আপনি পড়ছেন

যদি প্রশ্ন করা হয় আমাদের দৃষ্টিতে সবচেয়ে সম্মানিত ব্যক্তি কে? একেক জনের একেক উত্তর হবে। কেউ বলবে ক্ষমতাবান লোকেরা, কেউ জ্ঞানী লোকেরা, কেউ বা সম্পদশালীরা। আজকাল তথাকথিত সেলিব্রেটি মানুষেরা অনেকেরই দৃষ্টিতে সবচেয়ে বেশি সম্মানিত। খেলোয়াড়, গায়ক-গায়িকা, নায়ক-নায়িকা যারা- সমাজকে সবচেয়ে কম দেন এবং সবচেয়ে বেশি নেন, সমাজে তাদেরকেই সবচেয়ে বেশি সম্মানিত বিবেচনা করেন অনেকে। একজন শিক্ষকের চেয়ে একজন চরিত্রহীন নায়িকা সম্মানিত, ডাক্তারের চেয়ে খেলোয়াড় সম্মানিত, একজন বিজ্ঞানীর চেয়ে সম্মানিত একজন অশিক্ষিত গায়িকা- এটাই বর্তমান সমাজের ধারা।

ramadan taqwa productiveপ্রতীকী ছবি

মূল্যবোধের অধঃপতন যখন শুরু হয়ে যায় তখন সম্ভবত এমনই হয়। খেলোয়াড় বানানোর জন্য আমরা প্রতিষ্ঠান বানিয়েছি, কিন্তু ডাক্তার, নার্স বা বিজ্ঞানী বানানোর জন্য কার্যকর শিক্ষা ব্যবস্থা বা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলিনি। যার ফল এই করোনার সময় পাচ্ছি আমরা। আল্লাহ তা’য়ালা বুঝ দিন সবাইকে।

-প্রশ্ন, সম্মানিত কে? প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ যাকে সম্মানিত বলেন তিনিই সম্মানিত। আল্লাহ বলেন- ‘‘ইন্না আকরামাকুম ইনদাল্লাহি আতক্বাকুম।’’ অর্থাৎ “তোমাদের মধ্যে আল্লাহর কাছে সেই সর্বাধিক মর্যাদাবান ও সম্মানিত যে তোমাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি তাকওয়ার অধিকারী।” (সুরা হুজুরাত ৪৯: ১৩)।

-রসূল (সা.)বলেন- ‘‘আল্লাহ তা'আলা তোমাদের চেহারা, আকৃতি ও সম্পদ দেখেন না, বরং তিনি দেখেন তোমাদের অন্তর ও কাজকর্ম।’’ (মুসলিম ২৫৬৪)।

-অন্তর যার তাকওয়াবান সে-ই আল্লাহর নির্দেশিত কাজগুলি করতে পারে, সে-ই হেদায়েতের পথে চলতে পারে, সে-ই আল্লাহর নিকট মর্যাদাবান নারী বা পুরুষ।

-অন্তরে যার তাকওয়া আছে তিনিই সমাজের জন্য সবচেয়ে বেশি কল্যাণকামী। সমাজের সবচেয়ে বেশি উপকার তিনিই করতে সক্ষম। আমাদের এই উম্মতের শ্রেষ্ঠ মুত্তাকী ব্যক্তি হলেন আবু বকর সিদ্দীক (রা.)। একদিন নবী (সা.) তার সাহাবীদের জিজ্ঞাসা করলেন-

‘‘তোমাদের মধ্যে আজ কে সিয়াম পালনকারী?’’ আবু বকর (রা.) সাড়া দিয়ে বললেন, ‘‘আমি’’।

নবী (সা.) বললেন, ‘‘আজ তোমাদের মাঝে কে জানাজায় অংশ নিয়েছো?’’ আবু বকর (রা.) বললেন, ‘‘আমি’’।

নবী (সা.) বললেন, ‘‘তোমাদের মাঝে কে একজন মিসকীনকে আজ খাবার দিয়েছো?’’ আবু বকর (রা.) বললেন, ‘‘আমি’’।

নবী (সা.) বললেন, ‘‘তোমাদের মাঝে কে আজ কোনো অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে গিয়েছো?’’ আবু বকর (রা.) বললেন, ‘‘আমি’’।

নবী (সা.) বললেন, ‘‘যার মাঝে এ কাজগুলো একত্রিত হয়েছে সে জান্নাতে যাবে।’’ (মুসলিম ৬০৭৬)

উল্লেখ্য, রসুলুল্লাহ (সা.) এই প্রশ্ন করেন ফজরের নামাজের সময়। অর্থাৎ আবু বকর (রা.) ফজরের নামাজে যাওয়ার আগেই এই কাজগুলো সম্পাদন করেছেন।

আজ মানুষের productivity (উৎপাদনশীলতা) নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। সবচেয়ে প্রোডাক্টিভ ব্যক্তি হলেন একজন মুসলিম। কারণ তার মধ্যে রয়েছে তাকওয়ার গুণ। তিনি অবিরাম আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য নিজের দায়িত্ব পালনে এবং অন্যদের হক-অধিকার আদায়ে সচেষ্ট থাকেন। বস্তুতান্ত্রিকতা ও আমিত্বে আক্রান্ত আজকের তথাকথিত আধুনিক মানুষ নিজেকে নিয়েই ব্যস্ত। I– me-myself- এই আবর্তেই সে ঘুরপাক খায়। নিজের ও আত্মস্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠতে সে ব্যর্থ।

এর বিপরীতে অর্ধেক বিশ্বের শাসক একজন মুত্তাকী মানুষই বলে উঠতে পারে- ‘‘ফোরাতের তীরে একটা উট না খেয়ে থাকলেও আমি উমর আশঙ্কা করি আমাকে তার জন্য জবাবদিহি করতে হবে।’’ অর্ধেক দুনিয়া শাসন করেও যিনি সময় পান বিধবা ও এতীমদের ঘরে খানাপিনা পৌঁছে দেয়ার, গভীররাত্রে নিজে জনগণের খোঁজ নেয়ার ও সস্ত্রীক তাদের খেদমত করার।

জীবনের সর্বস্তরে এই রকম মুত্তাকী মানুষই আমাদের দরকার। ভেবে দেখুন, আপনারও কি তা-ই দরকার না?

এমন মানুষ তো আর আকাশ থেকে পড়বে না। আমাদের নিজেদেরই সে উচ্চতায় উন্নত করতে হবে- মুত্তাকী হতে হবে- আল্লাহর প্রিয় পাত্র হতে হবে- সর্বাধিক প্রোডাক্টিভ হতে হবে। পোশাকী মুত্তাকী নয়, প্রকৃত মুত্তাকী গড়ার জন্য উপযোগী সমাজ ও শিক্ষা ব্যবস্থা তৈরি করতে হবে। রমজান আমাদের সেই বার্তা ও সেই সুযোগ নিয়ে এসেছে। আসুন, সবাই আন্তরিকভাবে তা কাজে লাগাই।

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর