আপনি পড়ছেন

পবিত্র কোরআনুল কারিমে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘যারা নিজেদের কষ্টার্জিত সম্পদ আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করে আল্লাহর কাছে তাদের প্রাপ্য কত বেশি জানো? তাদের প্রাপ্যের উপমা হলো, একটি শীষ। যার থেকে সাতটি শীষ হলো, প্রতিটি শীষ থেকে আবার শত শষ্য উৎপণ্ণ হলো; কোনো কোনো শীষে আল্লাহ চাইলে আরো বেশি শস্য দান করেন।’

sadqa

‘আসলে আল্লাহ যাকে দেন হিসাব ছাড়া দেন। তিনি তো মহাজ্ঞানী।’ সূরা বাকারাহ, আয়াত ২৬১।

আল্লাহর পথে ব্যয়ের প্রাপ্তি বোঝাতে গিয়ে এরচেয়ে চমৎকার উদাহরণ আর কী হতে পারে! দাতাকে একজন কৃষকের সঙ্গে তুলনা করেছেন আল্লাহ তায়ালা। কৃষকরূপী এ দাতার কাছে আছে অনেক বীজ। টাকা ও সম্পদের বীজ। বান্দা যদি আল্লাহর মানব ভূমিতে একটি টাকা রোপন করে দিতে পারে, তাহলে এটা সাতশ থেকে আরো বেশি গুণ বেড়ে বান্দার কাছেই ফিরে আসবে।

কিন্তু বুদ্ধিভ্রষ্ট কৃষক যদি মনে করেন, বীজ রোপন করলে বীজ ফুরিয়ে যাবে, তাহলে ওই কৃষকের সংগ্রহে থাকা বীজ তো নষ্ট হবেই, তার ফসলি জমিও অনাবাদী থেকে যাবে। শুধু তাই নয়, সে কৃষকের কৃষি তো হুমকির মুখে পড়বেই, কৃষকের পরিবার ও নিজের জীবনও বিপণ্ণ হয়ে পড়বে। কৃষকের কাছে যে বীজ থাকে সুন্দর-সচ্ছলভাবে বাঁচতে হলে তা রোপন করতেই হবে।

পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলছেন, তোমার কাছে সম্পদরূপী যে বীজ আছে তা যদি আল্লার পথে ব্যয় না করে নিজের কাছে গচ্ছিত রাখো এবং ভাবো সেগুলো তোমাকে নিরাপত্তা দেবে- তোমাদের এ ধারণা পুরোপুরি ভুল। বরং আল্লাহর পথে সম্পদের একটি অংশ দান করলে তা সাতশ থেকে হাজার গুণ বেড়ে তোমার কাছেই ফিরে আসবে, ফিরিয়ে দেওয়া হবে। সুতরাং তুমি দান করো।

বান্দার মনে হয়ত সন্দেহ জাগতে পারে, সম্পদের একটি অংশ কীভাবে শত বা হাজার গুণ হয়ে বান্দার অ্যাকাউন্টে জমা হবে! এর উত্তরে আল্লাহ বলেন, বান্দা, আমি বেহিসেব এবং বিপুল পরিমানে দান করি। তোমার দান করা সম্পদের ক্ষুদ্রতম অংশকে কীভাবে হাজার গুণে ফিরিয়ে দেবো সেটা আমার দায়িত্ব, তোমার ভাবনা নয়।

আয়াতের শেষে আল্লাহ আরেকটা ইংগিত দিয়েছেন। আল্লাহ বলেন, ‘তিনি তো মহাজ্ঞানী।’ এ কথা বলার কারণ হল, বান্দার সম্পদ হাজার গুণ বৃদ্ধির ব্যাপারটি সবসময় জাগতিক হবে তা নয়। কখনো কখনো এমনভাবে সম্পদ বাড়বে দুনিয়ার মানুষ যা বুঝবে না, শুধু জ্ঞানীরাই বুঝবেন।

যেমন ইমাম গাজ্জালি এহইয়াউল উলুমুদ্দিনে একটি ঘটনা উল্লেখ করেছেন। নবী মুসা(আ.) এর সময়ের ঘটনা। এক লোক ছিল বড় বদকার ধরনের। তার মৃত্যুর সময় হয়ে গেলে আজরাইল (আ.) তার জান কবজ করতে আসেন। আল্লাহ বলেন, হে আজরাইল! এখন তুমি ফিরে যাও। এ লোকটি এ মাত্রই একজন অভাবীকে দান করেছে। বিনিময়ে আমি তার হায়াত আরো কিছু দিন বাড়িয়ে দিলাম। এই যে লোকটির হায়াত কিছু দিন বাড়ল তা কি জাগতিক কোনো সম্পদের মাধ্যমে সম্ভব হতো?

হাদিসে রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘আস-সাদকাতু তারুদ্দুল বালা। দান বিপদ দূর করে দেয়।’ একেকটি বিপদ এসে মানুষের লাখ লাখ টাকার ক্ষতি করে যায়, কখনো কখনো স্বাদের প্রাণটাই নিয়ে যায়। কিন্তু সদকা-খয়রাতের মাধ্যমে আল্লাহ বান্দার বিপদাপদ দূর করে দেন।

পবিত্র কোরঅনে সুরা বাকায়া আল্লাহ বলেছেন, ‘ইয়ামহাকুল্লাহুর রিবা ওয়া ইউরবিস সাদাকাত। সুদের সম্পদ আল্লাহ কমিয়ে দেন আর দান-খয়রাতের সম্পদ আল্লাহ বাড়িয়ে দেন।’ জাগতিক অর্থনীতির হিসেবে দেখা যায়, সুদের সম্পদ বাড়ে এবং খয়রাতে সম্পদ কমে। কিন্তু যিনি ‘মহাজ্ঞানী’ তিনি ঠিকই হিসেব করে সুদের সম্পদ কমিয়ে দেন এবং দানের সম্পদ বাড়িয়ে দেন।

আসুন! করোনার এ মহা সংকটে যার যার সামর্থ্যরে সর্বোচ্চটুকু দিয়ে আল্লাহর বান্দাদের পাশে দাঁড়াই। রাসুল (সা.) এর ঘোষণা অনুযায়ী প্রতিটি দানের বিনিময়ে আল্লাহ সাতশ গুণ সওয়াব বাড়িয়ে দেবেন। আল্লাহ আমাদের তাওয়িক দিন। আমিন।

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর