আপনি পড়ছেন

টানা তৃতীয়বারের মতো ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। করোনা মহামারির কারণে সীমিত পরিসরের অনুষ্ঠানে গতকাল বুধবার (৫ মে) শপথ নেন তিনি।

shekh hasina mamata

এই শপথ অনুষ্ঠানের আগেই মমতাকে চিঠি পাঠিয়ে অভিনন্দন জানান বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। শপথ নেয়ার পর আজ বৃহস্পতিবার তাকে অভিনন্দন জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এবার নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গের ক্ষমতা দখলে রীতিমতো মরিয়া ছিল ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কেন্দ্রীয় সরকারে থাকা বিজেপি। কিন্তু দলটিকে ‘গো হারা’ হারিয়ে নবান্নে-ই থেকে গেলেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা।

বিজেপি ও মোদির ‘দাদাগিরি’ নীতির ঘোর সমালোচক মমতাকে পাঠানো চিঠিতে ড. মোমেন লিখেছেন, আপনার প্রতি পশ্চিমবঙ্গের মানুষ যে সমর্থন জানিয়েছে, তা তাদের আস্থা ও বিশ্বাসের প্রতিফলন বলে আমরা মনে করি।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরো লেখেন, প্রায় অভিন্ন ইতিহাস ও সংস্কৃতি ভারত-বাংলাদেশের সম্পর্ককে অনেক শক্তিশালী করেছে। এটি হয়েছে মূলত পশ্চিমবাংলার কারণে। আশা করি, আপনার এই জয়ের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের সম্পর্ক আরো ঘনিষ্ঠ হবে। পশ্চিমবঙ্গের মানুষের সাথে তৈরি হবে বাংলাদেশের মানুষের আত্মার বন্ধন।

abdul momen foreign minister bd

চিঠির গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে দেখা হচ্ছে, ‘বাঙালির দীর্ঘ লালিত মূল্যবোধ, ধর্মীয় সম্প্রীতি ও ভ্রাতৃত্ববোধ ধারণ করায় আমরা আপনার প্রতি কৃতজ্ঞ। এ ক্ষেত্রে সারা জীবন অগ্রণী ভূমিকা রেখেছেন বঙ্গবন্ধু’।

করোনার টিকাসহ দ্বিপাক্ষিক নানা বিষয়ে মোদি সরকারের সঙ্গে সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের ‘কিছুটা দূরত্ব’ তৈরি হয়েছে বলে মনে করা হয়। এমন প্রেক্ষাপটে মোমেনের চিঠিকে বিজেপির নীতির বিরুদ্ধে ‘প্রচ্ছন্ন বার্তা’ হিসেবে দেখছেন ভারতীয় কূটনৈতিক ও রাজনৈতিকদের একাংশ।

কেননা, ধর্মীয় ও জাতিগত ‘বিভাজনের নীতি’ প্রাধান্য দেয়ার অভিযোগের মুখে থাকা বিজেপি নেতা নরেন্দ্র মোদি মাস দেড়েক আগে বাংলাদেশে এসেছিলেন। তিনি বাংলাদেশের সুবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠানে যোগ দেয়ার পাশাপাশি ওড়াকান্দিতে যান হিন্দু ধর্মীয় গুরুর মন্দিরে পূজা-অর্চনা করতে, যখন পশ্চিমবঙ্গে চলছিল বিধানসভার ভোট। এ বিষয়ে মমতাসহ তার দলের নেতারা ‘নির্বাচনী বিধি ভঙ্গের’ অভিযোগ আনেন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে।

অন্যদিকে, ভারতীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ প্রকাশ্য সভায় বলেছেন, রাজ্যের ক্ষমতা দখল করতে পারলে মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠকে চালু করা হবে নাগরিকত্ব সংশোধন আইন (সিএএ)। এটিসহ জাতীয় নাগরিকপঞ্জি (এনআরসি) তৈরি নিয়ে যথেষ্ট ‘আপত্তি’ আছে ঢাকারও। খোদ মমতাও এর ঘোর-বিরোধী

বিষয়টি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরাসরি ‘প্রশ্ন’ তুলেছেন, সেই বার্তাই মমতাকে পাঠানো পররাষ্ট্রমন্ত্রীর চিঠিতে স্পষ্টতই পরিলক্ষিত হচ্ছে- এমনটাই মনে করেন রাজনীতিক ও কূটনীতিকদের একাংশ।

hasina modi bhutan

এই চিঠি নিয়ে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বা মোদি সরকারের কোনো মন্ত্রী অথবা বিজেপি নেতারা এখন পর্যন্ত কোনো মন্তব্য করেননি। তবে ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় সাবেক হাইকমিশনার দেব মুখোপাধ্যায় বলছেন, এর মাধ্যমে দিল্লির ‘ঘৃণা ও বিভাজনের’ রাজনীতি সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেছে বাংলাদেশ।

তিনি আরো মনে করেন, বাংলাদেশ নিয়ে ভারতীয় নেতাদের অসংবেদী মন্তব্য এবং ভারতে সংখ্যালঘুদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণের বিরুদ্ধে মোক্ষম জবাব দিয়েছে ঢাকা। আবার বার্তাটিকে ‘কূটনৈতিক প্রটোকলের ক্ষেত্রে নিখুঁত’ বলে আখ্যায়িত করেছেন সাবেক কূটনীতিক পিনাকরঞ্জন চক্রবর্তী।

ঢাকার সঙ্গে কলকাতার সম্পর্ক সব সময়ই ‘বিশেষ ধরনের’ মন্তব্য করে তিনি বলেন, এনআরসি ও সিএএ নিয়ে যথেষ্ট চিন্তিত থাকলেও ধর্মনিরপেক্ষ মমতার জয়ে তা কিছুদিনের জন্য দূর করবে। সার্বিক বিবেচনায় এটিকে অনুধাবন করতে হবে বিজেপিকে।

তিস্তা ইস্যুতে বিরোধিতার পরেও মমতাকে পাঠানো ঢাকার চিঠিটি ‘প্রজ্ঞার উদাহরণ’ হিসেবে দেখছেন বাংলাদেশ বিষয়ক ভারতীয় পর্যবেক্ষক শ্রীরাধা দত্ত। পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি, মূল্যবোধ ও সংস্কৃতির ক্ষেত্রে বাংলাদেশের আত্মিক সম্পর্ক রয়েছে বলে মনে করেন তিনি। এ ছাড়া চিঠির মাধ্যমে ঢাকা আগামীতে অমীমাংসিত ইস্যুতে অগ্রগতির আশা বুনে রাখলো।

modi amit shah new

বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর অভিনন্দন বার্তার চিঠিতে তৃণমূল কংগ্রেস উৎসাহিত বলে জানিয়েছেন দলটি শীর্ষ নেতা ও লোকসভার সদস্য সৌগত রায়। তৃণমূলের রাজনীতি অসাম্প্রদায়িক এবং সাম্প্রদায়িকতা-বিরোধী লড়াইয়ে বাংলাদেশের সমর্থনে দলটি উদ্দীপ্ত বলে মন্তব্য করেন তিনি।

গত ২ মে ঘোষিত ফলাফলে পশ্চিমবঙ্গে ২৯২টি আসনের মধ্যে তৃণমূল জয়ী হয়েছে ২১৫টিতে। অন্যদিকে বিজেপি জয় পেয়েছে মাত্র ৭৫টি আসনে। দুটি আসনে ভোট স্থগিত রয়েছে। বাকিগুলো পেয়েছে অন্য দলগুলো।

প্রসঙ্গত, ১৯৭৭ সাল থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত একটানা পশ্চিমবঙ্গের ক্ষমতায় ছিল বামফ্রন্ট। ২০১১ সালের নির্বাচনে বামদের ৩৪ বছরের শাসনের অবসান ঘটায় তৃণমূল-কংগ্রেস জোট। প্রথমবারের মতো মুখ্যমন্ত্রী মনোনীত হন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

প্রিয় পাঠক, ভিন্নমতে প্রকাশিত লেখার বিষয়বস্তু, রচনারীতি ও ভাবনার দায় একান্ত লেখকের। এ বিষয়ে টোয়েন্টিফোর লাইভ নিউজপেপার কোনোভাবে দায়বদ্ধ নয়। ধন্যবাদ।

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর