয়স থেকে পরিবেশবাদী আন্দোলনের সাথে জড়িত হয়ে পরিচিতি লাভ করেন। তার এ বিষয়টি সামনে এনে নির্বাচনী বৈতরণি পার হতে গ্রিন পার্টি।

বর্তমান চ্যান্সেলর মেরকেল হামবুর্গে জন্মগ্রহণ করেন। জন্মের পরপরই তার সমাজতান্ত্রিক ধারণায় বিশ্বাসী ধর্মযাজক পিতার সঙ্গে পশ্চিম থেকে পূর্ব জার্মানিতে চলে যান। ১৯৮৯ সালের শেষের দিকে পূর্ব জার্মানির সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থা ভেঙে বহুদলীয় গণতন্ত্রের সূচনা হচ্ছিল, সেখানে গণতান্ত্রিক জোটের মুখপাত্র হন মেরকেল।

১৯৯০ সালে পূর্ব জার্মানির সাধারণ নির্বাচনে বিজয়ী প্রধানমন্ত্রী লোথার ডে মেসায়ারের সরকারের মুখপাত্র হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। পদার্থবিদ্যার কৃতী ছাত্রী মেরকেল সেই বছরই হেলমুট কোলের হাত ধরে ঐক্যবদ্ধ জার্মানির রাজনীতিতে প্রবেশ করেন। কোলের মন্ত্রিসভায় ১৯৯১ ও ১৯৯৪ সালে মন্ত্রিত্ব পান। ১৯৯৮ সালে তিনি ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্রেটিক দলের সাধারণ সম্পাদক হন। ২০০০ সাল থেকে দলের সভানেত্রী। গত বছর দলের পদ ছেড়ে দেন তিনি।